প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০১৬, ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ
সুমন পাল, শ্রীমঙ্গল :
দেশের অন্যতম মৎস্য অভয়ারণ্য বাইক্কা বিল। আমরা সবাই শীতের বাইক্কা বিলের সাথে পরিচিত। শীতে পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে মুখর থাকে এর চারদিক।
৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বাইক্কা বিলের সুনাম দারুণভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আমরা বর্ষার পানি থৈ থৈ বাইক্কা বিলের সৌন্দর্য্যরে সাথে একদমই পরিচিত নই। একশ’ হেক্টর আয়তনের এই সংরক্ষিত জলাশয়টি মৎস্যসম্পদে পূর্ণ। নানাজাতের মাছের সাথে রয়েছে সাপ-ব্যাঙ আর জলজ উদ্ভিদের নিত্য বসবাস। তবে বর্ষা মৌসুমে রাস্তার দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। বাইক্কা বিলের পানিঘেরা রূপকে প্রত্যক্ষ করতে হলে পায়ে হেঁটে কষ্ট করে আসতে হবে। মাটির রাস্তায় তখন কোনো সিএনজি অটোরিক্শা, প্রাইভেট গাড়ি অথবা অন্য যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এক্ষেত্রে নিজের পা-ই একমাত্র ভরসা। তারপর একসময় পৌঁছে যাওয়া বাইক্কা বিলে।
মাঠ-ঘাট-প্রান্তরের মতো বিলেও শুধুই পানির ছড়াছড়ি। নির্দিষ্ট সীমারেখা থেকে বর্ধিত হয় পানির উপস্থিতি। মাছগুলো ছোটাছুটি করতে করতে পানির উপর হঠাৎ মুখ উঁচিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করে। জলজ পাখিগুলো গলা ছেড়ে ডাক ছাড়ে সঙ্গীর উদ্দেশ্যে। ঝিমিয়ে পড়া হিজল-করচ গাছের পাতাগুলো সতেজ হয়ে উঠে। ঢোলকলমি চোখ তুলে তাকায় আগত অতিথির দিকে। কাছে-দূরে ব্যাঙের অবিরাম ডাক। বিলের জলে পানকৌড়ি, ছোট সরালি আর পাতিহাঁসের ডুব ডুব খেলা। বৃষ্টিময় প্রাণপূর্ণতার সৌন্দর্য্য বাইক্কা বিলে এসেও ধরা পড়বে দারুণভাবে। টইটম্বুর বিলের পানিতে ঢেউ ওঠে ছলাৎ ছলাৎ। চারিদিকে পানি আর পানি। হিজল-করচের বনটিও ডুবে যায় পানিতে। যেন নতুন প্রাণ জেগেছে বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে।
হাইল হাওরে অবস্থিত সংরক্ষিত মৎস্য অভয়াশ্রম ‘বাইক্কা বিল’। ইউএসআইডি’র অর্থায়নে মাচ প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য ও পাখির অভয়াশ্রম। ২০০৩ সালের ১ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় বাইক্কা বিলকে স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এই বিল শুধু মাছের জন্যই নয়, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীর জন্য একটি চমৎকার নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। অপরূপ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এ বিল এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে।
নয়নাভিরাম এই জলাভূমিতে রয়েছে হাজারও শাপলা-পদ্মসহ নানান জলজ উদ্ভিদ ক্লাইমেট-রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস্ অ্যান্ড লাইভলিহুডস্ (ক্রেল) প্রকল্পের সাইট (বাইক্কা বিল) অফিসার মো. মনিরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন- তখন চারদিকে পানি থৈ থৈ করে। এই হাওরের আশপাশের গ্রামের মানুষের তখন একমাত্র বাহন হয় নৌকা।
তিনি আরো বলেন- বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি ১৫-১৬ ফুট হয়ে যায়। আর শুষ্ক মৌসুমে তা কমে দাঁড়ায় ৪-৫ ফুটে। সত্যিই ধক করে ওঠে বুকে, তীব্র সুন্দরের একটি ভয়ঙ্কর রূপও রয়েছে এখানে। সেটি কখনও সখনও মারাত্মক হয়ে ওঠে। ভুলিয়ে দেয় পিছুটান, মুছে দেয় ফেরার পথ। যারা একবার আসবে তারা এখানকার সৌন্দর্য্য দেখে আর ফিরে যেতে চাইবে না।