জগন্নাথপুর-গোয়ালাবাজারঃ ‘সড়ক নয়, যেন নরক যন্ত্রণা’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০১৬, ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: জগন্নাথপুর-গোয়ালাবাজার সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ। সড়কটির অসংখ্য স্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টির পানি আটকে জল আর কাদায় একাকার হয়ে পড়েছে সড়কের বেশির ভাগ এলাকা। সড়কের বিটুমিন উঠে গিয়ে খানাকন্দ মারিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। একারণে প্রায়ই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।
বাধ্য হয়ে যানবাহন অথবা পায়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়ে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
এছাড়া প্রায় ৭ মাস আগে সড়কের কাজ শুরু হলেও দুই মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় এলাকার জনসাধারণসহ পরিবহণ শ্রমিকদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় সাত মাস আগে সড়কটির কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে এখনো ২০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করছে ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। তবে তাদের এ দাবি মানতে নারাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগীরা।
দুই বছর ধরে জগন্নাথপুর-গোয়ালাবাজার সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ে। গত বছর সড়কটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। এ সময় সড়কটির সংস্কার কাজের দাবিতে স্থানীয় জনতা প্রতিবাদসভা, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলন করেন।
ভুক্তভোগী জনসাধারণের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের উদ্যোগে গত বছর সড়কের সংস্কার কাজের টেন্ডার হয়। জগন্নাথপুর পৌর শহরের ভবেরবাজার থেকে সৈয়দপুর বাজার হয়ে কাঠালখাইড় পর্যন্ত মাত্র ১৩ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজের জন্য ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকার কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সজিব রঞ্জন দাশ। পরে কার্যাদেশ নিয়ে গত ৭ মাস আগে সড়কে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
দীর্ঘ ৭ মাসে সৈয়দপুর বাজার ও গ্রাম এলাকায় মাত্র ২০ ভাগ কাজ হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সড়কের ৮০ ভাগ কাজ এখনো বাকি রয়েছে।
এর মধ্যে গত দুই মাস আগে সড়কের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান। এছাড়া পুরো সড়কের বিভিন্ন স্থানে কাজ করার জন্য পুরনো এপ্রোচ উঠনো হলেও কাজ না করায় বৃষ্টি হলে সড়কটি কাদামাটিতে পরিণত হয়ে থাকে।
এমতাবস্থায় গত প্রায় ২ মাস ধরে সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় দিনদিন জনগণের ভোগান্তি আরো বেড়েই চলেছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তৈয়ব কামালী বলেন, জনগণের ভোগান্তি আর সহ্য করা যাচ্ছে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সড়কটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সজিব রঞ্জন দাশের পার্টনার সৈয়দ মাসুম আহমদ জানান, এ পর্যন্ত সড়কের প্রায় ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আরো কয়েক মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে।
সড়কে কাজ বন্ধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কে পুরোপুরি কাজ বন্ধ হয়নি। টুকটাক কাজ চলছে। এখন বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণে সড়কে বিটুমিনের কাজ করা যাচ্ছে না। তবে আরসিসি কাজ হচ্ছে। এছাড়া ঈদের ছুটিতে শ্রমিকরা বাড়িতে চলে যাওয়ায় কাজের গতি কমেছে। তবে ঈদের পর থেকে আবার কাজ শুরু হবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার পর থেকে সংস্কার কাজে অবহেলা করছে। তারা কাজ করার মৌসুমে কাজ করেনি। এখন বৃষ্টি মৌসুমে এসে বৃষ্টির অজুহাতে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আগামি ১৫ দিনের মধ্যে আবার কাজ শুরু না করলে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাতিলের জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবো।