সিলেটে পশুর হাট বসালেই কঠোর হবে প্রশাসন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অবৈধ পশুর হাট বসালেই কঠোর হবে প্রশাসন। নগরীর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কোথাও অবৈধ হাট বসতে দেয়া হবে না। একই সঙ্গে পশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি ও চামড়া চোরাচালানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিলেটের জেলা প্রশাসন ও মহানগর পুলিশ প্রশাসন গত দুই দিন সিলেটে পৃথক সভা করে এসব হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন আগে থেকেই সতর্ক। এবার সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীতে কোথাও কোনো পশুর হাট ইজারা দেয়া হয়নি।
এদিকে গতকাল পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল সিলেটে গরু আসা। নগরীর প্রধান পশুর হাট কাজিরবাজারে আসতে শুরু করেছে গরুর চালানও। গতকালও এসেছে কয়েকটি চালান। দামও অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে। হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লুলন গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেটের কাজিরবাজার পশুর হাটে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, ভৈরব, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, রংপুর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গরুর চালান আসে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গরু দিয়ে সিলেটের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এবারও ব্যবসায়ীরা সিলেটে গরু নিয়ে আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু তারা ভয় পান চাঁদাবাজি ও গরুর ট্রাক ছিনতাইয়ের। গত বছর দক্ষিণ সুরমা ও নয়াব্রিজের মুখ থেকে বেশ কিছু গরুর ট্রাক ছিনতাই হয়েছিল। পাশাপাশি গরুর ট্রাক থেকে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদাবাজি করা হয়। তিনি বলেন- ইতিমধ্যে তারা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে এসব কথা জানিয়েছেন। প্রশাসন থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারাও ব্যবসায়ীদের কাছে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। রোববার সিলেটের জেলা প্রশাসন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বিষয়ক বিশেষ সভা করেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক দেবজিৎ সিনহার সভাপতিত্বে সভায় জানানো হয়েছে- সিলেটের কোথাও যত্রতত্র গরুর হাট বসানো যাবে না। যারা হাট বসানের চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর গতকাল সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালেও বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেছেন, পাচার প্রতিরোধে প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া সিলেট থেকে কাচা চামড়া দেশের অন্যত্র নেয়া যাবে না। কারণ প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া কোরবানির চামড়া অন্যত্র নেয়া হলে তা পাচারের সম্ভাবনা থাকে বেশি। সে কারণে লবণজাতকরণের পর ঢাকায় নেয়া যাবে। সিলেটের ব্যবসায়ীদের যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হবে। ঈদুল আজহায় চাঁদাবাজি, নৈরাজ্য কোনো অবস্থাতে চলতে দেয়া যাবে না। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোবাইল টিম সহ বিভিন্ন বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারগণ ট্রাকে করে গরু আনার সময় চাঁদাবাজি সহ সকল ধরনের সমস্যা সমাধানে পুলিশ সবসময় তৎপর আছে। ঈদের সময় যানজট নিরসন সহ নগরীতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে পুলিশ। পুলিশ কমিশনারের হল রুমে সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ী, হাটবাজারের গরু ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি ও ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেন- সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে চামড়া পাচারের সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। কারণ ভারতের সীমান্তে কোনো ট্যানারি নেই বিধায় আখাউড়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে চামড়া পাচার হয়। কাজেই সিলেট থেকে আখাউড়া হয়ে যাতে চামড়া পাচার না হয়, সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি জোরদার করা প্রয়োজন। তারা আরো বলেন, সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা ঈদের দিন ঢাকা সহ দেশের কোনো জায়গায় চামড়া পাঠান না এবং যারা এ ব্যবসায় জড়িত তাদের সকলের আইডি কার্ড রয়েছে। আইডি কার্ড ছাড়া বহিরাগত কেউ চামড়া ক্রয় করলে তাদের প্রতি পুলিশ প্রশাসনের নজরদাার থাকা প্রয়োজন। তাহলে চামড়া পাচার রোধ সম্ভব হবে। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস.এম রুকন উদ্দিন, ডিসি হেড কোয়ার্টার রেজাউল করিম, এডিসি (মিডিয়া) জেদান আল মুসা, ডিসি নর্থ ও ডিসি সাউথ, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল থানার ওসি ও এসিগণ, র্যাব-৯, ডিজিএফআই, সিলেট সিটি করপোরেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।
এছাড়াও শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি শাহিন মিয়া, আইয়ুব আলী, নূর উদ্দিন, আব্দুল হামিদ, ছমির উদ্দিন, কাজিরবাজার গরুর হাটের ম্যানেজার লুলন মিয়া, লাক্কাতুরা গরু হাটের ইজাদার রিমাদ আহমদ রুবেল, ট্রাক-লরী, কাভার্টভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া সহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে কাজিরবাজার পশুর হাটের ম্যানেজার সাহাদাত হোসেন লুলন জানান- পশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য আমরা দক্ষিণ সুরমায় পুলিশি টহল জোরদার করার দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি কাজিরবাজার সেতু দিয়ে পশুবাহী ট্রাক চলাচলে অনুমতির আব্দার জানিয়েছি। প্রশাসন আমাদের কথা গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। – মানবজমিন