নতুন জীবন পেলেন নিউইয়র্কে ৩২ হাজার বাংলাদেশী টাক্সি ড্রাইভার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ আগস্ট ২০১৬, ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ নিউইয়র্ক সিটির এক লাখ ২৫ হাজার ট্যাক্সি ড্রাইভারদের প্রতিযোগিতার মার্কেটে টিকে থাকার পথ সুগম হলো । এর মধ্যে রয়েছেন প্রায় ৩২ হাজার বাংলাদেশী টাক্সি ড্রাইভার । যাদের আয়ের উৎস টাক্সি ড্রাইভিং। নিউইয়র্ক ট্যাক্সি এ্যান্ড লিমুজিন কমিশন (টিএলসি) কর্তৃক ‘ইউনিভার্সাল ড্রাইভার্স লাইসেন্স’ চালুর প্রক্রিয়া অবলম্বনের ফলে এ সুযোগ এসেছে অর্থাৎ ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভার, উবার, কার সার্ভিস, লিমুজিন তথা ‘ফর-হায়ার ভেহিক্যাল ড্রাইভার’দের জন্যে এখন একই ধরনের লাইসেন্স ইস্যু করা হবে। এতে নতুন জীবন পেলেন নিউইয়র্কের টাক্সি ড্রাইভাররা । সাম্প্রতিক সময়ে নানাবিধ কারণে নিউইয়র্কে ট্যাক্সি ড্রাইভাররা অর্থ সংকটে পড়েছেন অর্থাৎ আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। এ অবস্থায় অনেকে এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন। আবার অনেকে সদ্য চালু ‘উবার’ অথবা গ্রীণ ক্যাব’ এর প্রতি ধাবিত হয়েছেন। টালমাটাল অবস্থায় নিপতিত হয় বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক সিটির ট্যাক্সি শিল্প। সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে সিটি কাউন্সিল গত ৭ এপ্রিল একটি বিল পাশ করে। ১৯ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে এ বিধি।
নিউইয়র্ক সিটিতে কর্মরত ট্যাক্সি ড্রাইভারদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ‘ইউনাইটেড ট্যাক্সি ড্রাইভার্স এসোসিয়েশন’র প্রধান বাংলাদেশী-আমেরিকান ওসমান চৌধুরী নয়া এ বিধিকে মন্দের ভালো হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভারের ৯৬% এর মতো ইমিগ্র্যান্ট। ২৫% এর বেশী হচ্ছেন বাংলাদেশী। অনেকেই ইংরেজী বুঝলেও পরীক্ষা দিয়ে পাশের ক্ষমতা রাখেন না। অথচ ‘ইউনিভার্সাল ড্রাইভার্স লাইসেন্স’ পেতে হলে ইংরেজীতে কথা বলতে হবে এবং বুঝতে হবে।’ ২০ বছরের অধিক সময় যাবত নিউইয়র্কে ইয়েলো ট্যাক্সি চালাচ্ছেন ওসমান চৌধুরী। কয়েক বছর আগে এক যাত্রী তার ট্যাক্সিতে মিলিয়ন ডলারের স্বণাংলংকার ফেলে যান। এরপর তিনি ঐ যাত্রীকে খুঁজে তা ফিরিয়ে দেয়ায় সারা আমেরিকায় ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সততার অনন্য এক উদাহরণে পরিণত হন ওসমান চৌধুরী। চৌধুরী আরো জানান, ‘একই লাইসেন্সে ইয়েলো ট্যাক্সি, উবার, ব্ল্যাক কার, গ্রীণ ক্যাব এবং ‘ফর-হায়ার ভেহিক্যাল’ চালানোর সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় আমরা যেখানে আয় বেশী সেখানে ছুটতে পারবো।’ এতদিন, এসব ট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ের জন্যে আলাদা আলাদা লাইসেন্স লাগতো। লাইসেন্স পেতে পৃথক পৃথক শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে।
টিএলসি কমিশন অফিস জানায়, ট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ের লাইসেন্সের পরীক্ষায় ইংরেজীতে কোন কিছু লেখার বাধ্যতামূলক কিছু নেই। তবে কথোপকথনের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। টিএলসির মুখপাত্র এলেন ফ্রমবার্গ বলেন, ‘আমরা সিটি মেয়রের অভিবাসন সম্পর্কিত অফিসের সাথে কথা বলছি ইউনিভার্সাল ড্রাইভার্স লাইসেন্স টেস্টে ইংরেজীকে বাধ্যতামূলক করার জন্যে।’ কারণ, যাত্রীদের প্রায় সকলেই ইংরেজীতে কথা বলেন। যাত্রীর কথা না বুঝলে গন্তব্যে নেবে কীভাবে?
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী টিএলসির ড্রাইভিং (কমার্শিয়াল) লাইসেন্স পেতে হলে ২৪ ঘন্টার একটি শিক্ষা কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। এরপর চ’ড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। ভ’গোল, দৃষ্টি শক্তি তথা ভীষণ জিরো, সড়ক-মহাসড়কের সাইন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা, আবেদনকারির ব্যাকগ্রাউন্ড চেক এবং নেশাগ্রস্ত কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হবার পরই লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, টিএলসির ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা, ইংরেজী, স্প্যানিশ এবং উর্দূ ভাষায়।
নয়া এ বিধির বিল সিটি কাউন্সিলে উত্থাপন করেছিলেন সিটি কাউন্সিলম্যান ইয়াডেনিস রডরিগুয়েজ। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে ট্যাক্সি শিল্পকে টিকে থাকার প্রয়োজনে ইউনিভার্সাল ড্রাইভার্স লাইসেন্স ইস্যুও কার্যক্রম শুরু হলেও এটি ভাববার কোন অবকাশ নেই যে, ইংরেজী বিষয়ে লিখিত কোন পরীক্ষা নেয়া হবে। যেভাবে চলছিল, ঠিক সেভাবেই চলবে সবকিছু। এ নিয়ে ঘাবড়াবার কিছু নেই’।