নবীগঞ্জে ১ বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী দুইজনই লাপাত্তা !
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুলাই ২০১৬, ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে গ্রেফতারকৃত মাওলানা জুনেদ তার স্ত্রী নিয়ে এক বছর ধরে নিখোঁজ। কেউ জানে না তারা সঠিক কোথায় ! তবে, এলাকার অনেকের ধারণা তারা আফগানিস্তান না হয় শিরিয়ার আইএসএ যোগ দিয়েছে।
জানা যায়, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বনকাদিপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে মাওলানা জুনেদ আল হাবিব ( জুনেদ আহমদ) তার স্ত্রীসহ দীর্ঘ ১ বছর ধরে নিখোঁজ।
জুনেদের বয়স যখন ২৫ তখন বিয়েও করেছিল কোরআনে হাফিজ মরিয়ম বিবিকে গোপনে। তবে বিয়ের পর থেকেই তার স্ত্রী থাকতো পিতার বাড়িতে। প্রায় ১ বছর আগে হঠাৎ করে নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় জুনেদ। সাথে নিয়ে যায় তার নববিবাহিত স্ত্রী হাফিজা মরিয়মকে। তারা দুজন কোথায় তা কেউ জানতে পারেনি। জুনেদের বাবার পরিবার এবং শ্বশুরে পরিবার তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে। হদিস পায়নি।
শুক্রবার ২২ জুলাই জুনেদের বাবা আব্দুর রহিম নবীগঞ্জ থানায় নিখোঁজ জিডি করেছেন। পুলিশ জিডির আলোকে অনেক খোঁজ খবর নিচ্ছে।তারাও কোন হদিস পাচ্ছে না।
গতকাল সরজমিন মাওলানা জুনেদ আল হাবিবের বাড়ি বনকাদিপুর গ্রামে গেলে অনেক অজানা কথা বেড়িয়ে আসে। জুনেদের বাবা আব্দুর রহিম ও মা অজুফা বিবি জানান, জুনেদ স্থানীয় নুরগাঁও রুহুল উলুম কওমি মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করেছে। সে সব সময় একা চলাফেরা করতো। গ্রামের কারো সাথে সে মিশতো না। কম কথা বলতো। সবাই তাকে হুজুর ডাকতো। একা একা মসজিদে বসে থাকতো। মাঝে মধ্যে কোন হুজুর আসলে তাদের সাথে মসজিদে বসে কথা বলতো।মোবাইলে সবার সাথে যোগাযোগ করতো।
২০০১ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় সে গ্রেফতার হয়। দিনারপুর কায়স্থগ্রাম পাহাড়ে একদল মাদ্রাসা ছাত্রকে প্রশিক্ষন দেয়। এ সময় দেশিও অস্ত্রশস্ত্রসহ সেনা বাহিনী তাকে পাহাড় থেকে গ্রেফতার করে। পরে সে দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিল। পরে মুক্তি পেয়ে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। চাকুরী নেয় সিলেট নিরাময় পলি ক্লিনিকে। সে দীর্ঘ দুই বছর সেখানে চাকুরী করে। সেখানে বেতন ভাতা নিয়ে বনিবনা না হওয়াতে বাড়ি চলে আসে। গোপনে বিয়ে করে মাদ্রাসা ছাত্রী হাফিজা মরিয়ম বিবিকে। এর পরেই গত প্রায় ১০ মাস আগে র্যাব-৯ এর একদল সদস্য বাড়ি থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। দুই দিন র্যাব ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাব সদস্যরা তাকে আবারো বাড়িতে ফিরে দিয়ে যায়। এরপর সে বাড়িতে বেকার বসে থাকতো। কেন সে বেকার বসে এসব করছে । তার বাবা জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঐদিন রাতেই সে বাড়ি থেকে চলে যায়। আর বাড়ি সে বাড়ি ফিওে আসেনি। কিছুদিন পরেই ঢাকার বল্গার হত্যা মামলার সন্দেহ জনক আসামী হিসাবে তার নাম আসে। এসময় ডিবি পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে পায়নি। তখনই গ্রামবাসির টনক নড়ে উঠে সবাই জুনেদ কে খুঁজতে থাকে। কোন সন্ধান পায়নি। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানান তার স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সন্দেহের ধাঁনা বাধে তারা কোথায়। সবার ধারনা তারা আইএসে যোগ দিতে দেশ ত্যাগ করেছে। বাড়ির কারো সাথেই কোন যোগাযোগ নেই তার। এমনকি কোন দিন মোবাইল ফোনেও কথা বলেনি, এমনটাই জানালেন স্বজনরা। কিন্তু ১বছর ধরে সন্তান নিখোঁজ থাকলেও ।
গত ২২ জুন নবীগঞ্জ থানায় তার বাবা একটি জিডি করেছেন। ২ বোন ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে নিখোঁজ জুনেদ সবার বড়। জঙ্গি তৎফরতায় নিখোঁজ অনেকের জড়িয়ে পরার খবরে উদ্বিগ্ন তার পরিবার। সে কোথায় আছে? কি করছে? এ চিন্তায় আছেন তার মা-বাবা।
জুনেদের পরিবারের লোকজন জানান, ইতিপূর্ব্যে জঙ্গি সন্দেহে জুনেদকে একাধীকবার গ্রেফতার হয়। তবে তখন ৪/৫ দিনের মধ্যেই আবার বাড়িতে ফিরে আসে। জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার ও রহস্যজনক চলাফেরার কারণেই গ্রামবাসির সন্দেহের তীর তার দিকে। বর্তমানেও জুনেদ জঙ্গি তৎফরতায় জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
অপর দিকে. নিখোঁজ সন্তান জুনেদকে ফিরে পেতে চান তার মা অজুফা বিবি। তার বাবা আব্দুর রহিম জানালেন জুনেদ যদি জঙ্গি তৎফরতায় আইএসে জড়িত থাকে। তাহলে তিনি আত্মহত্যা করবেন । তিনি বলেন আমি আমার ছেলেকে তার স্ত্রীসহ ফেরত চাই। এনিয়ে উদ্বেগ, উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন নিখোঁজের পরিবারের লোকজন। জুনেদের ভাই জাহেদ বলেন, আমি চাই আমার ভাই আবার ফিরে আসবে । সে স্বাভাবিক জীবনে চলাফেরা করবে। আর জঙ্গী হলে তার সঠিক বিচার আমরাও চাই। কোন জঙ্গী কে আমরা ভাই হিসাবে গ্রহন করবো না।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি মেম্বার খালেদ হোসেন দুলন বলেন, মাওলানা জুনেদ একাধিক বার গ্রেফতার হয়েছে। র্যাব ও সেনা বাহিনী জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতার হলেও সে ছাড়া পেয়েছে। গ্রামে কারো সাথে সে মিসতো না। বর্তমানে সে নিখোঁজ কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই বলছে সে আইএসে যোগ দিতে দেশ ত্যাগ করেছে। এখন আল্লাহই জানেন জুনেদ কোথায় আছে।
জিডি তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ধর্মজিত সিনহা বলেন, সে জঙ্গী সন্দেহে কয়েক বার গ্রেফতার হয়েছিল এই কথা সত্য। তার স্ত্রী হাফিজা মরিয়ম বিবিসহ একবছর যাবৎ নিখোঁজ। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি এর বেশি বলতে পারবো না। বর্তমানে জুনেদ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল বাতেন খান বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এর আগে জঙ্গী হিসাবে গ্রেফতার হয়েছিল তাই সবাই তাকে সন্দেহ করছে ঐপথে যেতে পারে। ঢাকার বল্গার হত্যায় সে জড়িত কি না সেটা এখন বলা যাবে না। পুরো বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।