‘গুলশানের মত ঘটনা আবার ঘটতে পারে’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ৬:১৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াদু বলেছেন, গুলশান হামলার পরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ এখনো কাটেনি।
তিনি বলেন, গুলশান হামলার মতো ঘটনা বাংলাদেশে আরও ঘটতে পারে।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে এই উদ্বেগের কারণে ঢাকায় তাদের মিশনে যেসব বিদেশী কর্মকর্তারা কাজ করেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের ইউরোপে ফেরত পাঠিয়ে দেবার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতর থেকে এরই মধ্যে একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ঢাকায় এসেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তিনি নিরাপত্তা নিয়ে মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ করবেন।
মায়াদু বলেন, ‘আমাদের কিছু সহকর্মী এরই মধ্যে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাকিরা এখনো অপেক্ষা করছে কি সিদ্ধান্ত আসে সেটি দেখার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি- অনেক বিদেশী মিশন তাদের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশ ফেরত পাঠিয়ে দিতে বলেছে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। অগাস্টের মাঝামাঝি ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুলগুলো খুলতে যাচ্ছে। সুতরাং এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।’
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনকি ইউরোপেও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তারা কি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন-
এই প্রশ্নে মায়াদু বলেন, ‘অবশ্যই আমরা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসের এক তারিখে ১৭ জন বিদেশীকে চোখের সামনে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এরপরে কেউ যদি বলে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি, তাহলে সেটি নিহত এবং তাদের পরিবারকে অপমান করার মতো।’
ইইউ রাষ্ট্রদূতের বর্ণনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘খুবই মারাত্মক’। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা- এখানে সব স্টেক হোল্ডারদের একই ধারণা। পরিস্থিতি ভয়ংকর। একই ধরনের ঘটনা ভিন্নভাবে আবারও ঘটতে পারে। সুতরাং এটা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়।’
তিনি মনে করেন, বিদেশীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের ইস্যুটি জুলাই মাসের ১ তারিখে তৈরি হয়নি। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গুলশানে ইটালিয় নাগরিক চেজারে তাভেলার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রথম উদ্বেগ তৈরি হয়। এরপর রংপুরে জাপানি উন্নয়ন কর্মী কোনিও হোশিকেও একইভাবে হত্যা করা হয়।
মায়াদু বলেন, তখন যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, সেটি যথেষ্ট মনে হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাব্য বিপদের দিকে কোনো মনোযোগ দেয়া হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে তাদের উদ্বেগগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা কী ধরনের নিরাপত্তা চান সেটিও সরকারের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূতের ভাষ্য, এখন ঢাকার তথাকথিত কূটনৈতিক এলাকা অনেক সুরক্ষিত এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাহলে কেন তারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না?
জবাবে তিনি বলেন, অতিদ্রুত অনেক পদক্ষেপ নেয়া হলেও নিরাপত্তা নিয়ে তাদের পুরোপুরি আস্থা ফিরে আসছে না।
মায়াদু বলেন, ‘আমরা শুধু কূটনৈতিক পাড়ার কথা বলছি না। আমরা পুরো বাংলাদেশের নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা প্রতিটি বাংলাদেশীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ গত দেড় বছরে সন্ত্রাসী হামলায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত পঞ্চাশ জন নিহত হয়েছে।’
তিনি মন্তব্য করেন, সরকারকে পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে এবং ঘটনার ভয়াবহতা স্বীকার করতে হবে। এটাকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।