বাবার সাথে প্রথম দেখা লাশ ঘরে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০১৭, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ
মো: গোলাম মোস্তফা :
আমি যখন ছোট তখন আমার বাবা থাকতেন দেশের বাহিরে। আমি মার সাথে থাকতাম, আমাদের শহরের বাড়ীতে। আমার বয়স তখন আট বছর, আমি মা কে প্রায় বলতাম? মা বাবা কোথায়? মা আমার প্রশ্নের উওর দিতেন না, আবার কখনো বলতেন তোর বাবা জাহাজে থাকে। তাই আসতে পারে না, মা খুব সুন্দর করে বলতো। আজ তোর বাবার গল্পপ বলবো। আমি সেদিন দিনের বেলা, সকল কাজ তাড়াতাড়ি সেরে ফেলি। কারন আজ রাতে মা, আমায় বাবার গল্প বলবেন। রাতে যখন ঘুমুতে যায়, তখন মা আমার পাশে বসে, বাবার গল্প বলা শুরু করে প্রায়।
আজ সেদিন, বাবার গল্প বলবে আজ মা। আমি মায়ের পায়ে মাথা রেখে শুয়ে আছি, মা আমাকে বাবার গল্প বলা শুরু করল। আমার বয়স যখন নয় মাস তখন বাবা জাহাজে যান, যাবার পর একমাস পর ফোন করেছিলো বাবা। এর পর আর কল করিনি মার কাছে, মা আমাদের পরিবারের সববকিছু নিজের হাতে সাজিয়ে রেখেছে, বাবার ঘর টি এখনো মা সাজিয়ে রাখে। মার বিশ্বাস, বাবা একদিন ফিরে আসবে। এতটুকু শুনার পর আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, সকালে মা আমায় বলছিলো। হিমেল তুমি রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলে, তাই বাকি গল্পটুকু শুনতে পারোনি। মাকে বললাম, মা আমার বাকি গল্প তুমি। তুমি থাকলে আমার জীবনের সকল গল্প থাকবে, এই কথা বলার পর, মা ঘরে চলে গেলেন। আমি নদীর পারে চলে আসলাম, সকালে নদীর পারে যখন আসি। তখন নদীর পানির সাথে কথা বলি, পানি হয়তো উওর দেয়না আমার কথার। তবে আমি পানির ভাষা বুঝে নেই। পানি আমার অনেক পছন্দ, এই মাঝে যে আমার বাবা ভেসে আছে। আমরা জানি না, বাবা কেমন আছে। হয়তো ভালো আছে, সবসময় দোয়া করি বাবা তুমি যেখানে থাকো ভালো থাকো। আমি মা, তোমাকে খুব মিস করি।
দুপুর হয়ে যাচ্ছে আজ বাড়ীতে আসলাম, মা কে বলে বের হয়ে গেলাম। আজ আমার মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার রেজাল্ট দিবে, রেজাল্ট দেখার সময় খুব ভয় করছিলো। যদি চান্স না পাই, তাহলে মা কষ্ট পাবে। নেটে রেজাল্ট দেখলাম আমি ঢাকা মেডিকেল চান্স পেয়েছি, তাড়াতাড়ি করে বাসায় আসলাম মাকে খবর টা দেওয়ার পর, মা কান্না করতে করতে বাবার রুমে চলে গেলো। আমি মার পিছন পিছন গেলাম, মাকে বললাম মা তুমি কান্না করলে আমার খুব কষ্ট হয়, মা আমার বুকে মাথা রেখে বলতেছিলো, তোমার বাবা আমায় বলেছিলো আমার ছেলে কে ডাক্তার বানাবে। আমি থাকি আর না থাকি, সে আজ কোথায় আমি জানি না। তবে তার স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে, আমি মা কে বললাম মা কাল কলেজে ভর্তি হতে যেতে হবে।
মা আমায় বললো আমি তোমার সাথে যাবো, কলেজে ভর্তি হলাম। তের দিন পর ক্লাস শুরু হলো, প্রথম দিন পরিচিতি ক্লাস ছিলো। এর বেশি কিছু হয়নি, তিন চারটি ক্লাসের পর আমরা লাশ কাটা রুমে গেলাম, ক্লাস করার জন্য। আমার বন্ধু ফাহিম বলছিলো লাশ টি কতত লম্বা দেখ, আমরা সকলেও তাই বললাম হে। স্যার রুমে প্রবেশ করলো, ক্লাস নেওয়ার সময় স্যার বলছিলো এই লাশটি জাহাজ থেকে আনা হয়েছে। এই কথা শুনার পর, স্যার কে আমি বললাম স্যার কিভাবে। স্যার বললো জাহাজে এই লোকটি মারা যান, লাশটিকে অনেক দিন পর এই ল্যাবে আনা হয়েছে।
আমি স্যার কে বললাম লোকটির বাড়ীর লোক জন্য খবর পেয়েছিলো , স্যার বললো না। চেষ্টা করেছি পায়নি, তার পর বেয়াওয়ারিশ লাশ হিসবে এটা কে ল্যাবে আনা হয়। ক্লাস শেষ, আমি ক্লাসের এই বিষয় মার সাথে শেয়ার করি, মা বার বার বলছিলো আমায় নিয়ে যাবি তোদের ল্যাবে। আমি মাকে বললাম নিয়ে যাবো, পরে দিন মাকে নিয়ে গেলাম ল্যাবে। স্যারের অনুমতি নিয়ে, লাশের রুমে প্রবেশ করার পর কেন জানি ভয় ভয় কাজ করছিলো। আমি মার হাত দরে আছি, লাশের কাপড় টা আমি নিজ হাত দিয়ে সরালাম। মাকে বললাম মা দেখ? মা আস্তে আস্তে লাশের কাছে আসলো, মুখের দিকে তাকিয়ে মা কেমন জানি চঞ্চল হয়ে গিয়ে ছিলো।
মা কিছু না বলে লাশের হাত পা দেখছিলো, মা কোন কথা বলছে না। চুপ করে আছে, বার বার মাকে বলছি মা মা তোমার কি হয়েছে। কথা বলো? মা জুরে চিৎকার দিয়ে বলছে হিমেলরে! এটা তোর বাবার লাশ, আমি কথাটা শুনার পর মাটিতে বসে পরি। মাকে বার বার জিজ্ঞাসা করছিলাম, মা তুমি ঠিক বলছো তো। মা আমায় গালে চর দিয়ে বললো,আমি আমার স্বামি কে চিনতে ভুল করবো। তুই কি করে বললি, আমি মার কথা শুনার পর। লাশের কাছে গেলাম, বাবা ও বাবা, তুমি লাশ হয়ে আছো কেন? দেখ আমি তোমার ছেলে হিমেল, মা বাবা শুনছে না। বাবা ও বাবা সেই ছোট বেলা রেখে চলে গিয়েছিলে, বাবাকে চিনার আগে তুমি চলে গিয়েছিলে জাহাজে।
আজ যখন এলে তখন বেয়াওয়ারিশ লাশ হয়ে, আমায় প্রথম দেখা দিলে। আমি মাকে নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ স্যারে সাথে সবকিছু বলি,কলেজ থেকে আমাকে বাবার লাশটি দিয়ে দেন, আমি আর মা লাশটি কে গাড়ীতে করে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে যাই। এর কিছু দিন পর, মা কে আমি বললাম মা। আমার কেমন কপাল আমার বাবার সাথে প্রথম দেখা লাশ ঘরে, মা কিছু না বলে চুপ করে আছে। রাত হয়ে গিয়েছে মা আমার রুমের লাইট বন্ধ করে চলে গেলেন। আমি ঘুমের মাঝে বাবা দেখার চেষ্টা করলাম…!
লেখক: মো: গোলাম মোস্তফা ( দুঃখু )
শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ,
পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।