যৌবনে স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান, ২৬ বছর ঘরছাড়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ২:৩১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান চাঁন মিয়া। এরপর বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, বিভিন্ন স্কুলের বারান্দায় তার রাত কাটে। কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে কোনো রকমে জীবনের ২৬ বছর কাটিয়ে দেন তিনি। অভিমানের কাছে হার না মানা চাঁন মিয়া অবশেষে রোগ-শোকে আক্রান্ত হয়ে বার্ধক্যের কাছে হার মেনে পরিবারের কাছে ফিরেছেন।
চাঁন মিয়ার পুরো নাম মুকমুল ইসলাম। তার বাবা মহিদুল ইসলাম এবং মা অম্বিয়া খাতুন। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের খাজুরিয়া পাড়ার মন্ডল বাড়ির বাসিন্দা তিনি। সংসারে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
যৌবনে স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে ঘরছাড়া চাঁন মিয়া ২৬ বছর পর সামাজিক সংগঠন ‘সহায়’ এর তত্ত্বাবধানে বৃদ্ধ বয়সে বাড়ি ফিরেছেন।
গত ১০ ডিসেম্বর ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা থেকে চাঁন মিয়াকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান ‘সহায়’ এর সদস্যরা। চাঁন মিয়ার কোনো জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি।
গত বৃহস্পতিবার ‘সহায়’ এর সদস্যরা চাঁন মিয়াকে নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টটি নজরে আসে চাঁন মিয়ার স্বজনদের। তার স্বজনরা তখন ‘সহায়’ এর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিডিও কলে দেখে চাঁন মিয়াকে শনাক্ত করেন।
বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত চাঁন মিয়া দীর্ঘ এক মাস ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। গত শনিবার রাতে দীর্ঘ ২৬ বছর পর পরিবারের কাছে ফেরেন চাঁন মিয়া। এদিন বিকেলে তার পরিবারের লোকজন এসে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যায়।
চাঁন মিয়ার মেয়ে শানজু আক্তার জানান, ফেসবুকে ফেনীর সামাজিক সংগঠন ‘সহায়’ এর দেওয়া এক পোস্টে গত ১৩ জানুয়ারি তারা বাবার ছবি দেখে চিনতে পারেন। পরে মুঠোফোনে বাবার সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যরা আলাপ করে নিশ্চিত হন, তিনি বেঁচে আছেন।
চাঁন মিয়ার ছোট ভাই শাজাহান জানান, ১৯৯৬ সালে স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান তার ভাই। গত ২৬ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও তার সন্ধান পাননি।
‘সহায়’ এর প্রধান সমন্বয়ক মঞ্জিলা মিমি বলেন, বৃদ্ধ চাঁন মিয়াকে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সকালে অসুস্থ অবস্থায় ছাগলনাইয়া থেকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে চাঁন মিয়া স্ত্রীর সঙ্গে অভিমানের জের বহাল রেখে পরিবারের সদস্য ও বাড়ির ঠিকানা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তার দেওয়া আংশিক তথ্য দিয়ে সংগঠনের সহ-সভাপতি জুলহাস তালুকদার শেরপুরের বিভিন্ন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের খোঁজ নেয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ের তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় এবং তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. ইকবাল হোসেন জানান, চাঁন মিয়া বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগ ও মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ।