‘টাকার কষ্টে আছি, এরপরও শান্তি মাকে নিয়ে আছি’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ আগস্ট ২০২২, ৭:৫৮ অপরাহ্ণ
সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন রনি দাশ। বয়স ত্রিশ পেরিয়েছে, এখনো বিয়ে করেননি। টাকা জমাচ্ছেন, কিছু টাকা জমলেই বিয়েটা সেরে ফেলবেন। লাজুক হাসিতে তিনি এমনটাই জানালেন। কথায় কথায় ওঠে এল তাঁর দুঃখ-সুখের নানা কথা।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার মামুদনগর গ্রামে রনিদের বাড়ি। মামুদনগর বাজারে ঝাল মুড়ি, চানাচুর আর আচার বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে তাঁর বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। লাভ খুব বেশি থাকে না। রনির ষাটোর্ধ্ব মা রীনা রানী দাশ বাড়িতে ছোট একটি মুদি দোকান চালান। মা-ছেলের সামান্য আয়েই দুজনের সংসার চলে।
রনি বললেন, তিনি যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, তখন তাঁর বাবা মারা যান। এরপর অর্থকষ্টে তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের হাল ধরতে রনি মুদির দোকানে কাজ নেন। সর্বশেষ ইটনা উপজেলার ধনপুর বাজারে একটি মুদি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে তিনি বাড়ি ফেরেন।
রনির ভাষ্য, করোনায় হঠাৎ বেকার হয়ে পড়লে তাঁর পরিবার বেকায়দায় পড়ে। হাতে টাকা-পয়সা নেই। এ অবস্থায় সুনামগঞ্জের জয়নগরে মামার বাড়িতে যান। সেখানে মুড়ি, চানাচুর ও আচার তৈরি এবং বিক্রির বিষয়ে একজনের কাছে হাতেকলমে শেখেন। এক বছর আগে নিজেই মামুদনগর বাজারে ভ্রাম্যমাণ দোকান চালু করেন। এর পর থেকে তিনি মুড়ি, চানাচুর ও আচার বিক্রি করে আসছেন। ক্রেতারা ৫ টাকা থেকে ১০ টাকার চানাচুর ও আচার কিনে থাকেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার বিকেলে মামুদনগর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ একটা ভ্যানে এক টিন মুড়ি আর এক ডিব্বা চানাচুর রাখা। দুটো ছোট-বড় বালতিতে আচার রাখা আছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী একটা প্লাস্টিকের মগে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ আর সালাদ দিয়ে চানাচুর এবং মুড়ি তৈরি করে দিচ্ছেন রনি। ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে এসব কিনে খাচ্ছেন। এ ছাড়া আচার ও আমড়াও বিক্রি করেন তিনি।
রনি দাশ বলেন, ‘কোনো রকমে চলছি। বিয়ে করে সংসার চালানোর মতো ক্ষমতা এখনো হয়নি। তাই বিয়ে করতে পারছি না। রোজগার খুব ভালো না। এর মধ্যে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। টাকার কষ্টে আছি। এরপরও শান্তি মাকে নিয়ে আছি। এটাই বড় প্রাপ্তি।’