সৌদি আরবে কর্মহীন ১৮০০ শ্রমিক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০১৬, ৬:৫৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সৌদি আরবে হঠাৎ বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় ১৮০০ বাংলাদেশি শ্রমিক। মাসের পর মাস তারা কর্মহীন। বেতন-ভাতা নেই। অনেকের আকামাও নেই। এ অবস্থায় বেকার শ্রমিকরা আশ্রয় শিবিরে প্রায় বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। অর্থের অভাবে তারা অনাহারে-অর্ধাহারে কেউবা ‘প্রায় অভুক্ত’ দিন কাটাচ্ছেন। কেবল বাংলাদেশি নন, সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানিতে আচমকা শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনায় খড়গ নেমে এসেছে ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের ওপর। অবশ্য অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ সরকারও দুর্যোগের মুখোমুখি শ্রমিকদের বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বিষয়টি দেখভাল করছে। এরই মধ্যে রিয়াদে থাকা দূতাবাসের কর্মকর্তারা আশ্রয় শিবিরগুলো ঘুরে ঢাকায় রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। সরকারি নির্দেশনা মতে শ্রমিকদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থাসহ তাদের কর্ম ফেরত পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতাও শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, আশ্রয় শিবিরে থাকা বেকার শ্রমিকদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করতে দূতাবাসকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা সেটি করেছেন, এখনও করছেন। পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন সেগুনবাগিচার ওই কর্মকর্তা। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী, সচিব, মিশন দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব বর্তমানে লেবানন সফরে রয়েছেন জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘কল্যাণ শাখা’র এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, কর্মহীন শ্রমিকদের আশ্রয় শিবিরে প্রায় অভুক্ত থাকার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশের পর পরই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মিশন) আজহারুল হক সৌদি দূতাবাসে চিঠি দিয়ে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের’ নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা মতে দূতাবাস শ্রমিকদের খাবার দেয়ার উদ্যোগ নেয় বলে দাবি ওই কর্মকর্তার। এদিকে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহও বিবিসি বাংলার সঙ্গে সমপ্রতি এক সাক্ষাৎকারে দুর্ভোগে থাকা শ্রমিকদের বিষয়ে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান। তাকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত রিপোর্ট মতে, সৌদি আরবের জেদ্দা, দাম্মাম ও রিয়াদ- এই তিনটি শহরে প্রায় আঠারশ’ বাংলাদেশি বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। এই শ্রমিকদের অনেকে প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে দেশটিতে কাজ করছিলেন। রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ জানান, মূলত দুটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রমিকরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। বেকার হয়ে যাওয়া শ্রমিকদের কর্মসংস্থান যেন দ্রুত হয় সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো বেকার শ্রমিক যদি দেশে ফিরতে চান তাহলে সেই ব্যবস্থাও বাংলাদেশ সরকার করবে। দাম্মামের আশ্রয় শিবিরে বাংলাদেশের অন্তত ১৪৪ জন শ্রমিক রয়েছেন যারা হঠাৎ বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদেরই একজন মিজানুর রহমানসহ ক’জন বাংলাদেশি শ্রমিক আগে অভিযোগ করেছিলেন যে, ‘অভুক্ত’ অবস্থায় তারা দিন কাটাচ্ছেন এবং দূতাবাস থেকে কেউই তাদের খোঁজ নিতে আসেননি। তবে গত মঙ্গলবার ওই শ্রমিকরা বিবিসি বাংলাকে জানান, এখন বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ তাদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থাসহ আর্থিকভাবেও সহায়তা করছেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। বিবিসি বাংলার রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, সৌদি আরবে কর্ম হারানো এশীয় শ্রমিকদের করুণ দশার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার পথ সুগম হয়েছে। ঢাকার তরফে রিয়াদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ‘আলোচনা চলছে’ জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষও বর্তমান এই সংকটের একটি সমাধান খুঁজছে। তারাও বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের কথা ভাবছে। বেকার বা কর্মহীন এশীয় শ্রমিকদের বিষয়ে বিধি-নিষেধ অনেক শিথিল করার আভাস মিলেছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, বেকার শ্রমিকরা যাতে অন্য চাকরিতে ঢুকতে পারেন বা ঝামেলাহীনভাবে নিজ নিজ দেশে ফিরতে পারেন সেই সুযোগ তারা এরই মধ্যে উন্মুক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কারণে ভারতীয় প্রায় আট হাজার শ্রমিকের ঠাঁই হয়েছে আশ্রয় শিবিরে। অবশ্য তাদের বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভিকে সিং গত সপ্তাহে জেদ্দা সফর করেছেন। ভারতীয়দের সঙ্গে আশ্রয় শিবিরে থাকা ফরিদপুরের মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতের কিছু বড় বড় কোম্পানি আশ্রয় শিবিরে সাহায্য পাঠায়। তারা মূলত ভারতীয়দের জন্য সাহায্য পাঠায়। সেখান থেকে অন্য দেশের লোকরাও কিছু কিছু পান বলে জানান তিনি। মিজানুর রহমান জানান, তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সেখানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ফিলিপাইন এবং শ্রীলঙ্কার শ্রমিকরা কাজ করতেন। এক বছর আগে কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়। গত চার মাস ধরে খাওয়াও বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় তারা করুণ এক পরিস্থিতির মুখোমুখি। ওই শ্রমিক বলেন, অনেকের কাছে একটি টাকাও নেই। অনেকের আকামাও নেই। আকামা ছাড়া গেটের বাইরে গেলে পুলিশ ধরে। একবার ধরলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হয়। এ অবস্থায় আকামা পরিবর্তন করে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে বদলি হতে ৭০-৮০ হাজার টাকা লাগে জানিয়ে বাংলাদশি ওই শ্রমিক বলেন, মানুষ খেতেই পায় না এত টাকা কোথা থেকে দেবো? পুরো বিষয়টি নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত আলোচনা শুরুর বিনীত অনুরোধ জানান তিনি।