জুবায়ের আহমেদ লন্ডন থেকে:
শুক্রবারের হামলার পর থেকেই বহির্বিশ্বে অবস্থানকারী প্রবাসীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। লন্ডনসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাংলাদেশী প্রবাসীদের উপর বিশেষ করে মসজিদগুলোতে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী বেড়েছে বলে জানান প্রবাসীরা। ইস্ট লন্ডন মসজিদ ছাড়াও ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরের প্রধান মসজিদ গুলোতে বিশেষ বাহিনীর নজর রয়েছে। আইনজীবি আলম হোসেন বলেন, গত দুদিন ধরে মসজিদ গুলোর আশপাশে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের আনাগোনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
জানা যায়, সবচেয়ে বেশী আতঙ্কিত রয়েছেন ইতালীয়ান প্রবাসীরা। কমিউনিটির পক্ষ থেকে প্রবাসীদের সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। ইতালীর রাস্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন টহলরত অবস্থায় রয়েছে। তারা বিশেষ করে বাংলাদেশীদের ডকুমেন্ট চেক করছে। গুলশান হামলায় যে ১৭ জন বিদেশী নিহত হয়েছেন তাদের মধ্য সর্বোচ্চ ৯ জন ইতালীয়ান। ঘটনার পর থেকেই তাদের সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি প্রধান শিরোনাম হয়ে আসছে। তারা বাংলাদেশ সরকার ও রাজনীতিবিদদের কড়া সমালোচনা করছে। ইতালীর রাই নিউজের সংবাদ বিশ্লেষনে এই হামলার জন্য বাংলাদেশের প্রধান দুই দলকেই দায়ী করা হয়েছে। একজন সমালোচক কড়া ভাষায় এর নিন্দা জানান। এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে ইতালিয়ানদের জরুরী কোন প্রয়োজন ছাড়া অবস্থান না করার পরামর্শ দেন। তারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হত্যাকান্ড সমূহের ধারাবাহিকতা উল্লেখ করে বলেন,পরস্পর দোষারোপের রাজনীতিই গুলশানের এই হামলার রাস্তা তৈরী করে দিয়েছে।
এদিকে ইতালীয়ান স্কাই নিউজের একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একনায়ক ও বিএনপি দলীয় নেত্রীকে ইসলামপন্থীদের নেতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ফ্রান্স প্রবাসী আবুল হাসনাত বলেন, গুলশান হামলার খবর ছড়িয়ে পরার পর থেকেই এখানে অবস্থানরত প্রবাসী মুসলমানরা কিছুটা আতঙ্কের মধ্য রয়েছেন। প্যারিস হামলার পর থেকেই মসজিদগুলোতে ফ্রান্স সরকারের নজরদারী অব্যাহত ছিল। এবার সেটা আরো জোরদার করা হয়েছে। রাস্তাঘাটে আমাদের উপর বিদেশীদের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে।
জাপানে প্রবাসীরা সেভাবে আতঙ্কিত না থাকলেও তাদের উপর জাপানিজদের যে নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে তা-ই জানিয়েছেন প্রবাসী শামী হক। তিনি বলেন শান্তিপ্রিয় জাতি হিসাবে সারা বিশ্বে জাপানীদের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। কাজপাগল মানুষগুলোর কাছে ৭ জন নাগরিক হারানোর খবর তাদের হতবিহবল করেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বা কাজ করতে যাওয়া তাদের জন্য এখন আতঙ্ক থাকবে সন্দেহ নেই। এদিকে জাপানের সরকারী সাহায্য সংস্থার প্রধান ঢাকায় জিম্মি আটক ঘঠনায় ৭ জন জাপানি নাগরিকের প্রানহানীর ঘঠনায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছেন। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এজেন্সি জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিইচি কিতাওয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নিহত ৭ জন ঢাকার নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। জাইকা পরিচালিত একটি প্রকল্পে তারা পরামর্শকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। কিতাওয়া বলেছেন, স্থানীয় জাঈকা কার্যালয় কর্মচারীদের নিরাপত্তার কারনে রাতে বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করেছে। তিনি বলেন এটা দুঃখজনক যে এজেন্সির পরামর্শকদের হয়তো বিস্তৃত ভাবে সবকিছু জানানো হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন যে জাইকার কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এখনও বাংলাদেশে অবস্থানরত কর্মচারী ও পরামর্শকদের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে হয়তো দেশে ছেড়ে চলে যাওয়া কিংবা বাড়ীর বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হবে।