ব্রিটেনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে এ লেভেল পরিক্ষায় সাফল্যে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০১৬, ১:০৩ পূর্বাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ এ লেভেল পরীক্ষায় সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারার শিক্ষার্থীরা। আগের বছরের তুলনায় পাশের হার এবং সর্বোচ্চ গ্রেড প্রাপ্তি দুটিই বেড়েছে এখানকার স্কুলগুলোতে। প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি পাস রেইট নিয়ে এবারও অসাধারণ ফলাফল করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত বৃহস্পতিবার ব্রিটেনে এ লেভেল এবং ইয়ার-ওয়ান বা এএস- পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। জাতীয় ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার সর্বোচ্চ গ্রেড ‘এ’ এবং ‘এ স্টার’ প্রাপ্তির হার ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় শূণ্য দশমিক ১ শতাংশ কম। আর গড় পাশের হার ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ যা আগের বছরের সমান। এবার এ লেভেল সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ লাখ ২৪ হাজার শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি নিশ্চিত করেছে। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো আসন পূর্ণ হয়নি। আবার কিছু শিক্ষার্থী এখনো ইউনিভার্সিটি থেকে ভর্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি নিশ্চিত করেছে তা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি।
গত বেশ কয়েক বছর যাবত এ লেভেল পরীক্ষায় টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার শিক্ষার্থীদের সাফল্য জাতীয় আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এই এলাকায় অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বসবাস হলেও এখানকার শিক্ষার্থীরা ঠিকই পরীক্ষার ফলাফলে দেশের সেরা ও নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে টেক্কা
দিচ্ছে। রাসেল গ্রুপের ইউনিভার্সিটিগুলোতেও এখানকার শিক্ষার্থীদের ভর্তি ঈর্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। শুধু পাশের হারে নয় উচ্চ গ্রেড অর্জনের ক্ষেত্রেও এখানকার শিক্ষার্থীরা জাতীয় গড়ের চাইতে বেশ এগিয়ে।
টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার ফলাফলের চূড়ান্ত বিশ্লেষণ এখনো পাওয়া না গেলেও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, টাওয়ার হ্যামলেটসের এ লেভেল পরীক্ষার্থীরা গত দুই বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সর্বোচ্চ গ্রেড লাভ করেছে। গত বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী তিনটি বিষয়ে এ স্টার, এ কিংবা বি পেয়েছিল। এর আগের বছর এই হার ছিলো ৬৯.৩ শতাংশ।
এবার টাওয়ার হ্যামলেটসে পাশের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্বোচ্চ গ্রেড অর্জনের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সেইসঙ্গে নামি-দামি ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
ফলাফল ঘোষণার দিন পপলারে অবস্থিত টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে গিয়ে সাফল্যের জোয়ারই যেন চোখে পড়লো। ৯০ শতাংশের বেশি পাস রেইট নিয়ে কলেজটি এবারও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া এএস বা ইয়ার ওয়ান পরীক্ষায় এবার কিছুটা নিয়ম বদল সত্ত্বেও এই কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশ ভাল করেছে বলে জানান কলেজের প্রিন্সিপাল মিস এলিসন। কলেজটির ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী এবার সাফল্যের সাথে ইয়ার ওয়ান সম্পন্ন করেছে। যা গত বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি।
গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন বলে বিবেচিত চারটি বিষয়েই এবার টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজের এ লেভেল শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল করেছে। হায়ার ম্যাথে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী এ স্টার, এ অথবা বি পেয়েছে। ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচারে পাস রেইট এবার ৯৬ শতাংশ। যার মধ্যে ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পেয়েছে হায়ার গ্রেড। সোসিওলোজিতে পাশের হার ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে হায়ার গ্রেড অর্জন করেছে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
এই কলেজের অসাধারণ ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এনামুল ইসলাম রফিক দুটি বিষয়ে এ স্টার এবং একটিতে এ পেয়েছে। ফ্যাং টিং নামে আরেকজনের ফলাফলও একই। এরা দুজনই কুইনমেরি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এনামুর রহমান নামে একজন একটি এ স্টার একটি এ এবং একটি বি পেয়ে এ লেভেল সম্পন্ন করেছে। এনামুর যাচ্ছে কিংস কলেছে পড়তে। এভাবে আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেল তাদের কেউ কিংস কলেজ, কেউ কুইনমেরি কিংবা কেউ ইম্পেরিয়ালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজের প্রিন্সিপাল মিস বলেন, অতীতের তুলনায় ফলাফল বেশ ভাল হয়েছে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে পেরে তিনি বেশ সন্তুষ্ঠ। তিনি বলেন, এবারও টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজের শিক্ষার্থীরা ভাল ভাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা অর্জনে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই কলেজে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। ভাল শিক্ষা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের জীবন বদলে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র জন বিগস বলেন, গোটা বারার শিক্ষার্থীদের সাফল্য অর্জনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে কঠোর পরিশ্রম প্রমাণ হচ্ছে এ বছরের এ-লেভেল সাফল্য। তাদের প্রচেষ্টার সাথে ছিলো প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকবৃন্দ, স্টাফ ও অভিভাবকদের কঠোর তত্ত্বাবধান ও সহায়তা। অনবদ্য এই সাফল্য অর্জনের পেছনে যাদের অবদান রয়েছে, আমি তাদের সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনাদের জন্য এই বারা গর্বিত।