সিসিক নির্ধারিত রিকশা ভাড়া মানছেন না চালকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০১৬, ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ মহানগরীর রিকশা ভাড়ার তালিকা সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করেছেন। রিকশা ভাড়ার তালিকায় যেখানের ভাড়া ১০টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বাস্তবে সেখানে ৩০ টাকা দিয়েও রিকশা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
সিসিক কর্তৃপক্ষের দায়সারা নীতি আর নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করার কোন পদক্ষেপ না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ভূক্তভোগী রিকশা চাত্রীরা। তাদের অভিমত রিকশা চালকরা তাদের মর্জি মাফিক ভাড়া আর মর্জি মাফিক যাত্রী রিকশায় তুলছে। মোটামুটি রিকশা চালকদের কাছে যাত্রীরা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তারা যেভাবে চায় সেভাবেই যাতায়াত করতে হয় নগরবাসীকে। তাইতো নগরীর বিভিন্ন স্থানে চলার সময় একটি করুন শব্দ কানে ভেসে উঠে ‘ও ড্রাইভার যাইতায়নি বলাইয়া দিমুনে’।
কিন্তু কে শুনে কার কথা। চোখের সামনে দিয়েই হন হন করে চলে যায় রিকশা চালক। এমনকি অনেক সময় যাত্রীর আহবানটির কোন উত্তর না দিয়েই দ্রুত বেগে চলে যায়। আবার কখনো হ্যা বা না কোন উত্তর না দিয়েই বীরদর্পে চলে যায় রিকশা চালকরা।
নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ভাড়ার তালিকা সম্বলিত বোর্ড টানিয়েই সিসিক কর্তৃপক্ষ দায় সেরেছেন। রিকশা ভাড়ার লাগাম টেনে ধরতে সিলেট সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিলেও খোদ সিসিক কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে চালক-যাত্রী প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হচ্ছে। চলছে তুমুল বাকবিতন্ডা।
শিবগঞ্জ থেকে কোর্ট পয়েন্টে ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত আছে, বেশী দেবো কেন এমনটাই দাবি করছেন যাত্রী। চালক বলছে এসব নির্ধারিত ভাড়া কে মানে? যাত্রী আর চালকদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে এই ঝগড়ার মিটমাট কে করবে? ফলে প্রতিদিনই নগরীর পথে পথে ভাড়া নিয়ে ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। আবার যাত্রীরা তাদের প্রয়োজনের তাগিদে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে হলেও রিকশা নিয়ে গন্তব্যে পৌছার চেষ্টা করেন।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে নগর এলাকায় রিকশা ভাড়া নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে করপোরেশন। জেলা প্রশাসন, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, রিকশা মালিক সমিতি সিটি, সাংবাদিকসহ সহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিত্বে তৈরি কমিটি রিকশাভাড়া নির্ধারণে বেশ কয়েকটি সভা করে। ওই বছরের ২রা জুন কমিটি একটি তালিকা তৈরি করে জমা দেয় সিটি করপোরেশনে।২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় সে তালিকার অনুমোদনও দেয়া হয়। তবে বিভিন্ন জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন সে তালিকা টানানো সম্ভব হয়নি। তালিকা অনুমোদনের প্রায় দেড় বছর পর মে মাসের শেষের দিকে প্রায় ৭লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, সোবহানীঘাট, নাইওরপুল পয়েন্টসহ প্রায় ৫১ টি মোড়ে ভাড়ার তালিকা সংবলিত বোর্ড টানিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
নগরীর শিবগঞ্জবাজারের বাসিন্দা রাফি আহমদ জানান, শিবগঞ্জ থেকে বন্দরবাজার যেতে নির্ধারিত রিকশা ভাড়া হলো ২০টাকা। কিন্তু রিকশা চালকরা ৩০টাকা আবার কোনো কোনো সময় ৪০টাকাও বলে।
জল্লারপাড়ের বাসিন্দা ফাহাদ আহমদ জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত সিসিক তাদের নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে তদারকি না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত রিকশা চালকদের গলাকাটা ভাড়া দাবি করা বন্ধ হবে না।
মিরাবাজারের পাখী মিয়া নামের একজন রিকশা মালিক জানান, যেখানে আমরা রিকশা মালিকরা চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ভাড়া বাবদ ৬০-৮০টাকা নেই। তার মাঝে আবার শুক্রবার তাদের কাছ থেকে কোনো ভাড়া নেওয়া হয়না। সেখানে যাত্রীদের কাছ ন্যায্য ভাড়ার দ্বিগুণ নেওয়াটা অপরাধ। এক্ষেত্রে রিকশা মালিকদের অগ্রণি ভূমিকা রাখা জরুরী বলে আমি মনে করি।
রিকশা ভাড়ার বিষয়টি মনিটরিংয়ে সিসিকের কোনো উদ্যোগ না থাকায়, তা কার্যকর নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নগরবাসীর অনেকেই মনে করছেন, তালিকা টানানোতেই রিকশা ভাড়ার নৈরাজ্যের রশি টানা সম্ভব হবে না। সেটি কার্যকরে বাস্তবিক পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা সিসিকের এই উদ্যোগও ব্যর্থ হবে।
সিসিক’র সেই তালিকা অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়া হচ্ছে- কোর্ট পয়েন্ট থেকে টিলাগড় ৩০ টাকা, শিবগঞ্জ ২০ টাকা, মিরাবাজার ১০ টাকা, যতরপুর ১৫ টাকা, উপশহার (এ, আই, এফ, জি, এইচ, জে বক) ৩০ টাকা, উপশহর (বি, সি, ডি, ই বক) ২০ টাকা, নতুন ব্রিজ ২০ টাকা, নতুন ব্রিজ হয়ে দক্ষিণ সুরমা বাস টর্মিনাল ৩৫ টাকা, পুরতন ব্রিজ হয়ে দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনাল ২০ টাকা, নতুন ব্রিজ হয়ে রেল স্টেশন ৩৫ টাকা, পুরাতন ব্রিজ হয়ে রেল স্টেশন ২০ টাকা, পুরাতন ব্রিজ হয়ে বাবনা পয়েন্ট ২০ টাকা, পুরাতন ব্রিজ হয়ে টেকনিক্যাল ৩০ টাকা, নতুন ব্রিজ হয়ে কদমতলী ৩০ টাকা, পুরাতন ব্রিজ হয়ে কদমতলী ৩০ টাকা।
কোর্ট পয়েন্ট থেকে লাউয়াই ৪০ টাকা, বিসিক শিল্প নগরী ৪০ টাকা, খোজারখোলা ৩০ টাকা, বরইকান্দি ৩৫ টাকা, গোপশহর মকন দোকান ৪০ টাকা, ঝেরঝেরি পাড়া ১৫ টাকা, দর্জিবন্দ ১৫ টাকা, শাহী ঈদগাহ ২০ টাকা, সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস ৩৫ টাকা, শিবগঞ্জ সোনাপাড়া ২০ টাকা, বালুচর ৩৫ টাকা, কাজীটুলা ১৫ টাকা, ইলেকট্রিক সাপাই ২০ টাকা, উত্তর কাজীটুলা ২০ টাকা, গোয়াইটুলা ২৫ টাকা, আম্বরখানা ১৫ টাকা, লেচু বাগান ২০ টাকা, চৌকিদেখি ৩০ টাকা, লাক্কাতুরা ৩০ টাকা, হাউজিং এস্টেট ২০ টাকা, বাদাম বাগিচা ৩০ টাকা, মাছিমপুর ১৫ টাকা, দর্শন দেউরী ১৫ টাকা, রাজারগলি ১৫ টাকা, দরগাহ শাহজালাল গেইট ১০ টাকা।
কোর্ট পয়েন্ট থেকে মিরের ময়দান ১০ টাকা, সুবিদবাজার ১৫ টাকা, গোয়াবাড়ি ৩০ টাকা, আখালিয়া বিডিআর ক্যাম্প গেইট ও শাবি ক্যাম্পাস গেইট ৩৫ টাকা, বাগবাড়ি ২০ টাকা, এতিম স্কুল ২০ টাকা, কানিশাইল খেয়াঘাট ৩০ টাকা, নবাব রোড (শেখঘাট পিচের মুখ, কলাপাড়া ডহর) ২০ টাকা, ঘাসিটুলা বেতের বাজার ২৫ টাকা, শেখঘাট ১০ টাকা, ভাঙ্গাটিকর ১৫ টাকা, ভাতালিয়া ১৫ টাকা, রিকাবীবাজার ১৫ টাকা, ওসমানী মেডিকেল ২০ টাকা, দাড়িয়াপাড়া ১০ টাকা, মির্জাজাঙ্গাল ১০ টাকা, জলারপাড় ১০ টাকা, পশ্চিম কাজির বাজার ১০ টাকা, ছড়ারপার ১৫ টাকা, কুমারপাড়া পয়েন্ট ১৫ টাকা, কুমারপাড়া (ঝর্নারপাড়) ২০ টাকা।
কোর্ট পয়েন্ট থেকে কুমারগাঁও বাস টার্মিনাল ৪০ টাকা, মিরাবাজার আগপাড়া ১৫ টাকা, সোবহানীঘাট ১০ টাকা, চালিবন্দর ১০ টাকা, তোপখানা ১০ টাকা, আম্বরখানা কলবাখানী ২০ টাকা, পুরতান ব্রিজ হয়ে ভার্থখলা ২০ টাকা, পীর মহলা ২৫ টাকা, মেন্দিবাগ ২৫ টাকা, সাদাটিকর ৩০ টাকা, কুশিঘাট ৩৫ টাকা, শাপলাবাগ ৩৫ টাকা, টুলটিকর ৪০টাকা ও মিরাপাড়া ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব সুরমা নিউজকে বলেন, আমরা একটা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছি। এখন চালক-আর যাত্রী উভয়ের সম্মতির ব্যাপার। একটু কম-বেশ হতে পারে। এখানে মারামারির কি আছে। কার্যকরের জন্য আমরা তদারকির ব্যবস্থা নিবো। তবে ন্যায্য ভাড়ার তালিকা থাকায় চালক ও আরোহীর মধ্যে বোঝাপড়ার বিষয়টি আরো সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন।