মৌলভীবাজারে করোনা ঝুঁকি নিয়ে কাজে যেতে নারাজ চা শ্রমিকরা : অসন্তোষ চরমে
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০২০, ৫:৪৬ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার জেলার বেশিরভাগ চা বাগানে করোনা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন লক্ষাধিক চা শ্রমিক। সরকারি নির্দেশে সারাদেশে সকলে ছুটি পেলেও বাগান কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চা শ্রমিকদের ছুটি পায়নি। তাই তাদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চা বাগানগুলোতে বাড়ছে শ্রমিক অসন্তোষ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে টানা দুই দিন কর্মবিরতির পর গত মঙ্গলবার বিকেলে সাতগাঁও চা বাগান ফ্যাক্টরির সামনে ছুটির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন সাতগাঁও চা বাগানে কর্মরত চা শ্রমিকরা। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
করোনায় সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলেছে সরকার। ঘর থেকে বের না হতে বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানের প্রায় বেশিরভাগ বাগানেই মানা হচ্ছেনা এ নির্দেশনা। প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন চা বাগানে কাজ করে যাচ্ছেন লক্ষাধিক চা শ্রমিক।
মৌলভীবাজার জেলায় মোট চা বাগান ৯২ টি। এসব চা বাগানে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে কাজ করছেন প্রায় লক্ষাধিক চা শ্রমিক। তাদের পাশে এগিয়ে আসছেনা না কোন সামাজিক সংগঠন। তাছাড়া চা বাগানের মালিক পক্ষ থেকেও নেয়া হচ্ছে না তেমন কোন সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা। দেশের সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এখনো ছুটি পাচ্ছেননা চা শ্রমিকরা। ফলে এসকল বাগান ও চা শ্রমিকদের মাঝে বাড়ছে করোনার ঝুঁকি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানসহ দেশে মোট ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে নিবন্ধিত অনিবন্ধিত মিলে প্রায় দেড় লাখ চা শ্রমিক কাজ করেন। এই সব শ্রমিকদের পরিবারের সংখ্যা মিলিয়ে যা প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি। জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাগানগুলোতে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠি দেয় বাংলাদেশ চা বোর্ড। চিঠিতে চা বোর্ডের দেয়া আট নির্দেশনায় বাগানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ও শ্রমিকদের ছুটি প্রদানের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। এই চিঠি পাওয়ার পর কিছু বাগান মালিক ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বেশকিছু কর্মসূচি পালন করলেও তার ঠিক উল্টো চিত্র শ্রমিকদের বেলায়। এখনও দল বেধে কাজ করছেন চা শ্রমিকরা, হঠাৎ কারো মুখে মাস্কের দেখা মিললেও তারা জানেন না এর ব্যবহারবিধি। নেই পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।
এদিকে সাতগাঁও চা বাগান বস্তির পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুদীপ কৈরী বলেন, “বাগানের সাহেবরা লকডাউনে আর আমরা চা শ্রমিকরা বাগানে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন করোনা কি শুধু সাহেবদের সংক্রমণ করে? আমরা যদি সংক্রমিত হই তাহলে এটাতো দেশের জন্যই ক্ষতি সেই সাথে আমাদের থেকে অন্যরা সংক্রমিত হবে”। চা শ্রমিক নিয়তি বাউরি জানান দেয় , “করোনায় কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেনা কিন্তু আমাদের ঠিকই বের হতে হয়। বাগানে কাজ করতে হয়। তিনি জানান সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের সহযোগিতা আমরা পাইনি।
এদিকে সাতগাঁও চা বাগান ব্যাবস্থাপক মো রফিকুল ইসলাম জানান, “এতে আমাদের কিছু করার নাই। সরকারই চা শ্রমিকদের সাধারণ ছুটির বাইরে রেখেছে । আমরা কি করবো বলেন”।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ টি স্টাফ এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকারিয়া আহমেদ জানান, “দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল কলকারখানা খোলা রয়েছে, সেজন্যই বাগান খোলা রাখার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন বাগান মালিকরা। আমি চা বাগান বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি, কারন চা বাগানে শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে কমিউনিটির ভিত্তিতে বসবাস করে। এখানে করোনা ভাইরাসের সংক্রামন একবার ছড়িয়ে পরলে একে সামাল দেয়া খুবই কষ্টকর হবে।”।