নগদের বিজ্ঞাপনে বাবার ‘শুধুই ব্যর্থতা’, সমালোচনার ঝড়
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০১৯, ৪:০৩ অপরাহ্ণ
বিনোদন ডেস্ক :
‘বাবা’ শব্দটি সন্তানের কাছে চিরন্তন আস্থার প্রতীক। এর সঙ্গে মিশে আছে স্নেহ আর ভালোবাসা। সন্তানের আস্থা টিকিয়ে রাখতে, সন্তানকে ভালো রাখতে বাবারাও প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু বাংলাদেশ ডাক বিভাগের টাকা লেনদেনের সেবা ‘নগদ’-এর বিজ্ঞাপনে তেমন দৃশ্যের দেখা মেলেনি। অনেকে বলছেন, বিজ্ঞাপনটিতে বাবাকে বার বার ‘অকর্মণ্য’ ও ‘ব্যর্থ’ প্রমাণ করে বাবার চিরন্তন স্বত্বাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হচ্ছে ডাক বিভাগের ‘নগদ’ সেবার এই বিজ্ঞাপন। জনপ্রিয় নির্মাতা অমিতাভ রেজার পরিচালনায় এতে মেয়ের চরিত্রে দেখা গেছে অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমিকে। আর বাবার ভূমিকায় আছেন অভিনেতা এজাজ বারী।
বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছোট্ট মেয়ের সব দায়িত্ব নেন বাবা। তাকে সামলাতে হয়েছে ঘর-সংসারও। মেয়ের কথা ভেবে বিয়েও করেননি তিনি। অফিস সামলে মেয়ের দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। তিনি যে প্রাণপন চেষ্টা করেছেন, তা বিজ্ঞাপনে ফুটে উঠেছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেয়ের চোখে বাবাকে দেখানো হয়েছে ‘ব্যর্থ’ হিসেবে। যেন মেয়ের প্রতি কোনো দায়িত্বই পালন করেননি বাবা। যতটুকু করেছেন, তাও ঠিকঠাক করতে পারেননি। পুরো বিজ্ঞাপন জুড়ে বাবার চোখে-মুখে অসহায়ত্বের ছাপ দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপনে মেয়ের মুখে বলতে শোনা যায়, ‘মায়ের মৃত্যুর পর আমার বাবা চেষ্টা করেছে আমার দায়িত্ব নিতে। কিন্তু কিছুই করতে পারে নাই। এমনকি সামান্য একটা কাজও। তার ওপর কখনোই ভরসা করা যেত না। তাই নিজের দায়িত্ব নিজেই নিয়ে নিলাম। এমনকি তার দায়িত্বটাও…’
বিজ্ঞাপনের শেষ দিকে দেখা যায়, ভাঙা পা নিয়ে বিছানায় বসে আছে মেয়ে। ফোন আসে বাবার। বাবা জানতে চান,কী হয়েছে মেয়ের। কথা শুনেই মেয়ে রেগে যায়। জানায়,পা ভেঙে একমাস ধরে টিউশন করতে পারছে না সে। সেমিস্টার ফি দেওয়ার আজই শেষ দিন। বিষণ্ন মন নিয়ে ফোন রাখেন বাবা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘নগদ’ সেবার মাধ্যমে মেয়ের মোবাইলে ৫০ হাজার টাকা পাঠান বাবা। শেষ মুহূর্তে বাবার কণ্ঠে শোনা যায়, এ পর্যন্ত তোর জন্য কিছুই করতে পারি নাই। সামনের দিনগুলোতে তোর সাথে থাকতে চাই রে মা। ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার পর ভুল ভাঙে মেয়ের।
বিজ্ঞাপনটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। করা হচ্ছে নেতিবাচক সব মন্তব্য। বিজ্ঞাপনটি দেখে একজন মন্তব্য করেছেন, সরকারের ডাক বিভাগের ‘নগদ’ প্রজেক্টের বিজ্ঞাপন দেখে সত্যিই হতবাক হয়ে গেলাম। বাবা নামক শব্দটির প্রতি সন্তানদের অনাস্থা তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বিজ্ঞাপনটি।
অন্য একজন লিখেছেন, ‘বিকাশ, রকেট এবং অন্যান্য সামগ্রির সার্ভিসের যে উত্থান হয়েছে তার বিপরীতে নগদের সুযোগ আছে একেবারে তৃণমূলে সেবা বিস্তৃত করার। একেবারে কিচ্ছু মাথায় না আসলেও দেশপ্রেমভিত্তিক একটা আবেদন বিজ্ঞাপনে থাকতে পারতো (ক্লাস নাইনের ব্যবসায় শাখার ছাত্ররাও নগদের জন্য প্যাট্রিওটিক স্টোরিলাইন লিখতে পারবে)। কিন্তু কিছুই হলো না। আমরা দেখলাম- এক ‘অকর্মণ্য’ বাবা এবং ‘স্বার্থপর’ মেয়ের সম্পর্কের পুণঃনবায়ন হচ্ছে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে। আর ঠিক ওখানেই নগদ বলছে ‘এভাবেই সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিতে এলো ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নগদ। এ কোন সম্ভাবনা? এ কোন দুয়ার?’
একজন লিখেছেন, ‘নগদ একটা বিজ্ঞাপন বানাইছে। এই বিজ্ঞাপন দেখে মনে হচ্ছে, এটি নির্মাণের সঙ্গে যারা আছেন তাদের বাবা কাছ থেকে এ রকম ব্যবহার পেয়েছেন। তার প্রতিফলন এ বিজ্ঞাপনে। যারা বিজ্ঞাপন বানাইতেছে তাদের মোটিভেশন দরকার।’
অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, ‘বাবার উপর ভরসা করা যায় না! এ রকম একটা বিজ্ঞাপন আমাদের গিলতে হচ্ছে!(গল্প লাগলে মাগনাই দিতাম। শত শত গল্প আছে আমাদের বাবাদের!)’
একজন লিখেছেন, ‘বাবাদের ছোট যারা করে তারা কীভাবে অন্যের সেবা করবে?
এবং সেবার মান কেমন হবে? এটা কি প্রচার পাবার জন্য এমন advertising করেছে নগদ? যাতে বেশি বেশি কথা ও প্রচার হয়। মূল্যবোধ না থাকলে নেগেটিভ মার্কেটিং দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না।’
একজন লিখেছেন, ‘বিজ্ঞাপন দেখে মনে হলো একজন বাবা শুধুই অপরাধী, বাবা নামের বটগাছের ছায়ার কোনো মূল্যে নেই, বাবা শুধুই টাকা দেওয়ার জন্য। বাবাদের ওপরে কি সত্যিই ভরসা করা যায় না?
বিজ্ঞাপনটি নিয়ে ফেসবুকে তীব্র সমালোচনা প্রসঙ্গে জানতে নির্মাতা অমিতাভ রেজাকে কয়েক বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভি করেননি। তবে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজ্ঞাপনটিতে মেয়ের ভূমিকায় থাকা অভিনেত্রী হিমি।
অভিযোগ অস্বীকার করে হিমি বলেন, ‘এই বিজ্ঞাপনে বাবাকে ছোট করে দেখানো হয়নি। বাবার প্রতি মেয়ের ভুল ধরনা ছিল, যা বিজ্ঞাপনের শেষে ভাঙে। বাবা তার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে রেখেছিল। মেয়ে তা জানতো না। পা ভেঙে মেয়ে যখন বসে ছিল,পরীক্ষার টাকা দিতে পারছিল না, ঠিক তখন বাবা তার গচ্ছিত টাকা মেয়েকে পাঠায়। বাবা কথা শুনে মেয়ে কেঁদেছিল এবং কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ছিল।’