মৌলভীবাজারে নদীর উপর নির্মিত চার কোটি টাকার সেতু এখন জনগণের গলার কাঁটা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২:৫০ অপরাহ্ণ

সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
বড় বাজেটের বড় সেতু। কিন্তু পরিকল্পিত না হওয়ায় সেতুটি এখন উপকারভোগীদের চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী কালার বাজর সংলগ্ন নলু নদীর উপরে ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি’র নির্মিত সেতু এখন জনগণের গলার ফাঁস। স্থানীয় উপকারভোগীরা জানান, সেতুটি নিচু করে তৈরি করায় বর্ষা মৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে কৃষিপণ্যবাহী নৌকা, ট্রলার, বালুবাহী নৌকা ও মৎস্যজীবীদের নৌকা চলাচল করতে পারে না। যার ফলে সেতুটি এলাকাবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের অন্ত নেই। জানা যায়, মৌলভীবাজার এলজিইডি’র অধীনে ৪৬ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, সংযোগ সড়ক ও ছোট কালভার্ট নির্মাণ করতে ২০২০ সালে ‘ভেরিয়েশন কন্ট্রাক্ট’ মূল্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার ৩শ’ ৬৫ টাকা। কাজটি ২০২১ সালের ৮ই মার্চ শেষ হবার কথা থাকলেও পুনঃসংশোধন করে মেয়াদ বাড়িয়ে সমাপ্তির তারিখ দেয়া হয় ২০২২ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত। অতিরিক্ত প্রায় আড়াই বছর পর মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও নতুন কালভার্ট ও সংযোগ সড়কের কাজ এখনো চলমান। শেরপুর জেলার ধ্রুব মোশারফ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ করছে। বন্যাকবলিত এলাকায় নির্মিত মূল সেতুটি অনেক নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কাঁচা সংযোগ সড়কে নিচু করে মাটি ভরাট ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলমান।
এলাকাবাসী জানান, পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি এ সেতুটি নির্মাণ করার সময় স্থানীয় আ’লীগ নেতারা ও জেলা এলজিইডি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৗশলী মিলে সেতুর টাকা হরিলুট করে খেয়েছেন। দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ করে কোনো রকম নির্মাণকাজ শেষ করতে চেয়েছেন। তারা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে জেলার কয়েকজন (ঠিকাদার) জ্যেষ্ঠ নেতার প্রশ্রয়ে প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুলাহ দুর্নীতি করে অনেক টাকার মালিক হন। তার ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে। অর্থ ও পতিত সরকারের নেতাদের দাপটের কারণে এই সেতু নির্মাণে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগের কথা জানালেও তিনি পাত্তাই দেননি। বরং নকশার দোহাই ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোর খাটিয়ে সেতুটি নির্মাণ করে স্থায়ী দুর্ভোগে ফেলেছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উজানের বালুমহাল থেকে বালুভর্তি নৌকা নিয়ে মাঝিরা এই নদী দিয়ে কুশিয়ারা নদী হয়ে সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় তা বিক্রি করতেন। বর্ষায় কৃষকরা বোরো ধান বোঝাইসহ জেলেরা মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতেন। নিচু করে সেতু নির্মাণ করায় প্রায় ৩ বছর ধরে এ পথে নৌকা আসা-যাওয়া বন্ধ রয়েছে। সেতুটি নির্মাণের সময়ে আমরা নানাভাবে প্রতিবাদ জানালেও কোনো কাজ হয়নি। এই এলাকায় বেশির ভাগ দরিদ্র কৃষিজীবী ও মৎসজীবী পরিবার রয়েছে। যারা বর্ষা মৌসুমে নদীতে মাছ শিকারসহ প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেতুটি নিচু করে নির্মাণ করায় তাদের যাওয়া আসা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। সেইসঙ্গে বন্ধ হয়ে গেল এ নদী পথ ব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহের উপার্জন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মোশারফ (জেবি)’র প্রতিষ্ঠানের এক সহযোগী গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, প্রকৌশলী যেভাবে ডিজাইন দিয়ে কাজের অনুমোদন দিয়েছেন আমরা সেভাবেই কাজ করেছি।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, অন্য অভিযোগসহ দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয়। সেতুটি ডিজাইন অনুযায়ীই তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মানুষের আপত্তি উপেক্ষা করে কেনো নিচু করে সেতুটির নকশা করে নির্মাণ করা হলো। এখন উপকারভোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে করণীয় কি এমন বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।সুত্র-মানবজমিন







