দয়ামীরে ওসমানীর বাড়ি : পৈতৃক ভিটায়ও নেই সর্বাধিনায়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৫৭ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
হলদে রঙের দেয়ালে ঘেঁরা একটি বাড়ি। নেই নাম ফলক কিংবা সাইনবোর্ড। তবুও তা বঙ্গবীরের বাড়ী। এই বাড়িই মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর (এমএজি ওসমানী) পৈত্রিক ভিটা। কিন্তু বাড়ি দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না যে বাংলাদেশের প্রথম সেনাপতির বাড়ি এটি। তাই কোনো আগন্তুককে ওসমানীর বাড়ি দেখতে গিয়ে ধন্দেতেই পড়তে হয়।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দু’পাশেই দয়ামীর বাজার। এই বাজার থেকে রাস্তার পূর্বদিকে চলে যাওয়া আধাপাকা সড়কটি ধরে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই চোখে পড়বে হলদে রঙের দেয়ালে ঘেঁরা এই বাড়িটি। পৈতৃক এই ভিটায় নেই বঙ্গবীর ওসমানীর কোনো স্মৃতি।
১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্ম হলেও ওসমানীর পৈতৃক বাড়ি সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার (তৎকালীন বালাগঞ্জ) দয়ামীরে।
চিরকুমার ওসমানীর বাড়িতে তার কোনো উত্তরসূরী নেই। ঘর-দোর দেখভাল করার জন্য আছেন কমর উদ্দিন।
জানালেন, বাড়িতে তেমন কেউ আসেন না। ওসমানীর বংশধরেরা বড় চাকরি করেন। অনেকেই যুক্তরাজ্যে থাকেন। বিভিন্ন উৎসবে বাড়িতে বেড়াতে এলেও চলে যান, থাকেন না কেউ। বাড়ি তদারকির দায়িত্বে থাকা ছফুর আলীও সিলেট শহরে থাকেন।
বর্ণনা বলতে ওসমানীর পৈতৃক বাড়িটির আদি কোনো অবকাঠামো নেই। সংস্কার করে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৩২ শতাংশ (১২ কের=৩৬ শতাংশ=এক কের) জমির ওপর নির্মিত বাড়িটির চারপাশে দেয়াল ঘেরা।
ভেতরে রয়েছে তিনটি ভবন, সামনে তিনটি দিঘী। যেনো দিঘীর শান্ত জলের মতোই নিজ ‘বাসভূমে’ নীরবে রয়ে যাচ্ছে ওসমানীর স্মৃতি। আর গেটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটিকে বাড়ির অংশে দু’ধারে পাকা করে দেওয়া হয়েছে। যেটি চলে গেছে পাশের হাওরে।
আলাপের ফাঁকে ফাঁকেই ঘুরে বাড়িটির দ্বিতল ঘর দেখালেন কেয়ারটেকার কমর উদ্দিন। মূল ভবন থেকে একটু দূরে রয়েছে আরও দু’টি ভবন। যেগুলো বাড়িতে এলে ব্যবহার করেন ওসমানীর উত্তরসূরীরা।
আর গেটের পাশে ছড়ার ধারে ঘরটিতে ছেলে-মেয়ে ও পরিবার নিয়ে থাকেন কমর উদ্দিন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে, একযুগ ধরে বাড়িটির দেখাশোনা করেন তিনি।
আলাপচারিতায় কমর জানান, ওসমানীর পৈতৃক জমি-জমা বিক্রি করে এ বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। রক্ষণা-বেক্ষণের খরচও তার কোনো বংশধররা দেন না। এখানকার শস্য কিংবা ফল-ফলাদি দিয়ে যা হয় তা দিয়েই চলে।
বাড়ির কোনো নাম ফলক কিংবা পরিচিতির বিষয়ে কমর উদ্দিনের ভাষ্য, ‘ছবি তোলার নিষেধ আছে। তবে কেন জানি না, বলতে পারি না নাম ফলকের বিষয়ে কিছু জানি না।’
দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ দাফন করা হয় হজরত শাহজালাল (র.) এর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে।
‘এ বাড়িতে ওসমানী সাহেবের ব্যবহৃত ছবি কিংবা অন্য কোনো জিনিসপত্র নেই। যা আছে সিলেট নগরে তার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরেই রাখা হয়েছে,’ বলেন কমর উদ্দিন।