১০ বছর পর ফেসবুকে পরিচয় : আজমির শরিফে ছিলেন সিলেটের সেই বৃদ্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০১৭, ৫:৪০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
হারিয়ে যাওয়ার ১০ বছর পর প্রিয় বাবা আব্দুল খালেককে নিয়ে গতকাল শনিবার গভীর রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণবন্ধ ইউনিয়নের দক্ষিণবাগ দেওপাড়ার নিজ বাড়ি পৌঁছেছেন সন্তানরা। এরপর থেকে তাদের বাড়িতে চলছে আনন্দের বন্যা।
এছাড়া রোববার সকালে খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে লক্ষণবন্ধ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়া ৭০ বছর বয়সী আব্দুল খালেককে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছে শত শত মানুষ।
এসময় একে অপরের পরিচয় তুলে ধরছেন তার কাছে। প্রথম অবস্থায় কাউকে চিনতে না পারলেও পুরো পরিচয় জানার পর তিনি সবাইকেও চিনছেন। ১০ বছর আগে এলাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া এই মানুষটিকে নিয়ে গ্রামজুড়েই চলছে এক ভিন্নমাত্রার আনন্দ।
এভাবেই কাছে বাবাকে ফিরে পাওয়ার বর্ণনা দিলেন আব্দুল খালেকের দ্বিতীয় সন্তান বেলাল হোসেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বাইরে থাকার ফলে বাড়ির প্রতি যে মায়া কাজ করছিল সেটি প্রকাশ পেয়েছি গতকাল রাতেই। বাড়ির প্রতিটি ইট-পাথরের সঙ্গে তার স্মৃতি জড়িত। চার পাশে এত আপনজনকে কাছে পেয়ে তিনিও আনন্দিত।
বেলাল হোসেন বলেন, এখনো পুরোপুরি স্মৃতিশক্তি ফিরে পাননি তিনি। এতদিন কোথায় ছিলেন তিনি? উত্তরে জানালেন, বাবা কথায় কথায় হিন্দি বলছেন। মাঝে মাঝে জিকির করছেন। কখনো কখনো আজমির শরিফের কথা বলছেন। গত কয়েকদিনে হাসপাতালে বাবার সঙ্গে থেকে বুঝেছি দীর্ঘদিন তিনি ভারতের আজমির শরিফে ছিলেন।
তিনি জানান, পুরোপুরি স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে হয়তো আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে আগের চেয়ে তিনি অনেক সুস্থ।
একই কথা বললেন ওই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখলাসুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা এলাকার অনেকেই শুনেছি তিনি ভারতের আজমির শরিফে ছিলেন। সেটা তাকে খুঁজে পাওয়ার আগেই এলাকার অনেকের মুখে শুনেছি।
তিনি বলেন, উনি যখন হারিয়ে যান তখন আমি জনপ্রতিনিধি ছিলাম না। তবে তার হারানোর কথা শুনেছি। নিয়মিতভাবে সন্তানরা খোঁজ করেছে সেটাও দেখেছি। তবে হারিয়ে যাওয়ার সময় শুনেছিলাম পারিবারিক অশান্তি চলছিল। সেই অশান্তির কারণেই হয়তো তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে আব্দুল খালেককে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করেন রেজাউল করিম নামে এক যুবক। বিষয়টি তিনি ফেসবুকে জানান দিলে ডিএসই নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের সক্রিয় কর্মী হাসপাতালে এসে আব্দুল খালেকের সেবায় নিয়োজিত হন। দিনরাত প্রায় ৫০ জন তরুণ-তরুণী আব্দুল খালেকের সেবা করে সুস্থ করে তোলেন।
ইতোমধ্যে খবরটি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ায় আব্দুল খালেকের পরিবার ফেসবুকে তার ছবি দেখে চিনে ফেলেন। এরপর গত ৫ ডিসেম্বর আব্দুল খালেকের বড় ছেলে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে আসেন এবং তার বাবাকে চিনে ফেলেন। প্রথম অবস্থায় সন্তানকে চিনতে দেরি হলেও পরক্ষণেই চিনে ফেলেন। এরপর গতকাল শনিবার আব্দুল খালেককে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যান তার সন্তানরা।