বালাগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতার আহমদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ আগস্ট ২০১৬, ৮:১৮ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাসদ’র প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতার আহমদের ৩০তম স্মরণসভা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সিলেট জেলা ও মহানগর’র উদ্যোগে শুক্রবার রাতে কেন্দ্রিয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে অনুষ্ঠিত হয়।
মহানগর জাসদের সমন্বয়ক ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশুর সভাপতিত্বে ও জেলা জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন আহমদ মুক্তার পরিচালনায় স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রশাসক এড. লুৎফুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ধীরেন সিং, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, কমরেড সুমন, সৈয়দ লিয়াকত আলী, অম্বর শীষ দত্ত, শামীমা আখতার, বেদানন্দ ভট্টাচার্য, জাসদ নেতা লোকমান আহমদ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতার আহমদ ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন খাঁটি মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনি আজীবন গরিব-দুখি-মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষে কাজ করেছেন।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ষাটের দশকে সারাদেশে হাতেগোনা যে ক’জন তরুণকে লালন ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতার আহমদ। আখতার আহমদের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার জামালপুর গ্রামে। তাঁর পিতা মরহুম মোহাম্মদ আসলাম ছিলেন ‘আজাদ-হিন্দ’ বাহিনীর একজন সাহসী যোদ্ধা। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সকলের বড় আখতার আহমদের মা হামিদা খাতুন ও ছিলেন একজন সমাজসেবী এবং গৃহকর্মে নিপূনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন সময় ১৯৪৩ সালের ২৪ জুলাই সিঙ্গাপুরে যুদ্ধকালীন এক বাঙ্কারে জন্ম হয় আখতার আহমদের।
আখতার আহমদ ছিলেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের প্রথম নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক (১৯৬৫-১৯৬৬) ও পরবর্তীতে তিনি সভাপতির (১৯৬৬-১৯৬৭) দায়িত্ব পালন করেন। ঐ সময়ে তৎকালীন সামরিক জান্তা জেনারেল আইয়ূব খানের সিলেটে সভার প্রতিবাদে সার্কিট হাউসে জুতা নিক্ষেপ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ জন্য তাঁকে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকতে হয়।
আখতার আহমদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট’ (বিএলফ) তথা মুজিব বাহিনীর সিলেট অঞ্চল প্রধান হিসেবে কাজ করেন। তিনি ভারতের দেরাদুনে প্রশিক্ষণ নিয়ে ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন ও সমগ্র সিলেট অঞ্চল জুড়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি জাসদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
সৎ ও নিষ্ঠাবান এ নেতা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের রয়েল ফ্রি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৬ সালের ৫ই আগষ্ট তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মাত্র ৪৩ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি বিত্ত-বৈভবকে এড়িয়ে সমাজ ও জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অবিস্মরণীয় এবং নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়। (বালাগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ/উজ্জ্বল ধর)