২০১৬ : সিলেটে যত আলোচিত ঘটনা
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০১৭, ৬:২৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
আরিফুল হক চৌধুরী। গত এক বছর একেরপর এক মামলা থেকে জামিন পেলেও শেষ পর্যন্ত কারাগারে আছেন সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড হামলার মামলায়। আরিফ মুক্তি পাবেন, পাচ্ছেন বছরজুড়ে এমন আলোচনা ছিল সকল মহলে। আর হঠাৎ করেই এমসি কলেজ ক্য্যাম্পাসে হামলার শিকার হন কলেজ ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। এ ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করে সিলেটসহ পুরো দেশজুড়ে। জালিয়াতির মামলা রাগীব আলী ও তাঁর পুত্র আব্দুল হাই ও আত্মীয় মুস্তাক মজিদ গেল বছরেই গেছেন কারাগারে। তবে মামলা দায়েরের পর থেকেই বছরজুড়ে সিলেটের মানুষের মুখে-মুখে ছিলেন রাগীব আলী। রাগীব আলী ও তাঁর তিন ঘনিষ্ঠজন এখনো আছেন কারাগারে আর মামলা দুটি বিচারাধীন। মেয়রবিহীন সিটি কর্পোরেশনে ট্রেন্ডার নিয়ে জটিলতায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররা তালা দেন সিসিকের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার অফিস কক্ষে। এ ঘটনায় পাঁচ দিন অচল ছিল সিটি কর্পোরেশন। গেল বছরের আগস্ট মাসের চার দিনে সিলেটে আলোচিত তিন খুনের ঘটনা ঘটে। চার দিনের ব্যবধানে কাউন্সিলর শানুর স্বামী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী করিম বক্স মামুন ও লালাবাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী আজির মিয়াকে হত্যা করা হয়। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে শুরু হওয়া উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শেষ হয় গত বছরের মার্চের দিকে। তবে তার রেশ এখনো কাটেনি। আর বছর শেষ হয় পটকা মাছের বিষক্রিয়ায়। জৈন্তাপুর উপজেলায় বিষাক্ত পটকা মাছ খেয়ে একই পরিবারের পাঁচজন মারা যান। এ ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মুখর ছিল পুরো সিলেট।
খাদিজাকে হত্যার চেষ্টা : সিলেটসহ সারা দেশে বছরের আলোচিত ঘটনার অন্যতম হচ্ছে কলেজ ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে প্রকাশ্যে হত্যার চেষ্টা। গত ৩ অক্টোবর এমসি কলেজে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস কোর্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। প্রকাশ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে তাঁর উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাছলয়ের অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক বদরুল এ হামলা চালান। ধারালো চাপাতির আঘাতে খাদিজার মাথার খুলি ভেদ করে মস্তিষ্ক জখম হয়। পুলিশ ও জনতা ওই দিনই বদরুলকে আটক করেন। তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয় অনেক। সকল দলের নেতারাও এ হামলার বিচারের দাবিতে এক কাতারে শামিল হন। ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন খাদিজা। শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিকভাবে সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে পাঠান সাভারের সিআরপিতে। হামলার ঘটনার পরদিন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদি হয়ে শাহপরান থানায় হামলাকারী বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় বদরুলকে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। মামলার তদন্তে নেমে খাদিজাকে কোপানোর ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। বদরুল নিজেও অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। খাদিজাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় বদরুল আলমের বিচারিক কাজ শুরু করেছেন আদালত।
রাগীব আলীর বিচার শুরু : ২০১৬ সালে আলোচিত ঘটনার মধ্যে সাড়া জাগানো হচ্ছে স্বঘোষিত দানবীর রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আব্দুল হাই জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় কারাগারে যাওয়া। অবশ্য রাগীব আলী ও তাঁর পরিবারের ৬ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে রাগীব আলী ভারতে পালিয়ে যান। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তারাপুর চা-বাগানের হাজার কোটি টাকার ভূমি আত্মসাতের মামলায় আলোচিত ব্যবসায়ী রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আব্দুল হাইসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মাধ্যমে ওই মামলায় রাগীব আলীসহ অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরু করেন আদালত। এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি মামলায় ৬ জনের রিভিউ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। স্মারক জালিয়াতি মামলায় রিভিউ সাক্ষ্য দেন সিলেটের সাবেক জেলা প্রশাসক ফয়সল আলম ও সিনিয়র সহকারী সচিব ইমদাদুল হকসহ ৬ সাক্ষী। এ নিয়ে এ মামলায় ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
গত ১০ জুলাই আদালতে দুটি মামলার অভিযোগপত্র দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান। এরপর গত ১০ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ২৪ নভেম্বর ভারতে গ্রেপ্তারের পর রাগীব আলীকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ।
৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি ও ভূয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী। গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের এক বেঞ্চ তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। রায় বাস্তবায়ন করতে সিলেটের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী প্রশাসন বাগানের সম্পদ উদ্ধার কাজও করেছে।
মেয়র আরিফের কারাবন্দিত্বের দু’বছর : পরিবর্তনের সুর তুলে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর ম্যাজিকে উড়ে যান স্থানীয় আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। সিটি করপোরেশনের প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই নগরের অভিভাবকের দায়িত্বে থাকা কামরান বিশাল ব্যবধানে হার মানেন আরিফুল হকের কাছে। সব হিসেব নিকেশ উল্টে দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীই হন সিলেটের মেয়র। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর উন্নয়ন কাজ দিয়ে চমকে দিতে থাকেন নগরবাসীকে। একদম বিপরীত আদর্শের দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মনও জয় করে নেন তিনি। হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে আরিফুল হকের ছন্দময় জীবনে। সকল মামলা থেকে জামিন পাওয়া আরিফুল হক চৌধুরী সর্বশেষ আটকা পড়েন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলা মামলায়। এভাবেই জেলখানায় তাঁর কেটে গেছে দুটি বছর। গত ২৭ নভেম্বর সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় জি কে গউছ ও আরিফুল হককে। সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলা মামলায় সম্পূরক চার্জশিট গ্রহণ করে আরিফুল হক ও জি কে গউছকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। আরিফুল হক চৌধুরী এখন সে মামলাতেই কারাবন্দি আছেন।
প্রথমে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে সামনে উঠে আসে আরিফুল হকের নাম। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিনিয়র এএসপি মেহেরুন্নেছা পারুল তৃতীয় দফা সম্পূরক চার্জশিটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া (জি কে) গউছসহ নতুন আরো ১০ জনের সঙ্গে অভিযুক্ত হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরীকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তবে ঐ চার্জশিটে ত্রুটি থাকায় ৩ ডিসেম্বর তা সংশোধনের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সংশোধন শেষে ২১ ডিসেম্বর মেহেরুন্নেছা পারুল আবার আদালতে চার্জশিট জমা দেন। হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রশীদ আহমেদ মিলন সে চার্জশিট গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ৩০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আরিফুল হক চৌধুরী। আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শুরু হয় আরিফুল হকের কারাবন্দি জীবন। আদালতে চার্জশিট গৃহীত হওয়ায় ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে কারাবন্দি আরিফুল হককে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায়ই কিবরিয়া হত্যা সংশ্লিষ্ট বিস্ফোরক মামলায়ও আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন আরিফুল হক চৌধুরী। ২০১৫ সালের ১২ মে আরিফুল হক ও জি কে গউছসহ কারাগারে বন্দি থাকা অভিযুক্তদের বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা পারুল। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পয়লা জুন আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন। ১০ আগস্ট এ মামলায় হবিগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ৫ জানুয়ারি আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ আতাবুল্লাহ চার্জশিট গ্রহণ করেন।
পনেরো মাস বন্দি জীবন কাটানোর পর মাঝে ১৫ দিন মুক্তির দেখা পেয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। আরিফুল হকের নিজের এবং তার মায়ের অসুস্থতা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৬ সালের ২২ মার্চ বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মোহাম্মদ ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ কিবরিয়া হত্যা মামলায় ১৫ দিনের জামিন মঞ্জুর করেন। ২৭ মার্চ বিস্ফোরক মামলায় হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতও ১৫ দিনের জামিন দেন আরিফুল হককে। জামিন আদেশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছুলে ২৮ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায়ই মুক্ত হন আরিফুল হক। জামিনের মেয়াদ শেষে ১১ এপ্রিল সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজির হন আরিফুল হক। আদালতের বিচারক মকবুল আহসান তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারাগারে বন্দি থাকাবস্থায় নতুন আরো একটি মামলায় নাম আসে আরিফুল হকের। আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার বরখাস্ত হওয়া মেয়র জিকে গৌছকে এ মামলায় সংযুক্ত করতে চান তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি হবিগঞ্জ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার বসু দত্ত চাকমা। ২০ জুলাই সুনামগঞ্জের (দিরাই) আমলগ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে কারাবন্দি এ দুই মেয়রকে গ্রেনেড হামলা মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করেন তিনি। আবেদনটি শুনানির অপেক্ষায় থাকে।
এরই মাঝে আরিফুল হকের বিরুদ্ধে থাকা দুটো মামলার মধ্যে কিবরিয়া হত্যা ঘটনায় দায়ের হওয়া মূল মামলায় গত ৬ সেপ্টেম্বর আরিফুল হক চৌধুরীকে জামিন প্রদান করেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৮ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ সে আবেদন নাকচ করে দেন। অপরদিকে ১৩ নভেম্বর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আরিফুল হক চৌধুরীকে হত্যা সংশ্লিষ্ট বিস্ফোরক মামলায়ও জামিন দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদন পরদিনই খারিজ করে দেন চেম্বার জজ সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তবে দুটো মামলায় জামিন পেলেও দিরাইয়ের গ্রেনেড হামলা মামলায় হাজিরা থাকায় মুক্ত হতে পারেননি আরিফুল হক চৌধুরী।
পটকা মাছ খেয়ে ৫ জনের মৃত্যু : গত ৬ ডিসেম্বর পটকা মাছ খেয়ে বিষক্রিয়ায় জৈন্তাপুরে দুই শিশু ও মহিলাসহ ৫ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পটকা মাছ খেয়ে ওই দিন অসুস্থ হয়েছে আরো ১৩ জন। তাদের মধ্যে ৭ জনকে আশঙ্কাজনক থাকলেও চিকিৎসাসেবায় পরে তাঁরা সুস্থ হন। পটকা মাছ খেয়ে মৃত্যুবরণকারীরা হলেন, দরবস্ত উত্তর মাইল গ্রামের মুন্সি মিয়ার ছেলে আবদুর রহিম (৬০), আবদুর রহিমের ছেলে সুলেমান (২৫) ও লোকমান হোসেন (২০), স্কুলছাত্র রাহিন আহমদ (৮) ও মনি (১০)। ওইদিন সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, সিলেটের বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র বাসিন্দারা পটকাকে মাছ হিসেবে খেলেও এটি কোনো মাছ নয়। এটি বিষযুক্ত একটি জলজপ্রাণী। পটকার কানের কাছে গ্রন্থিতে বিষ থাকে। পটকা খেলে বিষক্রিয়া হতেই পারে। এটি খেলে কেউ মারাও যেতে পারে।
সিসিকের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার কক্ষে তালা : গত ১৬ অক্টোবর সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী, প্রধান প্রকৌশলী ও হিসাব রক্ষকের কক্ষের তালা দেন আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলররা।
মেয়র বিহীন সিসিকের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার কক্ষে তালা দেয়ায় ৫ দিন অচলই ছিল সকল কার্যক্রম। এ কারণে সেবা প্রত্যাশীদের পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়।
আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র থাকাকালীন গত বছর সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন লাল দিঘিরপার সিটি মার্কেট ভাঙার দরপত্র আহবান করা হয়। পরবর্তীকালে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সে সময় মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়। উচ্চ আদালতে রিটের শুনানি রায় সিসিকের পক্ষে আসে। কিন্তু সরকারদলীয় কয়েকজন কাউন্সিলর সমঝোতার মাধ্যমে ১ কোটি ৫ লাখ টাকায় এই কাজ নিতে চান। এ ঘটনা নিয়ে মূলত সিসিকের ওই তিন কর্মকর্তার কার্যালয় তালাবদ্ধ করা হয়।
রক্তাক্ত খুলিয়াটুলা : প্রতিশোধের মরণখেলায় মেতে ওঠে নগরীর খুলিয়াটুলার দুটি পক্ষ। একটি বিরোধের বলি হয়ে পাল্টাপাল্টি হামলায় প্রাণ হারান তিনজন। এক চোখ হারিয়ে জীবনৃ¥ত হয়ে আছেন আরো একজন। দেড় বছরে তাদের বিরোধে কয়েকবারই খুলিয়াটুলার পথ রক্তাক্ত হয়েছে। সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট শনিবার এ বিরোধের নির্মম বলি হন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুর স্বামী তাজুল ইসলাম। এর আগে ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে তাজুলের দ্বিতীয় ছেলে সোহানকে। একই বছর প্রতিপক্ষের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে আবারো হামলার শিকার হন কামাল আহমদ। এবার আর বাঁচতে পারেননি তিনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কামালকে মৃত ঘোষণা করেন। ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর তাজুল ইসলামের বড় ছেলে রায়হান ইসলামকে খুলিয়াটুলায় গরম দেওয়ানের মাজারের সামনে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে দুর্বৃত্তরা। তার চোখে ঢেলে দেওয়া হয় চুন। সেই জখম নিয়ে রায়হান যখন ভারতের হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তখনই খবর যায় বাবা তাজুলের মৃত্যুর। মাকে নিয়ে আহত অবস্থায়ই দেশে ফিরে আসেন রায়হান।
নগরে ব্যবসায়ী মামুন খুন : ২৩ আগস্ট নগরীর জিন্দাবাজারে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ব্যবসায়ী করিম বক্স মামুন (২২)। তাঁকে হত্যার প্রতিবাদে পুরো সিলেটের ব্যবসায়ীরা নামেন রাজপথে। আন্দোলন, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন করলেও আসামিরা আজও রয়েছে অধরা। করিম বক্স মামুন আহমদ জিন্দাবাজারের অ্যালিগেন্ট শপিং সিটির মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী।
লালাবাজারে আজিজ মিয়া হত্যা : ২১ আগস্ট শুক্রবার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজারে সন্ত্রাসীরা খুন করে ওষুধ ব্যবসায়ী মো. আজির মিয়াকে (৪৫)। তাঁকে হত্যার প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজপথে নামে দক্ষিণ সুরমার ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় মানববন্দন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়ভ
২১ আগস্ট শুক্রবার রাত সাড়ে দশটার দিকে বাড়ি ফেরার পথে লালাবাজার ব্রিজে হামলার শিকার হন আজির। আজির বিশ্বনাথ উপজেলার টেংরা গ্রামের মৃত মোফাচ্ছর আলীর ছেলে।
স্ত্রীর জিহ্বা কাটলেন স্বামী : গত ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সদর উপজেলার পশ্চিম দর্শা গ্রামে সুমা বেগমের পৈতৃক বাড়িতে যৌতুকের জন্য নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। স্বামী বেলাল ও তার দুই সহযোগী ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুমার জিহ্বা, বাঁ পায়ের শিরা কেটে দেয়। এছাড়ও বুকে গভীর জখম করে। পরে স্ত্রীর জিহ্বা ও পায়ের রগ কেটে দেওয়া স্বামী বেলাল আহমদ নিজেই আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। গত ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় সিলেট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে বেলাল। এসময় আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন । নির্যাতনের পরে গুরুতর আহত সুমা বেগমকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তিনি এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় পরদিন ১৬ ডিসেম্বর বেলাল আহমদ, তার দুই ভাই, মা ও অজ্ঞাত দুইজনকে আসামি করে জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর সকালে বেলালের মা জয়বুন্নেছা ও রাতে বেলালের মামাতো ভাই ফয়েজ মিয়া ও ভাগনে রেদওয়ানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন : ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে শুরু হওয়ায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূইয়ার অপসারণ দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন চলে প্রায় ৭ মাস। ২০১৬ সালের শুরু দিকে এ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের শিক্ষকরা। শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ আন্দোলন করেন। যা সিলেটের আলোচিত ঘটনার একটি ছিল। আলোচিত এ আন্দোলনের সময় অন্তত সাতজন শিক্ষক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হামলার শিকারও হন।