সুরমা নদীর তীর যেনো আবর্জনার স্তূপ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেট নগরীর বুক চিরে বয়ে চলা সুরমা নদীর তীর যেনো আবর্জনার ভাগাড়। নদীর তীরজুড়ে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। এতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহও।
গত কয়েকদিন সিলেটের সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকায় দেখা যায়, মাছিমপুর, কালিঘাট, তোপখানা, কাজিরবাজার, চাঁদনীঘাট, কদমতলী ঘাসিটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর তীরেই লোকজন আবর্জনা ফেলছেন। গৃহস্তালি ও দোকানপাটের বর্জ্য, পলিথিন, খাবারের উচ্ছিষ্টসহ সকল ধরণের ময়লাই ফেলা হচ্ছে নদী তীরে। তাদের ফেলা বর্জ্য সরাসরি গড়িয়ে পড়ছে নদীর বুকে। যেসব এলাকায় ময়লা ফেলা হচ্ছে এসব এলাকার নদীর তীর দিয়ে হাঁটাও দায়। নাকে রুমাল চেপে দুর্গন্ধ ধরে রাখা যায় না।
একদিকে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, অপরদিকে নদীতে গোসল করতে দেখা গেছে নদীতীরবর্তী এলাকার লোকজনদের। এতে পচা, ফোড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।
শুধু তাই নয়, আবর্জনার পাশাপাশি নদী পাড়ে গড়ে উঠা কলোনির পয়ঃনিষ্কাশনের বর্জ্যও ছাড়া হচ্ছে নদীতে। এতে যেমন দূষিত হচ্ছে পানি একইসাথে বিষিয়ে উঠছে আশপাশের পরিবেশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এভাবে বর্জ ফেলা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে বহুবার অভিযোগ করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে পরিবেশে অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান,নদীর এ চিত্র আমাকেও পীড়া দেয়। আমাদের অফিসটাও নদীর পাশেই। তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে। তারা চাইলে নদীর পানি দূষন রোধ ও আবর্জনা ফেলা হলে ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু তারা সেটি করছে না। তারা যদি ব্যবস্থা নেয় তাদেরকে আমাদের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা যাবে।
এ ব্যপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব বলেন, আমরা অনেক চেষ্ঠা করেছি। কিন্তু মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে না। তিনি বলেন,সবার আগে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। সচেতন হতে হবে। সচেতন হলেই আমাদের নদী রক্ষা করা সম্ভব। পরিবেশ অধিদপ্তরের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন,এটি তাদের দায়িত্ব। তারা এ ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে পারে।
কাজীরবাজার মৎস্য আড়তের পাশের কলোনীর বাসিন্দা রেহানা বেগম ও সুলতানা আক্তার বলেন, গোসলসহ গৃহস্থালির সকল কাজেই তারা নদীর পানি ব্যবহার করেন। বর্ষায় নদীর পানিতে তেমন দুর্গন্ধ থাকে না জানিয়ে তারা বলেন, ইদানীং নদীর পানি দিয়ে গোসল করার কারনে শরীরে চুলকায়। শিশুরা নানা ধরণের চুলকানি জাতীয় রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গত কয়েকদিন সুরমা পারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একেবারে বিবর্ণ হয়ে গেছে সুরমা। নদীর পানিতে ভাসছে অসংখ্য ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। নগরীর কাজীর বাজার মাছের আড়তে গিয়ে দেখা যায় ককশিট ভাসছে নদীতে। বাজারের সকল ময়লা আবর্জনা সরাসরি ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। মাছের খাঁচা, ককশিট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা ভেসে যেতে দেখা গেছে নদীর উপর দিয়ে। একইভাবে সিলেটের পাইকারী বাজার কালীঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে পিয়াজ রসুনের ময়লা আবর্জনা ভেসে যাচ্ছে নদীতে। কালীঘাটের সকল আবর্জনা সরাসরি নদীতে ফেলা হয় বলে জানালেন ওই এলাকার পরিচ্ছনতা কর্মী কামাল হোসেন।
কামাল হোসেন আরো বলেন, সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে যে আবর্জনা নিয়ে যায় তার চেয়ে ৫ গুণ আবর্জনা ফেলা হয় নদীতে। তিনি জানান, নদীর পানি দিন দিন দুষিত হয়ে পড়ছে। ওই পানি হাতে লাগলে চুলকায় বলে জানান তিনি। একইভাবে কুশীঘাট এলাকা থেকে টুকের বাজার সবখানেই দেখা গেছে নদীর পানি দুষিত করে আবজর্না সরসরি ফেলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারন সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম বলেন, শুধুমাত্র আমাদের অসচেতনতার কারণেই অনেকস্থানে নদী বিপন্ন হতে চলেছে। কেউ কেউ নদীর তীরেই ফেলছেন সকল জঞ্জাল। নদীর তীরে আবর্জনা ফেলায় দুষিত হচ্ছে পানি। যদি মানুষ সচেতন না হয় তাহলে নদী বাঁচানো যাবে না। তাই সবার আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে। নদী তীরবর্তী এলাকায় গণসচেতনতা চালানোর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা সিরাজ হোসেন,আলমগির মিয়া, সোহেল রানা,আনু মিয়াসহ কয়েকজন জানান, তারা নদীর পাশে কলোনীতে বাস করেন। কেউ বছর পাঁচেক আবার কেউবা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এসব কলোনীতে বাস করছেন। তারা জানান,তাদের ঘর থেকে ডাস্টবিন অনেক দূরে। এছাড়া ওই এলাকার লোকজন ডাস্টবিন ব্যবহার করে না। আর নদী কাছে হওয়ায় তারা সেখানেই ময়লা আবর্জনা ফেলেন।