অলিম্পিক গেমস, শুধুই অংশগ্রহণ আর কতকাল?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০১৬, ৪:৩৬ অপরাহ্ণ
মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল :
’বিগেষ্ট শো অন আর্থ’ বলা হয়ে থাকে অলিম্পিক গেমসকে। সেখানে অংশগ্রহণ করাটা একজন ক্রীড়াবিদের জন্য থাকে স্বপ্নের চেয়েও বেশিকিছু। আর সেই স্বপ্নটাই বারবার পূরণ করে চলেছে বাংলাদেশ। অলিম্পিক গেমস মানেই বড় উৎসবের আয়োজন। সেখানে তাবৎ দুনিয়ার বড় বড় অ্যাথলেটরা অংশগ্রহণ করেন। অলিম্পিকের পদকের মূল্য অন্য যে কোন আসর থেকেই বেশি। একেকটা পদক নিয়ে সে কারণেই ক্রীড়াবিদদের অহংকারের শেষ থাকে না। যুগে যুগে মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো অ্যাথলেটের সংখ্যাও কম নয়। নজরটা আলো ঝলমলে তারকাদের দিকেই বেশি থাকে। সে দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটাই তলানীতে। সাফল্য নিয়ে আশা কোন কালেই ছিলনা। সেই ১৯৮৪ সাল থেকে যে যাত্রা লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা শুরু করেছিল তা অব্যাহত রয়েছে ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিক গেমস পর্যন্ত। দুনিয়ার মানুষের অলিম্পিক নিয়ে প্রত্যাশা বাড়লেও বাংলাদেশ সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এখনো অংশগ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে অ্যাথলেটদের কার্যক্রম। সে ছবিটা যেমন আগের মতোই রয়েছে পাশাপাশি কর্মকর্তাদের প্রমোদভ্রমনও চলছে সমানতালে।
এবারো বদলায়নি ছবিটা। সাতজন অ্যাথলেটের সাথে ১২ জন কর্মকর্তার ব্রাজিল যাওয়ার উদ্দেশ্য কি সেটা অনেকটাই পরিস্কার। তবে পুরনো সেই ছবিটা বদলে ফেলার মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি বলেও জানা গেছে। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান, সাঁতার থেকে মাহফিজুর রহমান সাগর, সোনিয়া আক্তার টুম্পা, অ্যাথলেটিক্সে মেজবাহ আহমেদ, শিরিন আক্তার, আরচারীতে শ্যামলী রায় ও শুটিংয়ে আব্দুল্লাহ হেল বাকী। যাদের বেশিরভাগই ব্রাজিল গিয়েছেন কোচ ছাড়া। তাতেই অনেকটাই পরিস্কার অংশগ্রহণই বাংলাদেশের মূল্য উদ্দেশ্য। নয়তো সাতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কেন যাবেন দলটির সাথে?
এবারের রিও অলিম্পিকের কন্টিনজেন্টে সাতার থেকেই দুজন অংশগ্রহণ করছেন। সেখানে একজন কোচের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সেটা খেলোয়াড়রাই ভাল বলতে পারেন। বৈশ্বিক এ ক্রীড়া আসর থেকে বাংলাদেশের অর্জন কিন্তু খুব বেশি থাকেনা। হিটে বাদ পড়ার মতো ঘটনাও কম নয়। পাশাপাশি গেমস ভিলেজ থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার। যদিও এখন দেশের মুখে চুনকাম করা কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু উন্নতি হয়নি পারফরম্যান্সের।
সাঁতারে কোচ-কাম ম্যানেজার হিসেবে গিয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিজ উদ্দিন। যার কোচিংয়ের কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা-সার্টিফিকেট কিছুই নেই। অভিযোগ রয়েছে, ব্রাজিলের মতো দেশের ভ্রমণের লোভ সামলাতে না পেরে তিনি কোচ বনে গেছেন! বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন বলেই হয়তো এ ধরনের অনৈতিকতা সম্ভব হয়েছে। আর আগের মতো লেখালেখি হয়না বলেও কর্মকর্তাদের জন্য বেশ মজাই হয়েছে।
পর্যবেক্ষক হিসেবে ফেডারেশনের কর্মকর্তারা যেতেই পারেন, কিন্তু দুজন খেলোয়াড়ের সাথে কোন কোচ যাবেন না এটা তো মেনে নেবার মতো নয়। সাতারের মতো বড় না হলেও গলদ আছে অ্যাথলেটিক্সে। অনেকটা অংশগ্রহণের জন্য নামকাওয়াস্তে প্রস্তুতি নিয়ে মেজবাহ ও শিরিন ব্রাজিল গিয়েছেন। একেবারে শেষ মুহুর্তে ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছিলেন এ দুজন। তাদের প্রস্তুতিটা হয়েছে অনেকটা দায়সাড়াগোছের। অলিম্পিক মিশনের এই শোচনীয় অবস্থা নিয়েই তিনভাগে মোট ১৯ সদস্যের বাংলাদেশ দল যায় ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে। সাতার ফেডারেশনের স্বেচ্ছাচারিতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটা সর্বশেষ সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে মাহফুজা খাতুন শিলা জোড়া স্বর্ণ জয় করে ফেডারেশনের বিপক্ষে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন। নানাভাবে তাকে সাতার থেকে বিতারিত করার চেষ্টাই করেছিলেন ফেডারেশনের কিছু কর্মকার্তা। যদিও বাংলাদেশের সেরা সাঁতারু সাগর কোচ-সংক্রান্ত কোন বিষয়ে কথা না বলে নিজের খেলাটা নিয়েই ভাবতে চেয়েছেন।
তবে ব্যতিক্রম বলতে হবে শুটিং ও আরচারীকে। একজন ক্রীড়াবিদের সঙ্গে দুটি ইভেন্টেই পাঠানো হচ্ছে একজন করে কোচ। সাঁতারে কোচ না পাঠিয়ে ফেডারেশন কর্তা যাওয়ার রীতিটা অবশ্য নতুন নয়। সাম্প্রতিক সময়ের প্রতিটি আসরেই এরকম ঘটে আসছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে আকর্ষণীয় কোনো দেশে ভ্রমণের সুযোগ এলেই অনৈতিক এ কাজ করার ধুম পড়ে যায়। যদিও সাতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিজের অলিম্পিক গেমসে যাওয়ার বিষয়ে সবকিছুই অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন। কোচ না পাঠিয়ে কর্মকর্তা পাঠানোর ফল এর আগে অনেকবারই পেয়েছে বাংলাদেশ।
১৯৯২ সালের বার্সেলোনা অলিম্পিকে সাঁতারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছিলেন সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী মোখলেছুর রহমান। কিন্তু গাইড না থাকায় ভুল পথে গিয়ে সময়মতো উপস্থিত হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় ইভেন্ট। শুধু অলিম্পিকেই নয় সাফ গেমসেও এমনটি করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ইসলামাবাদ সাফ গেমসে সম্ভাবনা থাকা পরও কোন স্বর্ণ জেতা হয়নি বাংলাদেশের।
এমন ঘটনার পরও কোন শিক্ষা নেয়নি ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। এমনকি ফেডারেশনগুলোকে বিভিন্ন ইভেন্টের দেখভাল করা অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনও থাকে নিশ্চুপ। সে কারণে দাবি উঠেছে খেলোয়াড়দের সাথে যেতে হবে কোচ। তাতে করে ভুল পথে যাবার পাশাপাশি সম্ভাবনা তৈরি হওয়া ইভেন্টগুলোতে পদক জয়ের সুযোগও থাকবে। আর পুরনো সেই ছবিটা বদলানোরও সময় এসেছে। তাতে করে লাভ যা হবার তা হবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের। এখন থেকেই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করার আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করে তবেই দল পাঠানো উচিত। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাই পারে পদক খরা ঘোচাতে।