ঘূর্ণিঝড় ফণী : সিলেটে বৃষ্টিপাত, হঠাৎ বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০১৯, ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটের উজানে ভারতের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা। আসামের বরাকের সঙ্গে নদী সংযোগ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে ওই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হলে সিলেটে পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে অতিমাত্রায় বৃষ্টি হলে ভূমি ধসেরও আশঙ্কা আছে। এ কারণে ফণী মোকাবিলায় সিলেটেও নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। বিভিন্ন উপজেলায় সকালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। তবে, বাহ্যিকভাবে সিলেটে ফণীর প্রভাব ততটা পড়বে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গতকাল সকাল থেকে সিলেটের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন।
হাওর ও পাহাড়ি এলাকাগুলোতে মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে।
সন্ধ্যার পূর্বপর্যন্ত সিলেটে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে, সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয়ের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকার কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে এরই মধ্যে উজান থেকে ঢল নামা শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে মেঘালয় থেকে ডাউকি, পিয়াইন, সারি, সুরমা ও কুশিয়ারা নদী দিয়ে উজান থেকে ঢল নামছে। রাতে বৃষ্টিপাত হলে আরো বেশি ঢল নামতে পারে। এতে করে পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিলেটের কানাইঘাটের লোভা ছড়া এলাকায় পানি বেড়ে বিপদ সীমার কাছাকাছি এসেছে। বুধবার লোভাছড়া এলাকায় নদীতে কাজ করার সময় এক শ্রমিক ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে। সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সিলেটে ঘূর্ণিঝড় ফণীর তেমন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ হতে পারে। টানা বর্ষণও হতে পারে।
ঝড়ের ক্ষতি যেমন বোঝায় তেমনটি হবে না বলে জানান তিনি। এদিকে, ফণীর মূল গতিপথ সিলেটের পাশ দিয়েই। ময়মনসিংহ অঞ্চল দিয়ে সেটি ফের প্রবেশ করবে ভারতে। অর্থাৎ ভারতের আসাম প্রদেশ দিয়ে যাবে ফণী। এ সময় আসামে বৃষ্টিপাত হলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এ ফণীর প্রভাব পড়বে। নদ-নদীর পানি বেড়ে ভাটি এলাকা তলিয়ে বন্যা দেখা দিতে পারে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফণীর প্রভাবে অতি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে নানা ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটসহ কয়েকটি উপজেলায় সচেতনামূলক মাইকিং করা হয়েছে। পাথরসহ মাছ উত্তোলনে যেতে শ্রমিকদের বারণ করা হয়েছে। উজানে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাটের নদীর পানি বেড়েছে। ঢল আসা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ কারণে আগে থেকেই এসব উপজেলার প্রশাসনকে সতর্ক রাখা হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফণী মোকাবিলায় ইতিমধ্যে সিলেটের প্রশাসন থেকে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও সচেনতামূলক মাইকিং করা হয়েছে।
পাহাড় ধসের আশঙ্কায় পাহাড়-টিলার পাদদেশে অবস্থানকারীদেরও টিলার পাদদেশ থেকে সরে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়ে কৃষক ও জনসাধারণকে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার লক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব আসার আগেই বোরো ধান কাটার জন্য কৃষকদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য কৃষি বিভাগসহ সবাইকে অনুরোধ করা হয় এবং সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট সবাই জনসাধারণকে সতর্ক থাকার ও শুকনা খাবার, কেরোসিন, মোমবাতিসহ দুর্যোগকালীন অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত রাখতে অনুরোধ করা হয়। আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বাদ জুমা সিলেটের সব মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা হয়েছে।