জন্মদিনের কেক নিয়ে মায়ের কাছে ফেরা হয়নি বাঙালি কিশোরের : দুর্ঘটনায় মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ৩:৩৪ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ পরের দিন জন্মদিনের পার্টি। ১৬তম জন্মদিনের জন্য আয়োজনটা একটু আলাদাই ছিলো। এরই অংশ হিসেবে দোকানে অর্ডার দেওয়া হয়েছে বিশাল কেইক। আগের দিন মা গেছেন দোকানে কেইকটি নিয়ে আসতে। বড় কেইক একা সামলাতে পারবেন না বলে ফোনে ডাকলেন ছেলেকে। সাইকেল নিয়ে ছুটলো ১৫ বছরের কিশোর নাদিম ইসলাম। কিন্তু মায়ের কাছে পৌঁছানো হলো না। বাড়ি থেকে আধা মাইল দূরে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় ছিটকে পড়লো সে। কেমডেনের মালডেন রোড আর কুইন্স ক্রিসেন্টের জংশনে প্যারামডিকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঠাঁই নিলো নাদিম। মর্মান্তিক এ ঘটনা গত শনিবার দুপুরের। দুপুর ২.৪০ মিনিট প্যারামেডিকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাদিমের স্বজনরা ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, নাদিমের মাতা সুলতানা বেগম পুত্র হারানোর শোকে মূহ্যমান। সারা পরিবার বিষাদগ্রস্ত। জানা গেছে, দোকানে ছেলের অপেক্ষা করে সুলতানা বেগম বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্ঘটনাস্থলে লোকজনের জটলা দেখে তিনি এগিয়ে গিয়ে দেখেন রাস্তার মাঝখানে জেব্রা ক্রসিংয়ে পড়ে আছে তারই পুত্র নাদিম। সাথে সাথে তিনি নিজেই সংজ্ঞা হারান। এখনো তিনি খাওয়া-দাওয়া করছেন না। স্বজনরা আরো জানিয়েছেন, নাদিম ছিলো মায়ের আদুরে ছেলে। সর্বদা হাসিখুশি, সদালাপী নাদিম অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসতো। সে ছিলো সকলের স্নেহের পাত্র। স্থানীয় রিজেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র নাদিম ইসলাম মায়ের সাথে কেমডেনের মিডল্যান্ড পার্ক রোডে বসবাস করতো। তাঁর পিতা ফখরুল ইসলাম নর্দাম্পটনে থাকেন। পত্রিকা’র সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, নাদিম ক্রিকেটের জন্য পাগল ছিলো। দশ বছর বয়সেই সে পবিত্র কোরআন শরীফের কয়েক পারা মুখস্ত করে। ঘটনার দিন দুপুর বারোটার দিকে ছেলের সাথে মোবাইলে শেষ কথা হয় তাঁর। ঐ সময় সে কেইক আনতে বাইরে যাচ্ছে বলে পিতাকে জানিয়েছিলো নাদিম।
নাদিমের রুহের মাগফেরাত কামনায় পরদিন রোববার স্থানীয় বায়তুল আমান মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া তার বন্ধু ও স্বজনরা দুর্ঘটনাস্থলে মিলিত হয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। মোমবাতি জ্বালিয়ে আর জন্মদিনের বেলুন উড়িয়ে নাদিমকে স্মরণ করছেন তারা। এদিকে, নাদিমের পিতা জানিয়েছেন, পোস্টমর্টেমের পর ইস্ট লন্ডনে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর নাদিমের মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে দাফন করবেন তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে নাদিমের রুহের মাগফেরাতের জন্য সকলের দোয়া কামনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে নাদিমের পৈতৃক নিবাস মৌলভীবাজার জেলার গয়গড় গ্রামে। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিশেষ করে দূর্ঘটনার সময় কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা একটি সাদা রঙের ভক্সল মক্কা গাড়ীর চালককে তথ্য দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ০২০ ৮৯৯১৯৫৫৫ নম্বরে ডিটেকটিভ কনস্টেবল চার্লি পুলিং-এর সাথে কথা বলা যাবে।