সিলেটে ট্রাকচালক ও হেলপার হত্যার রহস্য উদঘাটন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ৯:১১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেটে ট্রাকচালক ও হেলপারকে হত্যা করে ট্রাকের মধ্যে ফেলে দেয়ার ঘটনার ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুজনসহ তিন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। আটকরা হলেন, চালক ইব্রাহিম (২৩), তার সহকারী ফজর আলী (২৪) ও পুরনো টায়ারের ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়া (২৩)।
শনিবার বিকেলে আটকরা সিলেট মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা জানায়, চাকরি হারানোর ক্ষোভ থেকেই ট্রাকের নতুন চালক জাহাঙ্গীর ও তার বন্ধু রাজুকে হত্যা করা হয়। আর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় ট্রাক থেকে সদ্য চাকরি হারানো চালক ইব্রাহিম (২৩) ও তার বন্ধু কম্পিউটার অপারেটর ফজর মিয়া (২৪)। হত্যার পর ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ঘটনাটি ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল তারা। পরে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ট্রাকটি সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচকের লালমাটিয়ায় সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়ের পাশে রেখে ট্রাকের ভেতরে রেখে এর ৬টি টায়ার খুলে নিয়ে যায় তারা। ওই এলাকায় দুর্গন্ধের জন্য কোনো গাড়ি থামে না বরং দ্রুত প্রস্থান করে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদেও আটকরা আলোচিত এ ডাবল মাডারের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন ।
এসএমপির মোগলাবাজার থানা পুলিশ জানায়, শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ভোরে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকা থেকে ট্রাকচালক ইব্রাহিমকে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে নগরের আম্বরখানা থেকে আটক করা হয় তার সহকারী ফজর আলীকে। আটক মো. ইব্রাহিম সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকার ফউজদার তালুকদারের ছেলে এবং ফজর আলী বিশ্বনাথ উপজেলার শ্বাসরাম এলাকার রুস্তুম আলীর ছেলে।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ফজর আলীর শ্বশুরবাড়ি থেকে নিহতদের লুণ্ঠিত দুটি মোবাইল সেট ও ট্রাকের খুলে নেয়া টায়ার বিক্রির পাঁচ হাজার টাকা জব্দ করে এবং গাড়ির টায়ার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশ পুরের জয়নাল মিয়ার দোকান থেকে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকেও (২৩) আটক করে পুলিশ।
মোগলাবাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখতার হোসেন জানান, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলদীপুরের আতাউর রহমান। ইব্রাহিম ট্রাকচালক ও ফজর আলী হেলপার ছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি ট্রাকটি ঢাকায় নিয়ে গেলে ইব্রাহিমকে বাদ দিয়ে নতুন চালক হিসেবে জাহাঙ্গীরকে নিযুক্ত করেন গাড়ির মালিক। জাহাঙ্গীরের সহকারী ছিলেন রাজু। পরদিন ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুর থেকে ট্রাকে রিকশার যন্ত্রাংশ নিয়ে সিলেটে আসার সময় সাবেক চালক ইব্রাহিম, তার সহকারী ফজর আলী এবং রাজুও নতুন চালকের সঙ্গী হন। পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর আসার পর জাহাঙ্গীর ও রাজুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
আটকদের বরাত দিয়ে ওসি আরও জানান, হত্যার আগে তারা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে নিহতদের কাবু করে ফেলে। আর নিহত চালক জাহাঙ্গীরের বন্ধু রাজু আহমদও কিছুটা প্রতিবন্ধী টাইপের ছিল। জাহাঙ্গীর গাড়ি নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে আসায় বেড়ানোর জন্য বন্ধুর সঙ্গী হয়ে প্রাণ হারায় রাজুও। এরপর গাড়ি চালায় ইব্রাহিম। গাড়িটি মাধরপুরের জগদীশ পুর ও আউশকান্দি, সর্বশেষ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চণ্ডিপুলে এনে থামায় তারা। এরপর পরিকল্পনা করে মরদেহ দুটি চালক ও হেলপারের সিটে বসিয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচকে রেখে যায়।
ঘটনাটি স্রেফ দুর্ঘটনা সাজাতে ট্রাকটি রাস্তার পাশে রেখে খুলে নেয়া হয় ছয়টি চাকা। এরপর জগদীশপুর জয়নালের দোকানে নিয়ে চাকাগুলো বিক্রি করা হয়।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় নিথর দেহ দুটি। দেহের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ পরিকল্পিত হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করতে সক্ষম হয়।
খবর পেয়ে ট্রাক মালিক আতাউর রহমানসহ নিহতদের স্বজনরা মোগলাবাজার থানায় আসেন শনিবার দুপুরে। এ ঘটনায় নিহত রাজুর ভাই সুজন বাদী হয়ে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন ওসি।
শুক্রবার সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জে সড়কে সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় লালমাটিয়া এলাকায় একটি ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪০৩০) চালক ও হেলপারের আসনে রাখা অবস্থায় জাহাঙ্গীর ও রাজুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা বাগদী গ্রামের মো. কাদেরের ছেলে জাহাঙ্গীর মিয়া (২৭) ও দীন মোহাম্মদের ছেলে রাজু আহমদ (২৫)।