‘সেলফির জন্য নিষিদ্ধ’ এলাকা চিহ্নিত করা হচ্ছে ভারতে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০১৬, ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

সুরমা নিউজ ডেস্ক :
পৃথিবীতে যত মানুষ সেলফি তুলতে গিয়ে মারা যান, তার বেশীরভাগই ভারতে। এই অগাস্ট মাসে সেলফি তুলতে গিয়ে পৃথিবীতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে – যার মধ্যে দুজন ভারতের। ২২ বছরের এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র এবং ২৭ বছরের এক তরুণী আইনজীবী পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন – সেলফি তুলতে গিয়ে। ২০১৪ সাল থেকে এ নিয়ে ভারতে ৫৬ জন মারা গেলেন সেলফি তোলার নেশায়। এবার এই সেলফি তোলার বিপদ নিয়ে নড়ে-চড়ে বসেছে ভারত সরকার। খবর-বিবিসি।
সারাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ‘সেলফি ডেঞ্জার জোন’ বা সেলফির জন্য বিপদজনক এলাকা খুঁজে বার করতে রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক। পার্লামেন্টে এই তথ্য জানিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রী মহেশ শর্মা।
পর্যটনকেন্দ্র গুলিতে মানুষ কতট ঝুঁকি নেন সেলফি তোলার জন্য?
কলকাতার গৃহবধূ সংযুক্তা সরকারের । একদিকে যেমন দেশ বিদেশের পর্যটনস্থলগুলোতে ঘোরেন, তেমনই নিয়মিত সেলফি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন।
তিনি বলছিলেন, “বিদেশে তো এটা চোখে পড়ে নি। তবে দেশের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে মানুষকে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে সেলফি তুলতে নিয়মিতই দেখি। বিশেষ করে সমুদ্রসৈকতগুলোতে অনেকেই দেখি ফোন, সেলফি স্টিক নিয়ে জলের মধ্যে অনেকদূরে চলে যান। দেখে তো আমার বেশ ভয়ই করে, এত ঘটনার ঘটছে সেলফি তুলতে গিয়ে,” বলছিলেন মিসেস সরকার।
তাঁর ওইসময়গুলোয় মনে হয় যে যদি কেউ সাবধান করে দেওয়ার জন্য থাকতেন আশপাশে, তাহলে ভালই হত।
কিছু মনস্তত্ত্ববিদ বলছেন সেলফি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করাটা একটা মনোরোগ। যদিও তা নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা এখনও হয় নি। অনেকের মতে এটা একটা নেশার মতো – বন্ধু বা পরিচিতদের কাছে বিখ্যাত হয়ে ওঠার শর্টকার্ট। স্মার্টফোন হাতে নিয়ে অনেক তরুণ তরুণীই তাই অসেচতন হয়ে পড়েন।
নিয়মিত সেলফি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন কলকাতার তরুণ সাংবাদিক সুব্রত আচার্য। তিনি বলছিলেন, “আমি খুবই সেলফি তুলি। তবে প্রথমেই যে বিষয়টায় নজর দিই, যে পারিপার্শ্বিকতা – আমি নিশ্চই কোনও দুর্ঘটনাস্থলের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলব না! আর আমার সেলফিতে অন্য কেউ যাতে বিব্রত না হন, সেটাও নজরে রাখি। তবে সবথেকে আগে দেখে নিই নিজের কোনও ঝুঁকি আছে কী না সেলফিটা তুলতে গিয়ে। এগুলো মাথায় না রাখলে স্মার্টফোন হাতে পাওয়া তরুণ-তরুণীদের ভবিষ্যতে বিপদ বাড়বে বই কমবে না।“

কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের তরফে বলা হচ্ছে পর্যটনস্থলের যেসব জায়গায় সেলফি তুলতে গেলে বিপদ হতে পারে, সেই স্থানগুলি চিহ্নিত করে স্বেচ্ছাসেবক রাখা হবে।
ওই জায়গায় সেলফি তুলতে গেলে যে বিপদ হতে পারে, সে ব্যাপারে পর্যটকদের সাবধান করে দেবেন এই স্বেচ্ছাসেবকরা। রাজ্য সরকারগুলো আর আর্কিওলজিক্যাল সার্ভেকেও এই সেলফি ডেঞ্জার জোন খুঁজে পর্যটকদের সচেতন করার ব্যাপারে অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক।
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্র্যাভেল এন্ড ট্যুর অপারেটর্স এসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলছিলেন, “অনেক আগে এরকম একটা নির্দেশাবলী ছিল পর্যটন মন্ত্রকের। কিন্তু কখনই সেটা খুব ভালভাবে কার্যকরী করা হয় নি, আর এখন এর সঙ্গে জুটেছে সেলফির বিষয়টা। আমার মনে হয় যদি প্রত্যেকটা পর্যটন কেন্দ্রে একটা কী করণীয়, কী করণীয় নয়, তার একটা স্পষ্ট তালিকা রাখা উচিত। যে পর্যটকরা আসছেন, তাঁদের হাতে একটা লিফলেট ধরিয়ে দেওয়া যে কী কী করা যাবে, কোনটা করা যাবে না। এগুলো করলেই পর্যটকদের সচেতন করা যাবে। আর ট্যুর অপারেটরদেরও পর্যটক সচেতনতার দিকে নজর দিতে হবে।“
জুন মাসে কানপুরে বৃষ্টির মধ্যে গঙ্গার ধারে সেলফি তুলতে গিয়ে তলিয়ে যান ৭ জন। জুলাইতে এক তরুণী অ্যাথলেট ও একজন কুস্তিগির সেলফি তুলতে গিয়ে জলে ডুবে মারা গেছেন।

তাদের বাঁচাতে গিয়ে মারা যায় এক তরুণ। (ফাইল ছবি)
মুম্বাইতে আরব সাগরের ধারে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে পা পিছলিয়ে জলে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল তিন যুবতীর। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে মারা যান অন্য এক যুবক।
চলন্ত ট্রেনের কাছে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে জানুয়ারি মাসে উত্তরপ্রদেশেই মারা গিয়েছিলেন তিন কলেজ পড়ুয়া। মার্চ মাসে পাঞ্জাবের পাঠানকোটে এক ১৫ বছরের কিশোর তার বাবার গুলি ভর্তি পিস্তল নিজের কপালে ঠেকিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে মারা যায়। ভুলক্রমে পিস্তলের ট্রিগার টেনে দিয়েছিল সে।
‘সেলফি’ তোলার হিড়িক আটকাতে মুম্বাই পুলিশ শহরের ১৬টি জায়গাকে ‘নো সেলফি জোন’ বলে চিহ্নিত করেছে, কর্ণাটক রাজ্যেও নো সেলফি জোন তৈরি করেছে সরকার।
এদিকে সবকটি জাতীয় সৌধের সামনে সাময়িকভাবে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আগে ও পরে ১২ থেকে ১৮ তারিখ অবধি নিরাপত্তার কারণে জাতীয় সৌধগুলি নো সেলফি জোন বলে ঘোষিত হয়েছে।