মানবতাবিরোধী অপরাধ : এর আগে ঝুলেছেন যারা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:৪১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
গত ১০ মে দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ‘মইত্যা রাজাকার’ নামে পরিচিত জামায়াতের আমির তথা শীর্ষনেতা নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়।
জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের (জমিয়তে তালাবা) নিখিল পাকিস্তান সভাপতি (নাজিমে আলা) হিসেবে নিজামী একাত্তরে ছিলেন আলবদর বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের হয়ে তার নেতৃত্বেই বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ নৃশংসতম নারকীয় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করে এই বাহিনী। আর ফাঁসি হওয়া পর্যন্ত ছিলেন জামায়াতের আমির। হয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী।
গত বছরের ২১ নভেম্বর রাতে একই ফাঁসির মঞ্চে একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হয় অপর দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী এবং একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মুজাহিদকে। প্রথমবারের মতো একইসঙ্গে পাশাপাশি ফাঁসির মঞ্চে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দুই সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টার ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় সেবারও রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস।
কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবক-দানবীর অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসি দেওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকাকে। হত্যা-গণহত্যা, ব্যাপক নিধনযজ্ঞ, দেশান্তর, নির্যাতন, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন করে হত্যা, ষড়যন্ত্রের মতো আরও চারটি অপরাধে আদালত সাকাকে ৫০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিলেও সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হওয়ায় সেসব সাজা ভোগের প্রয়োজন পড়েনি।
চতুর্থজন হিসেবে একই সময়ে ফাঁসির দড়িতে ঝোলা অপর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ সর্বোচ্চ সাজা পান বুদ্ধিজীবী হত্যার পাশাপাশি সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার মাধ্যমে হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদি ঘটনার দায়ে।
গত বছরের ১১ এপ্রিল রাত দশটা ৩১ মিনিটে ফাঁসি দেওয়া হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। দ্বিতীয় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে একাত্তরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল জুড়ে নারকীয় সব যুদ্ধাপরাধের হোতা আলবদর বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব কমান্ড কামারুজ্জামান ফাঁসিতে ঝোলেন শেরপুর জেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৬৪ জনকে হত্যা ও নারী নির্যাতনের দায়ে।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে প্রথমবারের মতো ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল জামায়াতেরই অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার। ‘মিরপুরের কসাই’ স্থানীয় আলবদর কমান্ডার কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল রাত দশটা এক মিনিটে। সপরিবারে মিরপুরের হযরত আলী লস্কর হত্যা ও ধর্ষণের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলেন তিনি।
অন্য যুদ্ধাপরাধীদেরও আরও কয়েকটি করে অপরাধে আদালত যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডাদেশ দিলেও সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হওয়ায় সেসব সাজা ভোগের প্রয়োজন পড়েনি।