কুলাউড়ায় গৃহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য : পুলিশ বলছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে কারণ জানা যাবে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২১, ৭:৩০ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক গৃহকর্মী(১৪) এর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ির মালিক ব্যাংক কর্মকর্তা বলছেন, মেয়েটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা গেছে।
কুলাউড়া হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। মেয়েটির বাম চোখ ও থুতনিতে ক্ষত চিহ্ন এবং বাম পায়ের বুড়ো আঙলের নখ উপড়ানো ছিল। মুখ, বুক ও পায়ে আরও কিছু ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার কোনো মেডিকেল কাগজপত্র দেখাতে পারেনি অভিযুক্ত পরিবার।
পুলিশ বলছে, তারা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসলে প্রকৃত মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত হবে। গত ৯ জুন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে কুলাউড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কিশোরী গৃহকর্মী শিউলী আক্তার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার শওকতনগর গ্রামের বশির উদ্দিন ও সখিনা বেগমের মেয়ে। সে কুলাউড়া পৌর শহরের ভাঙ্গারিপট্টি এলাকায় সোনালী ব্যাংকের কুলাউড়া শাখার ক্যাশিয়ার আব্দুল সাকেরের বাসায় কাজ করতো । সাকেরের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর এলাকায়। তিনি ভাঙ্গারিপট্টি এলাকায় বহুতল ভবনের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিউলি বছরখানেক আগে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে সাকেরের বাসায় কাজ নেয়।
শিউলির মৃত্যুর বিষয়ে আব্দুল সাকের জানান, তিনি ও তার স্ত্রী গত ১৩ মে ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে যান। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখান থেকে তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আজমপুর রেলস্টেশনে আসেন। পথেই অটোরিকশা থেকে পড়ে যায় শিউলি। এতে সে আহত হয়। সেসময় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তারা সবাই কুলাউড়ায় চলে আসেন। বাসায় এসে আবার শিউলির চিকিৎসা চলে। গত ৯ জুন শিউলির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সে মারা যায়।
কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিবেদন বলছে, শিউলিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার বাম চোখ ও থুতনিতে ক্ষত চিহ্ন ছিল। বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখ উপড়ানো ছিল। মুখ বুক ও পায়ে আরও কিছু ক্ষত চিহ্ন থাকতে দেখা যায়।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সাকিয়া রিজওয়ানা বলেন, ‘ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই।’
হাসপাতালের আরএমও ডা. জাকির হোসেন বলেন, ‘অটোরিকশা থেকে শিউলি পড়ে গেল, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হলো। কিন্তু পরিবারটির কাছে এর কোনো কাগজপত্র নেই। শিউলির শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন আছে। যেগুলো সাধারণত এ ধরনের দুর্ঘটনার কারণে হয় না। টপ অব দ্য হেডে আঘাতের চিহ্ন আছে। এজন্য আমাদের সন্দেহজনক মনে হয়েছে।’
সোমবার সকালে ভাঙ্গারিপট্টি এলাকায় গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আব্দুল সাকেরের একাধিক প্রতিবেশী জানান, ঈদ শেষে ফেরার পর শিউলীকে সুস্থ দেখা যায়। দুর্ঘটনার বিষয়ে তারা কিছু জানতেন না। শিউলী প্রায়ই বিভিন্ন কাজে ছাদে উঠত। সেসময় তাকে বিষন্ন দেখা যেত। কারও সঙ্গে তেমন কথাবার্তা বলত না।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আঘাত পেলে কেন শিউলীকে সুচিকিৎসা করানো হলো না? নির্যাতনে এ মৃত্যু ঘটেছে কিনা, তার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন তারা।
তবে শিউলিকে কোনো ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গৃহকর্তা আব্দুল সাকের। তিনি বলেন, ‘শিউলী অটোরিকশা থেকে পড়ে গিয়েই আহত হয়।’
দুর্ঘটনার পর শিউলীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থাপত্র আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা ভুলে আনা হয়নি। বাসায় আনার পর শিউলীকে এক চিকিৎসক দেখেন। তবে ওই চিকিৎসকের নাম মনে করতে পারছি না।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানা পুলিশ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হয়। আর শিউলীর স্বজনরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।