হার্ডলাইনে যায়নি সিলেটের প্রশাসন : অর্থমন্ত্রীই শেষ ভরসা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০১৬, ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেটের শিল্পপতি রাগিব আলীর নিয়ন্ত্রনে থাকা তারাপুর চা-বাগানের অবৈধ জায়গায় গড়ে ওঠা রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ভাগ্য ঝুলে আছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মর্জির উপর। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত স্থাপনা সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। ৩১ জুলাই ছিল টাইমলাইনের শেষ দিন। কিন্তু বিশাল বাগান দখল করে গড়ে উঠা রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, দুটি ছাত্রাবাস, মদন মোহন কলেজের কমার্স ক্যাম্পাস ও হাজার খানেক বসতবাড়ি সরিয়ে নিতে হার্ডলাইনে যায়নি সিলেটের প্রশাসন।
অন্যদিকে, মেডিকেল কলেজ ও বসতবাড়ি না সরানোর দাবিতে স্থানীয়ভাবে শুরু হয়েছে আন্দোলন। এ কারনে বিশেষত রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ রক্ষায় সিলেটের সব মহল থেকে চূড়ান্ত সিদ্বান্তের জন্য অর্থমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত করেছেন দায়িত্ব। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের নেতাদের ঢাকায় যেতে বলেন।
রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ রক্ষায় অর্থমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৭ টায় ঢাকার হেয়ার রোডস্থ অর্থমন্ত্রীর বাসভবনে মেডিকেল কলেজটি রক্ষার ব্যাপারে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। মানবিক কারণে যেকোনো উপায়ে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ রক্ষার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান নেতারা। নেতৃবৃন্দ প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত জীবনের কথা ও চিকিৎসাসেবার দিকটি চিন্তা করে মানবিক কারনে সহযোগিতা কামনা করেন মন্ত্রীর কাছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিষয়টি অবগত আছেন। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত জীবনের কথাও তিনি ভেবে দেখছেন। এসময় মন্ত্রী আশ্বস্থ করেন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এবং সিলেটবাসীর দাবি রক্ষায় তিনি পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. আবুল কালাম আবদুল মোমেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী, কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াছ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. একে এম হাফিজ, আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ সিরাজ ও রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল।
রাগীব আলীকে বেঁধে দেয়া সময় চলে যাওয়ায় গত কয়েক দিন দফায় দফায় বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। বেঁধে দেয়া সময় চলে গেলেও এখন পর্যন্ত তারাপুরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেনি প্রশাসন।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের আপীল বিভাগ তারাপুর চা বাগান শিল্পপতি রাগীব আলীর দখল থেকে উদ্ধারের রায় দেন।
এছাড়া তারাপুর চা বাগানে নির্মিত সব অবকাঠামো ৬ মাসের মধ্যে অপসারণ করে সে জায়গায় চা বাগান করার আদেশ দেন আপীল বিভাগ। রাগীব আলী গং অবকাঠামো অপসারণে করতে ব্যর্থ হলে পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা নিয়ে স্থাপনা অপসারণের কথাও উল্লেখ করা হয় রায়ে। তবে এ খাতে ব্যয় হওয়া অর্থ জেলা প্রশাসক রিট আবেদনকারীদের (রাগীব আলীর ছেলে) কাছ থেকে গ্রহণ করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
তবে গত ১৭ জুলাই ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও অবৈধ স্থাপনা উদ্ধার অভিযান শুরু হয়নি। ২২ জুলাই সিলেট জেলা প্রসাশক জয়নুল আবেদিন অবৈধ স্থাপনা সরাতে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় বেধে দিয়ে নোটিশ দেন। সেই সময়ও অতিবাহিত হবার পর ওইদিন বৈঠক করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শ নেয়ার কথা জানানো হয়।