ওসমানীনগরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ৯১ কোটি টাকার প্রকল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০১৬, ২:৪৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য ট্রান্সমিশন লাইনের কাজ দুই বছর আগে শেষ হলেও গ্যাস পাচ্ছেন না বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ উপজেলাবাসী। বিগত দুই বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষ শুধু গ্যাসের লাইন দেখছেন কিন্তু গ্যাস পাচ্ছেন না। এ নিয়ে মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথবাসীকে গ্যাস সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে গত দুই বছর আগে ২৫ কি.মি. ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করেছে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক প্রকল্পটি অনুমোদনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের শেষের দিকে গ্রাহকদের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ প্রদান করার কথা থাকলেও তিন উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ এখন পর্যন্ত জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দাবি পূরণের পথে তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ার মতো হয়ে গেছে। আর জালালাবাদ গ্যাসের ৯১ কোটি টাকার প্রকল্পের ট্রান্সমিশন লাইনের কাজ শেষ হলেও পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি।
জালালাবাদ গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে সিলেটের কয়েকটি এলাকার সঙ্গে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় গ্যাস সংযোগের জন্য একটি প্রকল্প সিলেট জালালাবাদ গ্যাস অফিসের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০১১ সালের ডিসেম্বরের প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সিলেটের বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ উপজেলা ও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলাকে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা এবং জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির উচ্চচাপের নেটওয়ার্ক আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট গ্যাস ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১২ সালের মধ্যে সিলেটের বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ উপজেলা এবং মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় লাইন নির্মাণের কাজ শেষ করে গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে নির্দেশনা ছিল।
২০১৩ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের গোলাপগঞ্জে সফরকালে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ উপজেলার গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন উদ্বোধন করেন। সিলেট-২ আসনের আওতাধীন বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথবাসীকে গ্যাস সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে জালালাবাদ গ্যাসের সিলেটের ফিরোজপুর এলাকা থেকে গোয়ালাবাজারের ইলাশপুর পর্যন্ত ২৫ কি.মি. ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন এবং দুটি সাবস্টেশন নির্মাণের কাজ দুই বছর আগে শেষ করা হয়। রশিদপুর সাবস্টেশনের জন্য ১৫ ডিসিমেল ভূমি ও তাজপুর সাবস্টেশনের জন্য ৯ ডিসিমেল ভূমি অধিগ্রহণ করে সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়।
রশিদপুর ও তাজপুর সাবস্টেশনের মাধ্যমে বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জবাসীকে গ্যাস সুবিধা দেয়া হবে। ২০১৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে ট্রান্সমিশন পাইপ লাইনের কাজটি শুরু হয়। একই বছরের জুলাই মাসে পিরিজপুর থেকে ওসমানীনগরের ইলাশপুর পর্যন্ত পাইপ লাইনের কাজ শেষ। এর মধ্যে বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ অংশের পাইপ লাইনের কাজ অসম্পূর্ণ থাকে। সিলেটের পিরিজপুর থেকে ওসমানীনগরের ইলাশপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে গ্যাস সরবরাহের সুবিধার্থে ১০ কিলোমিটার ৮ ইঞ্চি ও ১৫ কিলোমিটার ৬ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে লাইন টানা হয়। কিন্তু কাজের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের দোরগোড়ায় গ্যাস সুবিধা পৌঁছে দিতে ডিস্ট্রিবিউশন লাইন স্থাপনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, জালালাবাদ গ্যাসের রশিদপুর সাবস্টেশনের চারদিক লতাপাতায় ছেয়ে গেছে। তাজপুরের সাবস্টেশনের অবস্থাও প্রায় একই রকম। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় মেশিনগুলোতে জং ধরতে বসেছে। সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে। জালালাবাদ গ্যাসের প্রকল্প কর্মকর্তা প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাস সংযোগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে অসম্পূর্ণ লাইনের কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হবে।