বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০১৬, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা ডেস্কঃ আসন্ন গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ভোট দিতে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হক।
বৃহস্পতিবার পার্লামেন্ট ভবন সংলগ্ন অ্যাটলি হাউজে ‘লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে ‘ব্রিমেইন’ (ব্রিটেন রিমেইন)-এর পক্ষে ভোট দেয়ার আহবান জানান এই তিন বঙ্গকন্যা। তারা অভিযোগ করেন, ঢাকার ভিসা অফিস দিল্লিতে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিকভাবে ইইউ ছাড়ার পক্ষে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করছেন ‘ব্রেক্সিট’ (ব্রিটেন এক্সিট) ক্যাম্পেইনাররা। নিজেদের তৈরি নিয়মকে এখন ব্রেক্সিট-এর ইইউ-সম্পৃক্ত সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে কারি-শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন পৃথ্বী প্যাটেল– তিন বঙ্গকন্যা এমনই অভিযোগ আনেন প্রেস কনফারেন্সে।
তিন এমপি সতর্কতাবাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বাংলাদেশিসহ এথনিক কমিউনিটিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।
ইইউ তে থাকার কারণেই বাংলাদেশসহ নন-ইউরোপিয়ান দেশ থেকে কারি-শেফ আনতে ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না, ব্রেক্সিট ক্যাম্পেইনার টোরি দলীয় মন্ত্রী পৃথ্বী প্যাটেলের এমন বিভ্রান্তিকর প্রচারণার কঠোর সমালোচনা করেন কারি-শিল্পের জন্মদাতা এথনিক কমিউনিটি বংশোদ্ভূত এমপিরা। তারা বলেন, ব্রিটেনের বাইরে থেকে স্কিল্ড মাইগ্রেন্ট আনার আইনগত কড়াকড়ি ইইউতে থাকা বা না থাকার সঙ্গে মোটেই সম্পৃক্ত নয়।
এটি হচ্ছে সেই কনজারভেটিভ সরকারের সৃষ্ট ইমিগ্রেশন রীতির কারণে, যে সরকারে শীর্ষ ব্রেক্সিট ক্যাম্পেইনার পৃথ্বী প্যাটেল, মাইক্যাল গোব, আয়ান ডানকান স্মিথ, জন উইটিংডেইল, টেরিজা ভিলিয়ার্স, বরিস জনসন ও ক্রিস গ্রেইলিংও গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে ছিলেন। নিজেদের তৈরি নিয়মকে এখন ব্রেক্সিট-এর ইইউ-সম্পৃক্ত সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে কারি-শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন পৃথ্বী প্যাটেল– তিন বঙ্গকন্যা এমনই অভিযোগ আনেন প্রেস কনফারেন্সে।
প্রেস কনফারেন্সে রোশনারা বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ব্রিটেনের সমৃদ্ধির ভিত্তি হলো আমাদের ইইউ সদস্যপদ। একক বাজারের অংশ হিসেবে ইইউতে ব্রিটেন সবচেয়ে শক্তিশালী ও নিরাপদ। তিনি বলেন, ইইউ থেকে বেরিয়ে আসা মানে আরও এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি নেয়া, যে মন্দায় অর্ধ মিলিয়ন জব কাটের কারণে কর্মজীবী পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি সংকটে নিপতিত হবে।
তিনি বলেন এসব ঝুঁকি পর্যালোচনা করেই লন্ডন মেয়র সাদিক খান, আমরা তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি ও সারা দেশের কাউন্সিলাররাসহ লেবার পার্টির সব নেতা ইইউতে থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।
টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের জন্য ভিসা কড়াকড়ির কারণ হিসেবে যারা ইইউ-সম্পৃক্ততাকে ইস্যু হিসেবে তুলে ধরছেন, তারা নিজেদের কাছে আর কোনো যুক্তি না থাকায় ইচ্ছে করেই এহেন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। নিজেদের সরকারের (কনজারভেটিভ) তৈরি কড়া ইমিগ্রেশন পলিসি-সৃষ্ট এই সমস্যার সাথে ইইউ-সম্পৃক্ততার কোনো সম্পর্কই নেই।
টিউলিপের মতে, ব্রিটেন যদি ইইউ থেকে বেরিয়ে যায়, তবে ইউকিপ’র সমর্থন নিয়ে আরও কট্টর ডানপন্থিরা ক্ষমতায় আসবে এবং বাংলাদেশিসহ এথনিক কমিউনিটির পরিবারের সদস্য আনার ব্যাপারে ইমিগ্রেশন পলিসি আরও কঠোর থেকে কঠোরতর হবে।
রূপা হক বলেন, কাজের অধিকার, টাইম-অফ ও মেটার্নিটি অধিকারের নিশ্চয়তা রয়েছে ইইউতে, যা ৫শ মিলিয়ন মানুষের মার্কেটে একটি শক্তিশালী ইকোনমি গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
ইইউ ত্যাগ করলে স্মল বিজনেসগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন সতর্কতাবাণী উচ্চারণ করে রূপা বলেন, ইইউ ত্যাগের ফলে অর্থ ও বিনিয়োগ সব চলে যাবে ব্রিটেনের বাইরে। ইনফ্লেশন, রিসেশন ও বাড়িঘরের দাম পড়ে যাবে, যোগ করেন রূপা।