অবশেষে ওসমানীনগরে প্রতিবন্ধী পরিবারের গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০১৬, ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে সিলেটের ওসমানীনগরের রঙ্গিয়া গ্রামের অসহায় প্রতিবন্ধী পরিবারের ভাংচুরকৃত বসত ঘর পূণঃনির্মাণ করে দিতে কাজ শুরু করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ও মিডিয়ার কল্যাণে অধিকার ফিরে পাচ্ছে অসহায় এ প্রতিবন্ধী পরিবার।
জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে ২০/২৫ জন যুবকের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল কাজ করে একটি স্বাভাবিক কাঁচাঘর নির্মাণ করেছেন। রাত থেকেই গৃহহীন পরিবারটি তাদের পৈত্রিক ভিটে মাটিতে থাকতে পারবে এমন আশা করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জন প্রতিবন্ধী গিয়াস উদ্দিন, তার বৃদ্ধা মা ও অবিবাহিত তিন বোনের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে এগিয়ে এসেছেন এলাকার বিত্তবানরা।
গত রবিবার বিকেলে উপজেলার খাসদরগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ওসমানীনগর থানার ওসি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক জনাকীর্ণ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল আইনি প্রক্রিয়ায় মামলা চলমান রেখে গৃহহীন অসহায় প্রতিবন্ধী পরিবারের ঘর নির্মাণের। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল থেকে স্বাভাবিক থাকার উপযোগী একটি কাঁচাঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ঈদের পর এ প্রতিবন্ধী পরিবারকে একটি পাকাঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।
সোমবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার ২০/২৫ জন যুবক ঘর বানানোর কাজে ব্যস্থ রয়েছেন। এসময় জাহাঙ্গীর আলম (৩৬) নামের এক যুবক জানান, গ্রামের একটি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো তাদের নৈতিক কাজ। রমজানে একটি ঘর নির্মাণ করে দিতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। ঈদের পর পাকা ঘরের কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী। এসময় উপস্থিত অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীরা একই মত প্রকাশ করেন।
রবিবার বিকাল ৩টায় উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের রঙ্গিয়া খাসদরগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হল রুমে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান রব্বানী। বক্তব্য রাখেন সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মো: আতাউর রহমান, ওসমানীনগর থানার ওসি আব্দুল আউয়াল চৌধুরী, সমাজসেবক হাজী মকবুল আলী, সিলেট জেলা আ’লীগের সদস্য আব্দাল মিয়া, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আনা মিয়া প্রমুখ। বৈঠকে সমাজের বিত্তবানদের পক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে অসহায় পরিবারকে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়। এরই লক্ষ্যে বৈঠকের উপস্থিতিদের মধ্য থেকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা নগদ চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল থেকে গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার দুপুরে গ্রামের লোকজন জুম্মার নামাজে থাকার সুযোগে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের রংগিয়া গ্রামের বাসিন্দা তাজপুর ইউপির সাবেক সদস্য জিলু মিয়া ও তার ঘনিষ্ট সহযোগী একই এলাকার মবশর আলীর পুত্র আব্দুল হাফিজ সোহেল (কথিত সাংবাদিক) প্রতিবন্ধী গিয়াস উদ্দিনের পৈত্রিক বাড়ি দখলে নিতে হামলা চালায়। ২২/২৫ জনের একটি অস্ত্রধারী গ্রুপ নিয়ে তারা প্রতিবন্ধী গিয়াস উদ্দিনকে বেঁধে রেখে তার মা-বোনের উপর নির্যাতন শুরু করে। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ছুটে আসার আগেই তারা গিয়াস উদ্দিনের ঘরের মালামাল লুটে নিয়ে বসত ঘরটি ভাংচুর করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। পরে গ্রামের লোকজন এসে গৃহহারা পরিবারের লোকজনকে উদ্ধার করলে মহিলাদের অনেকটা বিবস্ত্র অবস্থায় পান। এসময় পার্শ্ববর্তি দোকানের ব্যবসায়ীরা গায়ের শার্ট খোলে মহিলাদের গায়ে জড়িয়ে থানায় পাঠান। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে তিব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।