যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ, দুধের জন্য কাঁদছে ছোট্ট শিশু
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২১, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করার ১ ঘণ্টার মধ্যেই হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর আবাসিক এলাকার শ্বশুরবাড়িতে গৃহবধূ মাহমুদা আক্তারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে।
পুলিশ শুক্রবার দুপুরে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। মাহমুদা তিন দিন আগে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন। তিন বছর বয়সী তার আরেক পুত্রসন্তান রয়েছে। ঘটনার পর থেকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক।
জানা গেছে, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামের আবুল বাছির মিয়ার মেয়ে মাহমুদা আক্তার। চার বছর আগে হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মাকসুদ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে যৌতুক নিয়ে মাহমুদাকে নির্যাতন করতেন স্বামীসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। যে কারণে সম্প্রতি বাবার বাড়িতে চলে যান মাহমুদা। পরে সালিস বৈঠক করে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসেন।
এদিকে পুনরায় মাহমুদার সংসারে এলেও আগের মতোই নির্যাতন চলে তার ওপর। নিজের জীবনের শঙ্কা প্রকাশ করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় মাহমুদা তার ভাই ফয়সল মিয়াকে ফোন করেন। ভাই-বোনের কথা বলা অবস্থায় হঠাৎ মাহমুদা চিৎকার করে ফোন ছেড়ে দেন। পরে ফয়সল পুনরায় বোনকে ফোন দিলে তা বন্ধ পান। এ নিয়ে পুরো পরিবারে আতঙ্ক তৈরি হয়। এর ঘণ্টাখানেক পরেই এক আত্মীয় মুঠোফোনে জানান, মাহমুদা আর বেঁচে নেই। তিনি শ্বশুরবাড়িতে মারা গেছেন।
খবর পেয়ে রাতেই মাহমুদার বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে আসেন হবিগঞ্জ শহরে মাহমুদার শ্বশুরবাড়িতে। এখানে এসে জানতে পারেন, তার লাশ হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।
নিহতের ভাই ফয়সল মিয়া দাবি করেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় তার বোন তাকে মুঠোফোনে জানান, শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাহমুদাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করছেন। তিনি তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন ভাইয়ের কাছে। তার সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় হঠাৎ চিৎকার করেন মাহমুদা। সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ কেটে যায়। তিনি দাবি করেন, তার বোনকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করেছেন।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ বলেন, লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে কী করে মাহমুদার মৃত্যু ঘটেছে, পুলিশ তা তদন্ত করছে। এই গৃহবধূ গত সোমবার এক নবজাতকের জন্ম দিয়েছেন। ছোট্ট শিশুও মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার আগেই মায়ের মৃত্যু ঘটেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এদিকে গৃহবধূ গত সোমবার জন্ম দেয়া সেই ছোট্ট শিশুটিও দুধের জন্য কাঁদছে, এখন এই নবজাতকের জন্যেও অনেক চিন্তায় রয়েছেন স্বজনরা।