মৌলভীবাজারে ফের টার্গেট কিলিং, আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ৪:০৭ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজার শহরের শমশেরনগর রোডের সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকার এফ রহমান ট্রেডিংয়ে এখনো রক্তের দাগ। বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিজ দোকানে নিহত হন ব্যবসায়ী শাহ ফয়জুর রহমান রুবেল (৫৪)। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ৩টি ‘কু্ল’ থাকতে পারে বলে পরিবারের লোকজন ও স্বজনরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। গত কয়েকদিন থেকে রুবেল বেশ দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন বলেও জানান তারা। রুবেলের গ্রামের বাড়ি জেলার কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে। তিনি শহরের শ্যামলী রোডে নিজস্ব বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন। ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে রুবেল ৪র্থ। তার ছেলে শাহ তৌহিদুর রহমান সোহান অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও মেয়ে তওশী যুক্তরাজ্য প্রবাসী। রুবেল দীর্ঘদিন থেকে শহরের কুসুমবাগ, চৌমহনা ও শমশেরনগর রোড এলাকায় হার্ডওয়্যার, কাপড় ও মুদি ব্যবসা করে আসছেন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মৌলভীবাজার পৌরসভার সামনে একই কায়দায় হঠাৎ আক্রমণ করে হত্যা করা হয় তরুণ আইনজীবী মো. সুজন মিয়াকে। ওই ঘটনার কয়েক মাসের মাথায় ফের একই কায়দায় হত্যার শিকার হলেন ব্যবসায়ী রুবেল। এ ছাড়া সাংবাদিক শাহজাহান মিয়ার ওপর হামলাসহ বিগত কয়েক মাসে ঘটে আরও কয়েকটি হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে এমন হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সেদিন যা ঘটেছিল: ফয়জুর রহমান রুবেল প্রতিদিনের মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে ছিলেন। মাগরিবের নামাজের জন্য দোকানের পেছনের অংশে যান তিনি। এ সময় টার্গেট করে দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা করে। ধারণা করা হচ্ছে, তার দোকানের ভেতরে এক বা একাধিক দুর্বৃত্ত তার সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। তাকে মৃত ভেবে তারা পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার পর রুবেল বাঁচার জন্য সাহায্য চেয়ে চিৎকার করেন। এ সময় আশপাশের ব্যবসায়ী ও সিএনজি চালকরা এগিয়ে আসেন। তারা তাকে উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যা বলছে পরিবারের লোকজন: রুবেলের পারিবারের লোকজন জানান, তিনি প্রায় ৩-৪ বছর ধরে শ্যামলী রোডের বাসায় বসবাস করছেন। ওই বাসার জায়গা যার কাছ থেকে কিনেছিলেন তার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন ও জায়গার পরিমাণ নিয়ে বিরোধ ছিল। একাধিক বৈঠকেও তা মীমাংসা না হওয়াতে জায়গার মালিক সম্প্রতি তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাছাড়া তিনি স্থানীয় শ্যামলী মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেখানেও তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল। এ ছাড়া তার দোকানের সামনে সিএনজি রাখা নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো। গত কয়েকদিন থেকে রুবেল বেশ দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে এই তিনটি ‘ক্লু’ সামনে রাখছেন।
নিহতের শ্যালক কমলগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমন তরফদার ও ছেলে শাহ তৌহিদুর রহমান সোহান বলেন- জলজ্যান্ত একজন মানুষ প্রকাশ্যে নিজ দোকানে খুন হলেন, এটা মেনে নেই কীভাবে? আমাদের দাবি একটাই। ঘটনার নেপথ্যের কারণ ও খুনি চিহ্নিত করে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা। তারা জানান, প্রবাসী মেয়ে তওশী আসার পর শনিবার শ্যামলীতে জানাজা হবে। এরপর কুলাউড়ার গোবিন্দপুরে ২য় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে। মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী মাহবুবুর রহমান মানবজমিনকে জানান, পরিবার থেকে এখনো মামলা করা হয়নি। কাউকে আটক করাও হয়নি। তবে কি কারণে, কে বা কারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তা বের করতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
মানবজমিন








