মানসিকতাকে সংকীর্ণ করে দেয় ফেসবুক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০১৭, ৪:১৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
আপাতদৃষ্টে মনে হয় সামাজিক যোগাযোগ আমাদের জগৎকে বিস্তৃত করার অপার সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। এটা পরস্পরের ধ্যান-ধারণাকে যুক্ত করেছে। আর যোগসূত্র স্থাপন করতে সাহায্য করেছে ওইসব মানুষের সঙ্গে, যাদের হয়তো কখনোই খুঁজে পাওয়া যেত না। তবে নতুন এক গবেষণা বলছে ঠিক এর উল্টোটা। বলা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসলে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এটা মানুষের পূর্বধারণাপ্রসূত গোড়ামি সৃষ্টি ও চর্চার সুযোগ করে দিচ্ছে। তৈরি করছে ‘প্রতিধ্বনি কক্ষ’ (ইকো চেম্বার্স), যেখানে কখনো কখনো ভুল তথ্য ঘুরেফিরে আসছে বারবার। এটা যদি আপনার কাছে হতাশাব্যঞ্জক মনে হয়; এর কারণ হলো এটা আসলেই তা-ই। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত নতুন এই গবেষণা নিয়ে সিএনএনের খবরে এমনটাই বলা হয়েছে।
ডাটা মডেলিং ব্যবহার করে ইতালির একদল গবেষক দুই ধরনের কন্টেন্টের প্রচার পর্যালোচনা করেছেন। একটা হলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। অপরটি বৈজ্ঞানিক তথ্য। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি ব্যবহারকারীদের প্রধানত সুনির্দিষ্ট একটি ধ্যান-ধারণা সংশ্লিষ্ট কন্টেন্ট শেয়ার করার প্রবণতা থাকে। একই সঙ্গে প্রবণতা থাকে বাকি তথ্যগুলোকে উপেক্ষা করার। বিশেষ করে আমরা দেখিয়েছি যে, কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেয়ার প্রাথমিক প্রভাবক হলো সামাজিক সমজাতীয়তা। আর এর নিয়মিত ফল হলো সমজাতীয়, মেরূকরণকৃত তথ্যের সমষ্টি গড়ে ওঠা।’
সহজে বলতে গেলে, আপনি ও আপনার সব বন্ধু একই বিষয়াদি শেয়ার করছেন; সেগুলো অর্থহীন হলেও। কেননা, আপনাদের চিন্তাধারা একই রকম আর আপনাদের শেয়ার করা সুনির্দিষ্ট ধ্যান-ধারণার পরিধির ভেতর নতুন কিছু বা চ্যালেঞ্জিং কিছু প্রবেশ করতে পারে না।
এ গবেষণার একজন সহ-রচয়িতা আলেসান্দ্রো বেসি। তিনি ইউনিভার্সিটি অব দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ইনফরমেশন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের একজন পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক। বেসি বলছিলেন, তাদের এই গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ভুল তথ্য ইন্টারনেটে কেন ও কিভাবে ছড়ায় তা খতিয়ে দেখা। তিনি জানান, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম ‘ম্যাসিভ ডিজিটাল মিসইনফরমেশন’কে আধুনিক সমাজের অন্যতম প্রধান হুমকি হিসেবে তালিকাভুক্ত করার পর তাদের গবেষণা দলটি এ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
সিএনএন’কে বেসি বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে ব্যবহারকারীদের ওইসব তথ্য খোঁজার, ব্যাখ্যা করার এবং ফিরে দেখার প্রবণতা রয়েছে, যা তাদের বিদ্যমান বিশ্বাসকে সমর্থন করে বা নিশ্চিত করে। এটাকে বলে ‘কনফারমেশন বায়াস’। বেসি বলেন, কন্টেন্ট শেয়ারের পেছনে অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা হলো এই পূর্বধারণাপ্রসূত বিশ্বাস। কাজেই, কোনো তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করা কন্টেন্ট বা নতুন কোনো তথ্য শেয়ারের পরিবর্তে সামাজিক গ্রুপের মধ্যে ইতিমধ্যে গৃহীত এক ধারণা নিয়ে কন্টেন্ট শেয়ার করার সম্ভাবনা বেশি থাকে ব্যবহারকারারীদের। নিজের ধারণাকে আরো জোরালো করা, ওই ধারণায় সম্মতি দেখতে পাওয়াটাই থাকে লক্ষ্য। এর অর্থ হলো ভুল তথ্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রচার হতে পারে। বেসি আরো বলেন, ‘আমার অবশ্য দেখেছি ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মতো দাবিগুলো শুধু ওইসব ব্যবহারকারীর ‘ইকো চেম্বারে’ প্রচার পায়, যারা সাধারণত বিকল্প সূত্রের তথ্যকে সমর্থন করে। অবিশ্বাস করে মূলধারার সংবাদকে।’
আপনি ভুল তথ্য এড়িয়ে যেতে পারেন বলে গর্ববোধ করলেও এবং অনলাইনে উন্মুক্ত আলোচনায় নিজেকে খোলা মনের মনে করলেও মি. বেসি সতর্ক করে বলেছেন, কিছু মাত্রায় আমরা সবাই ‘কনফারমেশন বায়াসের’ (পূর্বধারণাপ্রসূত বিশ্বাস বা গোড়ামি) শিকার।
বেসি বলেন, আমরা যদি এমন কিছু দেখি যেটা আমাদের ধ্যান-ধারণাকে সমর্থন করে, আমাদের সেটাতে লাইক দেয়া ও শেয়ার করার প্রবণতা থাকে। তাছাড়া, অনেক সময় আমাদের বোধশক্তিগত সামর্থ্য, মনোযোগ ও সময় সীমিত থাকে। এটা অসংযত শেয়ারিংয়ের কারণ হতে পাবে- অনেক সময় আমরা কোনো কিছু পর্যালোচনা না করেই শেয়ার করে থাকি। বেসি বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, আমি হয়তো একটি কন্টেন্ট শেয়ার করবো ওটা আমার কোনো একজন বন্ধু শেয়ার করেছে বলে, যাকে আমি বিশ্বাস করি। আর যার অভিমত আমার সঙ্গে মেলে।’
এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী তা বলতে গিয়ে আলেসান্দ্রো বেসি বলেন, ভবিষ্যতে হয়তো ভুল তথ্য শনাক্ত করে নির্মূল করার প্রোগ্রাম বা অ্যালগরিদম তৈরি হবে। আপাতত তথ্য শেয়ার করার আগে যার যার জায়গা থেকে ব্যক্তিগতভাবে তথ্য যাচাই করার পরামর্শ দেন তিনি।