শাবিপ্রবি : অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েই দিন কাটছে শিক্ষার্থীদের
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ আগস্ট ২০১৬, ১:০৫ পূর্বাহ্ণ
শাবি প্রতিনিধি:
দিনভর ক্লাস, ল্যাব ও এ্যাসান্টমেন্টের চাপ সহ্য করে দুপুরের খাবার খেতে খেতে বিকেল হয়ে যায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা সকাল-দুপুর বা রাতে যেসব খাবার খেয়ে থাকেন তা কতোটা স্বাস্থ্যসম্মত এ নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল এবং বাইরের দোকানগুলোর অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েই দিন কাটে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯হাজার। ছাত্রদের ৩টি এবং ছাত্রীদের ২টি হলে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২হাজার। এসব শিক্ষার্থীদের জন্য একমাত্র ভরসা হচ্ছে হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন। এছাড়া মেস বা ভাড়া বাড়িতে থাকা শিক্ষার্থীরাও দুপুরের খাবার ক্যাম্পাসে খেয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন এবং বাইরের দোকানগুলোতে খাবারের মান ভয়াবহ আকার ধারন করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, আবাসিক হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন ও ক্যাম্পাসের খোলা দোকানসহ সবজায়গায়ই খাবার রান্না ও পরিবেশন করা হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। হলগুলোর রান্নাঘর হাঁড়ি-পাতিল ও খাবার প্লেটের অবস্থা আরও বেশি নাজুক। মেলামাইনের মতো দেখতে প্লেটগুলোর অধিকাংশের তলা ফাটা, ভাঙা এবং নোংরা দাগযুক্ত। আর সাথে থাকছে মাছির ভোঁ ভোঁ ওড়াওড়ি। ক্যান্টিন কিংবা ক্যাম্পাসের খাবার দোকানে ব্যবহৃত প্লেট, বাটি, গ্লাস ও চায়ের কাপ ধোয়া বলতে একজনের খাওয়ার পর নোংরা পানিতে ডুবিয়ে আরেকজনকে দেয়া। ক্যাম্পাসের অধিকাংশ দোকানেই খোলা পরিবেশে খাবার খেতে হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যান্টিন, ডাইনিং খেতে গেলে ভাজিতে পচা আলু, ভাতে দুর্গন্ধ, আর সঙ্গে পাথরতো থাকছেই। মাঝে মাঝে দুপুরের বিক্রি না হওয়া খাবার রাতের জন্য রান্না করা খাবারের সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। ক্যাম্পাসের এখানে-সেখানে ব্যাংঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা দোকানের খাবারের মান ও মূল্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং না করায় দোকানের মালিকরা ইচ্ছেমত খাবারের দাম বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় উচ্চমূল্যে নিন্মমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা বলে, ক্যাফেটেরিয়া যে মানের খাবার খাওয়ানো হয় তারচেয়েও কম দামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী এলাকায় ও গেইটে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। ক্যাফেটেরিয়ায় মুরগীর মাংসের দাম ৫০ টাকা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী এলাকায় ও গেইটে তার দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা রাখা হয়।
এ নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার মাননিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য সচিব মো. শাহাদাত হোসেন শিশির জানান, বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষনে আছে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান বাড়ানোর জন্য এর মালিককে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিংয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজী বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতিমা ফারহানা মৌসুমী বলেন, হলের কিংবা ক্যাম্পাসের কোনো খাবারই খেতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু যখন রুমে রান্না করার সময় থাকে না তখন বাধ্য হয়ে সেই খাবার খেতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের প্রধান অফিসার ডা. মাহবুব আহমেদ জানান, যেসব শিক্ষার্থী নিয়মিত হলে খায় তাদের বড় একটা অংশ অস্বাস্থ্যকর ও নিন্মমানের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। এছাড়াও হলের ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী গ্যাসট্রিক সম্যসাসহ আমাশয়, ডায়রিয়ায়, ক্ষুধামন্দা ও শারীরিক দুর্বলতাসহ নানা ধরনের রোগের সম্মুখীন হয়।
হলের ডাইনিং ম্যানেজাররা জানান, দুপুরে ও রাতে ১৮টাকায় ভালো খাবার দেয়া সম্ভব হয় না। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরও যে খাবার ছাত্রদের খাওয়ানো হচ্ছে, তাতে ডাইনিং ম্যানেজারদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। হল প্রভোস্টরা জানান, ডাইনিংয়ে খাবারের মান বাড়ানোর জন্য আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি। এছাড়াও খাবারের মান ঠিক আছে কিনা কয়েকদিন পরপর খোঁজ রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, খাবারের দোকানগুলোর উপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় নজর রাখলে এবং পঁচা-বাসি খাবার পরিবেশন করার জন্য বড় অংকের জরিমানার পাশাপাশি শাস্তির ব্যবস্থা করলে এ সকল অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন বন্ধ হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও উপদেশ নির্দেশনা পরিচালক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন ও ক্যাম্পাসে খোলা খাবারের দোকান গুলোর খাবারের দাম এবং মান নিশ্চিত করতে সকল আবাসিক হলের প্রভোস্টদের নিয়ে একটা মনিটরিং সেল গঠন করা হবে।