৭ বছরেও শেষ হয়নি সুনামগঞ্জের পাটলাই সেতু নির্মাণের কাজ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২৫, ৫:২২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বহুল প্রত্যাশিত পাটলাই নদীর উপর নির্মাণাধীন ৪৫০ মিটার সেতুর তিন বছরের কাজ সাত বছরেও শেষ হয়নি। নির্মাণাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের ঢিলেমির ফলে সেতুর কাজ শেষ সময়ে এসেও থমকে দাঁড়িয়েছে। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ৮১.২৭ ভাগ টাকা তুলে নিয়েছে। এ স্বপ্নের সেতু নিয়ে বর্তমানে এলাকাবাসীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী বলেছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের ঢিলেমির কারণেই অতিরিক্ত সময়েও সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না। ২০১৮ সালে উপজেলার পর্যটন স্পট টাঙ্গুয়া হাওর, শহীদ সিরাজ লেক, শিমুলবাগান সহ ব্যবসায় এলাকায় গতি আনতে পাটলাই নদীর ওপর বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। এলজিইডি’র আওতাধীন এ সেতুর কাজ পায় তমা কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী, ৪৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টাকায় ৪৫০ মিটার সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের মধ্যে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঢিলেমির কারণে চার বছর অতিরিক্ত সময় পার হলেও এখনো শেষ হয়নি কাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার ৮৯৯ টাকা বিল তুলে নিয়েছে। ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তমা কনস্ট্রাকশনের প্রোপাইটর দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের মধ্যে এ সেতুর কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গত এক বছর আগে সেতুর মূল অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেতুর দু’পাশে এপ্রোচ সড়ক, কার্পেটিং, লাইটিংয়ের কাজ আটকে রয়েছে। আর কোনো সড়ক না থাকায় নদীর এপার-ওপারের মানুষ খুব কষ্টে চলাচল করছেন।
বালিয়াঘাট গ্রামের ইসলাম উদ্দিন বলেন, সেতুর মূল অংশের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। অল্প একটুর জন্য বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। মূল সড়কের সঙ্গে এপ্রোচ সড়কের সংযোগ দিচ্ছে না। কিছুদিন আগে পায়ে হেঁটে সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার হওয়া যেতো। কিন্তু এখন এপ্রোচ সড়ক খুলে রাখায় মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। দুধের আউটা গ্রামের কয়লা ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া জানান, কিছুদিন সেতুর ওপর দিয়ে এলাকার মানুষ চলাচল করেছেন। হঠাৎ এপ্রোচের মাটি খুলে রাখায় এখন মানুষ চলাচল করতে পারছে না। ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকা দিয়ে এখন মানুষ নদী পারাপার হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা থাকলে আরও আগেই এ সেতুর কাজ শেষ করা যেতো। সেতুর মূল কাজ শেষ, এখন যে কাজ আছে তা বেশিদিন লাগার কথা না। তবুও কাজ হচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তমা কনস্ট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার মিয়া মোহাম্মদ নাসির বলেন, ৫ই আগস্টের পরে প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর বিদেশ চলে গেছেন। এজন্য কাজ শেষ করতে একটু সময় লাগছে। আশা করি, কয়েক মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
তাহিরপুর এলজিইডি প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, পাটলাই নদীর ওপর ৪৫০ মিটার সেতুর মূল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেতুর দু’পাশে এপ্রোচ সড়কসহ কিছু ছোট ছোট কাজ বাকি রয়েছে। তিনি বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলে দেয়া হয়েছে, ঈদের আগেই সেতুর কাজ শেষ করার জন্য। তারা যদি এর মধ্যে শেষ করতে না পারে, তাহলে কাজ শেষ করে সেতু খুলে দেয়া হবে।