ফুটপাত মুক্ত হলেও দখলে রাজপথ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৩:৪১ অপরাহ্ণ
এনামুল কবীর:
সিলেট মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফুটপাত দখলমুক্ত করার পর রাজপথ দখল হয়ে যাওয়ার চিত্র দেখে সচেতন নাগরিকদের মনে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে । এক দু’বার নয়, বরং বলা চলে বরাবর চলছে এই দখল দখল খেলা। প্রাণপণ চেষ্টার পর সম্প্রতি হকারদের দখল থেকে ফুটপাত মুক্ত করা সম্ভব হলেও রাজপথ আর মুক্ত হচ্ছেই না। সিএনজি অটোরিকশা চালকরা দিব্বি চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের দখলবাজি।
সিলেট মহানগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার লড়াই অনেক পুরানো। এমনকি এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রতি আদালতের বিশেষ নির্দেশনাও ছিল। সেই নির্দেশনার আলোকে ৩/৪ বছর ধরে চলছিল অভিযানের পর অভিযান। কিন্তু কোন ফল পাওয়া যাচ্ছিলনা। একদিকে চলতো অভিযান, আরেক দিকে হতো দখল। এমন কি, উচ্ছেদের পর ফেরার পথেই আবার দেখা গেছে বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা বা আম্বরখানার ফুটপাতে আবারও বসে পড়তেন ছোট ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যেও ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সবাই উচ্ছেদ বা ফুটপাত মুক্ত করার পক্ষে থাকলেও হকারদের পুণর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদের কারণে কারো কারো তোপের মুখে পড়তে হতো সিসিক কর্মীদের। এমনকি বছর দু’য়েক আগে মেয়র আরিফের উপর হামলার চেষ্টাও করেছিল হকাররা। শধুই কি ফুটপাত? তাদের দখলে থাকতো রাজপথের প্রায় অর্ধেক।
সম্প্রতি হকার নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনার পর তাদের লালদীঘিরপাড়ে পুণর্বাসন করা হয়েছে। প্রায় হাজারখানেক ভাসমান ব্যবসায়ীর ঠাঁই হয়েছে সেখানে। রাস্তাসহ ফুটপাত মুক্ত হয়েছে তালতলা পয়েন্ট থেকে সুরমা পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট বা কামরান চত্বর, কোর্টপয়েন্ট, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা থেকে একেবারে আম্বরখানা পয়েন্ট পর্যন্ত।
তবে হকারদের উচ্ছেদের কিছুদিন যেতে না যেতেই তালতলা ভিআইপি রোডের গণপূর্ত বিভাগের সামনা থেকে কোর্ট মসজিদ পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকেই দখল হতে শুরু করে। বসতে শুরু করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। শুরুর দিকে একটা দু’টা করে বসলেও এখন প্রতিদিন দুপুর ২টার পর থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানে ৩০ থেকে ৪০টির মতো অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের এই স্ট্যান্ডের অনুমতি কে দিয়েছে বা কোন অনুমোদন আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব নেই চালকদের। তাদের সাফ কথা, খালি পাইছি বইছি। এর বিপরীতে সুরমা টাওয়ারের সামনে প্রায় সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য মোটরসাইকেল। মাঝে মাঝে দু’একটা প্রাইভেট কারও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
অথচ মার্কেটের নিজস্ব আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবু এগুলো এখানে দাঁড়িয়ে কেন? প্রশ্নের জবাবে সুরমা টাওয়ারের নিরাপত্তা রক্ষীরা জানালেন, এদের পাওয়া যায়না। রেখেই চলে যায়। লীগর ফুয়াইনতো। একই অবস্থা তালতলার নন্দিতা সিনেমা হলের বিপরীতে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনের ফুটপাতের। সেখানে দাঁড়িয়ে একটা মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড। রাজপথ দখল করে প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে।
অনুমোদনের ব্যাপারে জানতে চাইলে জনৈক চালকের মন্তব্য, ‘অনুমোদন আবার কিতার? জনগনোর সুবিধার লাগিউ আমরা ইনো আছি।’ স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, ২/৩ বছর থেকে এখানে এই অবৈধ স্ট্যান্ড গজিয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনই কঠোর ভূমিকা না নিলে আগামীতে এটিও আরেক ‘চৌহাট্টা’ হয়ে উঠবে। ভিআইপি রোডের তালতলা অংশের মতোই জিতু মিয়ার পয়েন্ট থেকে রিকাবিবাজার পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশের ফুটপাত এবং রাজপথের প্রায় অর্ধেক দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, মুদি দোকানদার, কাঠমিস্ত্রি, লেপতোষক ব্যবসায়ী, ঠেলা বা অটোরিকশার শো-রুম ওয়ালারা। আর কোর্টপয়েন্ট থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত রিকশা চলাচল বন্ধ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও সারাদিন বিভিন্ন মার্কেটের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যন্য যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ফুটপাতের ফলওয়ালা ও পোশাক ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, আমাদের সরায়া দিয়া হেগোর দখলে যদি থাহে, তাইলে লাভডা কি অইলো? আমগো দোষডা কি?
এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইল নম্বরে কল দিলেও তিনি ধরেন নি। আর প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানালেন, অসুস্থতা ও তার মা’র মৃত্যুতে তিনি বর্তমানে ছুটিতে। জানালেন বিষয়টা তাদের নজরে আছে। এরা বসে যায়।
তাড়িয়ে দিলেও ফিরে আসে। তবে একটা ব্যবস্থা হবেই। সার্বিক বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ তৌফিক বক্স লিপন জানান, আগামী ৩ মার্চ সিটি কর্পোরেশনের সভায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষ করে নগরীর উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে তারা তাদের কর্তব্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবেন। তবে রাজপথ দখল করে থাকা অবৈধ স্ট্যান্ডগুলো উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবেনা বলে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছে সিসিক’র একাধিক সূত্র।সূত্র-শ্যামল সিলেট