ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুন ২০১৬, ৭:৫৭ অপরাহ্ণ
সুরমা ডেস্ক: গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে না থাকার পক্ষ জয়ী হওয়ার পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এই গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় গেলেও ইইউতে থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত গণভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিচ্ছেদপন্থিরা জয়ী হওয়ার পর ক্যামেরনের উপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছিল।
ফল প্রকাশের পর শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে স্ত্রী সামান্থাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ক্যামেরন। সেখানেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। “কখনও কখনও সময় আসে জনগণকে জিজ্ঞেস করার, তারা কী চায়? তাদের ইচ্ছার প্রতি অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে।” যুক্তরাজ্যের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালনকে গৌরবের মন্তব্য করে আবেগাক্রান্ত ক্যামেরন বলেন, এই ‘জাহাজের এখন একজন নতুন ক্যাপ্টেন’ লাগবে।
আগামী অক্টোবরে ক্ষমতাসীন টোরি দলের কাউন্সিলে নতুন প্রধানমন্ত্রী ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কি না, তা নিয়ে গণভোটের ঘোষণা গত বছর দিয়েই দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেছিলেন ৪৯ বছর বয়সী ক্যামেরন। ক্যামেরন গণভোটে ইইউতে থাকার পক্ষে অবস্থান নিলেও তার দলের অনেক নেতা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।তাদের মধ্যে ৮৪ জন এমপি ভোটে হারলেও ক্যামেরনকে প্রধানমন্ত্রিত্ব না ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। বিরোধী লেবার পার্টির অনেকে ক্যামেরনের পদত্যাগ চাইলেও দলটির প্রধান জেরমি করবিন বলেছিলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীরই।
মূলত ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টির চাপের মুখেই ইউরোপের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট ছাড়ার গণভোটের দিকে যেতে হয় ক্যামেরনকে। যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় জোট থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে কিছু ডানপন্থি রাজনীতিবিদের উদ্যোগে ১৯৯১ সালে গঠিত হয় ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি। ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে এই দল বেশ পরিচিতিও পায়। ২০১৩ সালে নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বে দলটি স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে সাফল্য পায় এবং প্রতিনিধিত্বের বিচারে যুক্তরাজ্যের চতুর্থ শক্তিশালী দলে পরিণত হয়। ইনডিপেনডেন্স পার্টির এই উত্থান কনজারভেটিভ পার্টির জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। কনজারভেটিভ সমর্থকদের অনেকেই ইনডিপেনডেন্স পার্টির দিকে ঝুঁকে পড়েন। এমনকি একজন এমপিও এক পর্যায়ে দল বদলে ইনডিপেনডেন্স পার্টিতে যোগ দেন। এরপর ইনডিপেনডেন্স পার্টির ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী প্রচার আরও জোর পায়। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও কনজারভেটিভদের প্রতি সমর্থনের ঘাটতি দেখা যায়।
এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে অনেকটা চাপের মুখেই ইইউ প্রশ্নে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হন কনজারভেটিভ নেতা ডেভিড ক্যামেরন। তবে এবার ভোটের আগে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছিলেন, এই গণভোটের রায়ে যুক্তরাজ্য নিঃসঙ্গ হয়ে পড়তে পারে, যেখান থেকে ফিরে আসার পথ নেই।