হকাররা সড়কে আসায় সিলেট নগর যে সংকটে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩:৪৫ অপরাহ্ণ
বৃহস্পতিবার সিলেট নগর কয়েক ঘণ্টার জন্য থমকে গিয়েছিল। বন্দরবাজারে ব্যবসায়ী ও অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিকরা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে জড়ান। এতে যেমনি দোকান ভাঙচুর করা হয়, তেমনি কোর্ট পয়েন্টে স্ট্যান্ডে থাকা সিএনজি অটোরিকশাও ভাঙচুর করে সড়কে ফেলা দেয়া হয়। পুলিশ আসে বহু পরে। এ কারণে সংকট তীব্র হয়েছিল। নগরের বিভিন্ন স্থানে সিএনজি অটোরিকশার চালকরা সড়কে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা করেন। এতে করে ঘণ্টা খানেকের উপরে অচলবস্থা দেখা দেয় নগরে। হস্তক্ষেপ করেন সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। রাতে এ নিয়ে বৈঠক হলেও কোনো সূরাহা হয়নি। সিলেট নগরে কেন এই সংকট। বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন অনেকেই।
তবে, হকার সমস্যার কারণে নগরে সংকট আগের মতো তীব্র দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে নগরের কার্যক্রম চলছে প্রশাসক দিয়ে। সিটি কাউন্সিলররাও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না। নগরের বন্দরবাজারে সিটি করপোরেশনের পাশেই রয়েছে সিটি করপোরেশনের মার্কেট। এ মার্কেটের সামনে যে সড়কটি রয়েছে সেটি এখন হকারদের দখলে।
নগরের শাহপরান, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমা থেকে আসা সিএনজি অটোরিকশার চালকরা যাত্রী নিয়ে আসেন ওই এলাকায়। যাত্রী নামাতে তারা মার্কেটের সামনেই সিএনজি অটোরিকশা দাঁড় করান। সড়কটি ফের হকারদের দখলে যাওয়ায় সিএনজি অটোরিকশা চালকরা রাস্তার মাঝখানে, কখনো কখনো ডানপাশে গিয়েও যাত্রী নামিয়ে দেন। আর সিটি করপোরেশনের সামনে দক্ষিণ সুরমার সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড থাকার কারণে সামনে চালকরা যেতে পারেন না। এতে করে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এতে করে মার্কেটের ভেতরে ক্রেতাদের ঢুকতে ও বের হতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বৃহস্পতিবার রাতে সমঝোতা বৈঠকের সময় জানিয়েছেন, মার্কেটের সামনে হকার ও অটোরিকশা চালকদের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগেই থাকে। বর্তমান সময়ে এ সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
এনিয়ে প্রতিবাদ জানালে ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। সিলেট নগরে হকার সমস্যা দীর্ঘদিনের। নগরের ফুটপাথ দখল করে হকাররা ব্যবসা করছে।এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে ছিলেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা।
বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ক্ষমতা গ্রহণ করে নগরের হকার সমস্যা সমাধানে অসাধ্য কাজকে সাধন করেছিলেন সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি হকার মার্কেট মাঠকে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করে মাটি ভরাট করেন। গত রমজানের আগে তিনি হকারদের ফুটপাথ থেকে তুলে সেখানে পুনর্বাসনও করেছিলেন। ৫ই আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। হকাররা মাঠে বরাদ্দকৃত জায়গাতেই ব্যবসা করছিলেন।
কিন্তু পট-পরিবর্তনের পর মাঠে থাকা হকারদের একাংশ দায়িত্বে থাকা হকার নেতা আব্দুর রকিবসহ অন্যদের উপর চড়াও হয়। তারা রকিবকে বহিষ্কার করা ছাড়াও তার নামে মামলাও করেন। এতে নিয়ন্ত্রহীন হয়ে পড়েন মাঠে থাকা হকাররা। এরপর ওই মাঠ থেকে হকাররা বেরিয়ে সামনের রাস্তায় চলে আসে। এখন পূর্বের মতো নগরের ফুটপাথ ফের হকারের দখলে গেছে।
জলে গেল সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উদ্যোগ। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের সামনে থেকে লালদীঘির পাড় গলির মুখ পর্যন্ত সড়ক দুপুরের পর থেকেই চলে যায় হকারদের দখলে। এখানে এখন কেবল সবজি বিক্রেতারাই নয়, মাছ, শুঁটকিসহ অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা বসছেন। এতে করে সড়কটি ফের বেদখল হয়ে গেছে।
বন্দরবাজারের অটোরিকশার পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, নগরের কয়েকটি এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে এসে তারা ওখানেই নামিয়ে দিয়ে থাকেন। যাত্রীর সুবিধার কথা বিবেচনা করেই তারা ওই সড়কে কিছু সময়ের জন্য সিএনজি অটোরিকশা থামান। এরপর তারা হয় কোর্ট পয়েন্ট, নতুবা মধুবন সুপার মার্কেটের সামনে চলে আসেন।
সম্প্রতি হকার বসার কারণে সংকট তীব্র হয়েছে। যানজট লেগে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা তাদের মার্কেটের সামনে হকারমুক্ত করলেও আর যানজট লাগবে না। কিন্তু সেটি না করে তারা পরিবহন শ্রমিকদের উপর দোষারোপ করছেন। এজন্য বৃহস্পতিবার অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় রাতেই সার্কিট হাউসে ব্যবসায়ীসহ পরিবহন শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডিসি ট্রাফিক বিএম আশরাফউল্লাহ তাহেরও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধান না আসায় ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। এতে পুলিশ প্রশাসন, ব্যবসায়ী সংগঠন এবং পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের ৫ জন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা সংঘর্ষের বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে বুধবার অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে তথ্য উপস্থাপন করবেন এবং এর ভিত্তিতে বিষয়টির সমাধান করা হবে।