কোন পথে সিলেট?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২১, ৮:২২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
দিন কাটে যেমন-তেমন, সন্ধ্যা নামলেই বদলে যায় সিলেটের চিত্র। দিনের কোলাহল শেষে যখন নিরব হয় শহর, তখন কেবল কানে বাজে অ্যাম্বুলেন্সের করুণ ভিউগল, চোখে ভাসে বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের নিয়ে স্বজনদের দৌঁড়ঝাপ। গত প্রায় এক মাস ধরে সিলেটের চিত্র এমন।
হাসপাতালের বারান্দা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের ভেতরে জায়গা নেই। আইসিইউ সংকট তীব্র। অক্সিজেন সম্বলিত বেডও খুঁজে পাওয়া যায় না। যে কারণে সিলেটে বেড়েই চলেছে লাশের মিছিল। হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে চলছে সমান আর্তনাদ।
মঙ্গলবার রাতের ঘটনা। সিলেট শহরতলির কুচাই এলাকার আনসার আলীকে তার স্বজনরা মুমূর্ষু অবস্থায় যে কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করাতে সিলেট শহরে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এক হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে পাননি কোনো আইসিইউ বেড। পরে অনেক কষ্টে সিলেটের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল শামসুদ্দিনের সাধারণ ওয়ার্ডে আনসার আলীকে ভর্তি করান স্বজনরা।
আনসার আলীর শ্যালক সালাউদ্দিন শিপার জানান, গত দুদিন থেকে আমার দুলাভাইয়ের করোনা উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার দিকে অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে সিলেট নিয়ে আসি। কিন্তু একটি আইসিইউ বেড মিলছে না কোনো হাসপাতালে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে বিনীত অনুরোধ- সিলেটে লাশের মিছিল ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
এদিকে, সিলেটে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ ২০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে সিলেট বিভাগে করোনাক্রান্ত ২০ ব্যক্তি মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জনসহ সিলেট জেলাতেই মারা গেছেন ১৬ জন। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৩ জন ও হবিগঞ্জে ১ জন মারা গেছেন।
করোনায় চব্বিশ ঘন্টায় সিলেটে এতো মানুষের মৃত্যু এর আগে হয়নি। সর্বশেষ গত ২৮ ও ৩০ জুলাই মারা যান ১৭ জন করে।
সবমিলিয়ে সিলেট বিভাগে করোনায় মৃতের সংখ্যা এখন ৭৪৮ জন। তন্মধ্যে সিলেট জেলায় ৫৯৯ জন, সুনামগঞ্জে ৫৫ জন, মৌলভীবাজারে ৬১ জন ও হবিগঞ্জে ৩৫ জনের প্রাণ গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে সিলেটজুড়ে ৪৬৭ জন করোনা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই পরিস্থিতিতেও লকডাউনের শেষ দিকে এসে সিলেটে অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সিলেট। জীবিকা তাগিদে মানুষ বের হচ্ছে রাস্তায়। স্বল্প পরিসরে জীবিকা সচল রাখার প্রানান্তর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। লকডাউনেও সিলেটের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। ঈদের পর আশঙ্কাজনক হারে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হননি সিলেটের মানুষ। কিন্তু বুধবার (৪ আগস্ট) থেকে শহরে যানবাহন ও মানুষ চলাচল বেড়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে- সিলেটে করোনা সংক্রমণের হার ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার অর্ধেকেই হচ্ছেন শনাক্ত। গতকাল মঙ্গলবারও সিলেটে সংক্রমণের হার ছিলো ৩৮.৯০ শতাংশ। এমন পরিসংখ্যান কোনো ভাবেই স্বস্তি দিচ্ছে না সিলেটে। মৃত্যু ও শনাক্তের হার একই মাত্রায় থাকলে আগামী ১০ আগস্ট লকডাউন শেষ হয়ে গেলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে সিলেটে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও কোনো সুখবর দিতে পারছেন না। তাই সচেতন মহলের প্রশ্ন- কোন পথে এগুচ্ছে সিলেট?
সিলেট ভিউ