বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি সমাজনীতি সবকিছুই ব্যক্তি পূজা কেন্দ্রীক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুলাই ২০১৭, ৭:০৯ অপরাহ্ণ
সারওয়ার চৌধুরী:উপর লেভেলের নেতৃত্বকে খোশামোদ করার মাধ্যমে, সমাজের অবস্হা সম্পন্ন আর প্রভাব শালীদের সর্ব প্রকারের নীতিহীন, যুক্তি বহির্ভূত কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধিই যেন সবার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য । দেশের স্বার্থের তোয়াক্কা না করে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা মুলত দূর্নীতি, অপশাষণ আর অযোগ্য নেতৃত্বের পথকেই উৎসাহ দিচ্ছি । বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান দলগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায়ে যারা আছেন তারা দলীয় অন্যান্য নেতা-নেত্রী , কর্মী কিংবা সমর্থকদের সমালোচনা পর্যালোচনার বাইরে । যতটা সমলোচনা অথবা দোষান্বেষ হয় , সেগুলো শুধুমাত্র বিরোধীদের মাধ্যমই হয় । নিজ দলের ক্ষেত্রে উনারা যেন ” ANGEL ” …. আবার যারা ক্ষমতায় থাকেন , উনাদের সমালোচনার বিষয়ে বিরোধীদের ও প্রচণ্ড ভাবে সতর্ক থাকতে হয় । নাহলে তথাকথিত HOME MADE গণতন্ত্রের ঝান্ডাতে ক্ষত বিক্ষত হতে হবে ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে । আমরাও রাতকানা , দিনকানা , নেতা নতুবা নেত্রী কানা । আমাদেরকে সিঁড়ি বানিয়ে উনারা নিজেদের সাথে সাথে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে অঘোষিত রাজতন্ত্রের ভিত্তিকেই মজবুত করছেন । আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে আওয়ামী লীগ , বি এন পি , কিংবা অন্য যেকোন রাজনৈতিক দলের আদর্শে নিজেকে অগ্রসর করা , কিন্তু সেটা কোনভাবেই নিজের স্বকীয়তা , ব্যক্তিসত্বাকে বিসর্জন দিয়ে নয় ।
আমরা আমেরিকা , ইউরোপকে আমাদের স্বপ্নরাজ্য মনে করি , যেকোন ক্ষেত্রেই ঐ দেশগুলিকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করাই , কিন্তু তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে অসুসরণ করি না । ওবামাকে বাহবা দেই কিন্তু ওবামার মতো কাউকে বিকশিত করার প্রয়াস নেই না । ট্রাম্পকে নিয়ে সমালোচনায় মুখরিত হই , কিন্তু ট্রাম্পের দেশে ট্রাম্পকে নিয়ে যেভাবে সমালোচনা করা হয় , ট্রাম্পের বিভিন্ন সমালোচনা মূলক মূর্তি , ফটো টাঙিয়ে তার বিরোধীতা করা হয় … সেই রকম সমালোচনা অনেক দূরে , বিন্দুমাত্র নেগেটিভ সমালোচনাতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন একেবারে নিচের দিকের নেতা কর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আসনে আসীন নেতৃত্ব পর্যন্ত । পরিবর্তনের কথা বলি কিন্তু ফ্রান্সের পরিবর্তনকে উদাহরণ হিসেবে নিতে প্রস্তুত নই । দলের ভেতরে কেউ প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করতে চাইলেই মাইনাস ওয়ান , টু , থ্রী ইত্যাদি অপবাদে জর্জরিত করে কোনঠাসা করে রাখি অথবা তাদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করি ।
এভাবে তো চলতে পারেনা , চলতে দেয়া যায় না …..আমাদের সাধারণ জনগণকেই এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে , আমাদেরকেই পরিবর্তন করতে হবে এ সমস্ত অলিখিত ” সিলসিলা ” । রাজনৈতিক দলগুলি আমাদেরকে ২০২০-২০৩০-২০৪০ … ইত্যাদি ভেলকিবাজীতে ভূলিয়ে রাখার চেষ্টায় রত । এ সমস্ত ভেলকিবাজী , মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নতুন নয় , এ গুলোর কতটুকু সফল হয়েছে , আন্তরিক ভাবে কতটা চেষ্টা করা হয়েছে ? তাই যুব সমাজকে এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে যে ” অস্পষ্টতায় ভরা দূরের কিছুর চেয়ে কাছের স্পষ্ট কিছু অর্জন করাই শ্রেয় । ” আমাদেরকে বাস্তবমুখী হতে হবে , ঐ সমস্ত টার্গেটে যাবার আগে বর্তমানের কি হবে ? বর্তমানে যে অগণিত বেকার যুব- সমাজ সঠিক , স্বার্থহীন পথ নির্দেশনার অভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠ সময়টা হারিয়ে ফেলছে , বর্তমানে যে স্বজন প্রীতি , স্বদল প্রীতি ইত্যাদির আঘাতে সমাজ আর রাষ্ট ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবিশ্বাস – অনিয়ম আর বৈষম্যের সৃষ্ট হচ্ছে …. সেগুলো তো দিনে দিনে আরও প্রকট আকার ধারণ করবে …. তখন আমরা কি করব ?
তাই পরিবর্তনটা এখন সময়ের দাবী । রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে প্রকৃত গণতন্ত্র চর্চার পথ উন্মুক্ত করার প্রয়াসী হতে হবে । সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে উপলব্ধি করতে হবে যে … ” কারও জন্যেই কোন কিছু থেমে থাকে না । ” সুতরাং নিজেরা সকল ক্ষমতা আঁকড়ে না ধরা থেকে দলের ভেতর হতে অন্যান্য যোগ্যতা সম্পন্নদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে । বিশ্বের উন্নত এবং গণতান্ত্রিক দেশগুলিকে অনুসরণ পূর্বক ক্ষমতার সময় সীমাকে নির্দিষ্ট করতে হবে । দুইবার কিংবা তিনবারের অধিক কেউ যেন ক্ষমতায় থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে । বাংলাদেশ আমাদের জন্মভূমি , মাতৃভূমি । এ মাটির সাথে মিশে আছে আমাদের পূর্ব পুরুষদের কত সংগ্রাম , ত্যাগ – তিতিক্ষার ইতিহাস । তাই আমাদের এই সোনার দেশটাকে কারও ব্যক্তিস্বার্থ বা পরিবারের স্বার্থে কোনভাবেই ব্যবহৃত হতে দেয়া যাবে না ।
লেখকঃ সারওয়ার চৌধুরী,
আমেরিকা প্রবাসী।
(সুরমানিউজ এর পাঠককলামে প্রকাশিত সব লেখা পাঠক কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত। এই সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায় সুরমানিউজ বহন করবে না। সুরমানিউজ এর কোনো লেখা কেউ বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারবেন না।)