ব্রিটেনে বাঙালী এলাকায় ভোট জালিয়াতি : এখন ভোট কেন্দ্রে পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:১৯ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ ব্রিটেনে বাঙালী এলাকায় ভোট জালিয়াতি বন্ধে পরিচয় পত্র দেখানো বাধ্যতা মূলক করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এতদিন যাবত ব্রিটেনে ভোট কেন্দ্রে কোন পরিচয়পত্র দেখানোর প্রয়োজন ছিলনা। তবে এখন থেকে পরিচয়পত্র ছাড়া ভোট দেয়া যাবেনা । ২০১৮ সাল থেকে বার্মিংহাম এবং ব্রাডফোর্ড সহ প্রধানত দক্ষিণ এশীয় অধ্যুষিত এলাকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নতুন এই বিধি পরীক্ষামূলক-ভাবে কার্যকর করা হবে। ভোট দিতে যাওয়ার সময় ভোটারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং পাসপোর্টের মত ছবি সহ পরিচয়পত্র সাথে নিতে হবে।
এদিকে নতুন নিয়মের সামালোচনা শুরু হয়েছে বাঙালীদের মধ্য থেকে। অনেকেই এটিকে অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তারা এই আইনকে একই দেশে দুই নিয়ম বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন ব্রিটেন হচ্ছে বহুজাতিক বৈচিত্রময় একটি দেশ। যেখানে মানুষের প্রতি মানুষের আস্তা ও বিশ্বাস বিদ্যমান। কিন্তু ভোটের ক্ষেত্রে এই নতুন নিয়ম বাঙালীদের অন্যান্য জাতির কাছে আস্তাহীন জাতিতে পরিনত করবে।
তবে কেউ কেউ বলছেন সরকার ইমিগ্রেশন নীতিকে এখন আরো প্রসারিত করতে যাচ্ছে। শুধু ভোট প্রদান নয়, এনএইচএস এমনকি শিশুদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে পরিচয় পত্র বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
এদিকে ব্রিটেনের সংবিধান বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস স্কিডমোর বলেছেন, “নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর মানুষর আস্থা ধরে রাখার জন্য এটি জরুরী হয়ে পড়েছে।” ২০১৫ সালে লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির এক কেলেঙ্কারির সূত্র ধরে নতুন এই বিধি আসছে।
টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনীতিক লুৎফর রহমান। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নানা উপায়ে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। আদালতেও লুৎফর রহমান দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ঐ ঘটনার পরপরই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ভোট পদ্ধতি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিশন গঠন করেন। এক বছর ধরে কাজ করে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এরিক পিকলসের তত্বাবধানে ঐ কমিশন আগস্ট মাসে তাদের রিপোর্ট দেয়। লুৎফর রহমান। ভোট কেলেঙ্কারিতে ক্ষমতা হারিয়েছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক এই মেয়র।
রিপোর্টে খোলাখুলি ইংল্যান্ডের বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানী অভিবাসী এলাকায় নির্বাচনী অনিয়মের কথা বলা হয়। মন্তব্য করা হয় – “রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার বিবেচনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাকিস্তানী এবং বাংলাদেশিদের মধ্যে এই অনিয়ম জালিয়াতির বিষয়টি ইচ্ছা করেই অগ্রাহ্য করা হয়।” এরিক পিকলসের ঐ রিপোর্টেই ভোটারদের জন্য পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়। পোস্টাল ব্যালট অর্থাৎ ডাকে ভোট দেওয়ার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ভোটারদের ওপর চাপ বা হয়রানি বন্ধের জন্য ভোট কেন্দ্রগুলোর আশপাশে পুলিশ মোতায়েনের সুপারিশ করা হয়।