সিলেটের হকার নিয়ে পুলিশ ও সিটির ঠেলাঠেলি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০২৫, ৯:১৩ অপরাহ্ণ
সিলেটের ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদ করবে কে? এ প্রশ্ন এখন নগরের মানুষের। সিটির কর্মকর্তা ঘুমে। পুলিশেরও গরজ নেই। ব্যবসায়ীরাও চিৎকার করছেন। আল্টিমেটাম দিচ্ছেন। কোনো কাজ হচ্ছে না। কোনো কথাই কানে যায় না হকারদের। উল্টো চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সড়কে কর্মসূচি পালন করে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে তারা। এই অবস্থায় সিলেটের ফুটপাথকে হকারমুক্ত করতে আল্টিমেটাম দিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ। তাদের সঙ্গে এসে যুক্ত হয়েছে সিলেট নগরের ব্যবসায়ীরা। তবে হকার উচ্ছেদে সিলেট সিটি কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের ঠেলাঠেলির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সিটি কর্তৃপক্ষ হকার উচ্ছেদের দায়িত্ব নিতে চান না। তাদের দাবি হচ্ছে- সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদ হবে কি না সে দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ আইন প্রয়োগ করলে কাজ হয়ে যাবে। পুলিশ বলছে, যত পুলিশ লাগবে সবই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ দেবে। ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে হকার উচ্ছেদ করতে সিটি উদ্যোগ নিতে পারে। দু’পক্ষের ঠেলাঠেলির মধ্যেও একটি কথা স্পষ্ট হয়েছে সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া সিলেটের ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। এখন সব পক্ষই হকারকে নিয়ে ইন্টারেস্টেড। টাকা উড়ছে ফুটপাথে।
প্রায় ৫ হাজার হকার ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছে ফুটপাথ। থানা, ফাঁড়ি পুলিশ, রাজনীতিবিদ, দালাল চক্র, ব্যবসায়ীদের একাংশ সবাই টাকা পায় এই ফুটপাথ থেকে। ফলে শেল্টার নিয়ে চিন্তিত নয় হকাররা। গত বছর নগরে ছিল নির্বাচিত পরিষদ। রমজানের আগে যখন ব্যবসায়ীরা আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন তখন নড়েচড়ে বসেছিলেন তৎকালীন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তিনি হকার্স মার্কেট মাঠকে প্রস্তুত করে হকারদের সড়ক থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। গত বছর রমজানের ঠিক আগের দিনই সড়ক ছেড়ে মাঠে চলে যায় হকাররা। পরে ঈদের দু’একদিন আগে অবশ্য তাদের সড়কে আসার সুযোগ দেয়া হয়। ৫ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর হকার্স মার্কেট মাঠ ছেড়ে সড়কে চলে আসে হকাররা। এখন গোটা সিলেট নগরের ফুটপাথই হকারদের দখলে। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। নতুন নতুন হকাররা এসে যোগ দিচ্ছে সড়ক দখলে। ২৮শে ফেব্রুয়ারি রাতে এক হকারকে অপহরণ ও মুক্তিপণের প্রতিবাদে সড়কে দুই ঘণ্টা অবস্থান করেছিলেন ভাসমান হকাররা। এ সময় তারা অভিযোগ করেছেন, ফুটপাথে বসতে তাদের ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই টাকা কারা নেয় প্রশ্নের জবারে হকাররা জানান- পুলিশ, রাজনীতিবিদ, সিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার কাছেই যায় এই টাকা।
টাকা না দিলে নির্যাতন করা হয় হকারদের। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার মহাসচিব ও সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন জানিয়েছেন, ‘হকারদের দাবির প্রেক্ষিতে সাবেক সিসিক’র তৎকালীন মেয়র হকার পুনর্বাসনের জন্য লালদিঘীর পাড়ে জায়গা বরাদ্দ দেন। ফুটপাথ ও রাস্তায় না বসার জন্য এই পুনর্বাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও সেখানে হকাররা না গিয়ে রহস্যজনক কারণে ফুটপাথ দখল করে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন তারা। এখন পর্যন্ত সড়ক তাদের দখলে। সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান, আইনেই আছে সড়ক, ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখবে পুলিশ। এটা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা থাকলেও মাঠের কর্মকর্তাদের কারণে সেটি সম্ভব হয় না। আগে হকাররা বিকল্প জায়গার কথা বলতো। এখন আমরা বিকল্প জায়গা দিলেও তারা সরে যায় না। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, নগর কর্তৃপক্ষের কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। তারা যত পুলিশ চাইবে আমরা দেবো।
যখন যত লোকবল চাওয়া হয়, তখন তা দেয়া হয়। তবে সম্মিলিতভাবে পুলিশ, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সিটি করপোরেশন সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিলে দ্রুতই ফুটপাথকে হকারমুক্ত করা সম্ভব বলে জানান তিনি। এদিকে, সিলেট নগরের ফুটপাথকে হকারমুক্ত করতে সচেতন নাগরিক সমাজের আল্টিমেটামের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে সচেতন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্টদের কাছে স্মারকলিপি দেবেন। এতেও কাজ না হলে তারা আন্দোলনে নামবেন বলে জানান। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ নগরীর প্রতিটি মার্কেট, বিপণিবিতান ও দোকান মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তারা যেন তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা থেকে ভাসমান হকারদের উচ্ছেদ করেন। কোনো অবস্থাতেই যেন হকাররা ফুটপাথ, রাজপথ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে পসরা সাজাতে না পারে। সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়েছেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো সেই পুরনো অবস্থায় ফিরে আসে ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা। আরেক সাবেক মেয়র ফুটপাথ থেকে এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের লালদিঘীর পাড়ে জায়গা দিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়ার পরও অদৃশ্য শক্তির বলে তারা পুনরায় ফিরে এসে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা শুরু করে। যদি তারা ফুটপাথ থেকে না উঠে তাহলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে সিলেটের ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের নাগরিকরা।