সিলেট ছাত্রলীগের ৫ অস্ত্রধারী কারাগারে, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মার্চ ২০১৭, ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে দা-রড উঁচিয়ে ছাত্রদলকে ধাওয়া করার ঘটনায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এক মাসের মাথায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মী। গতকাল রোববার সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে পাঁচজন হাজির হয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিন প্রার্থনা করেন। বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ছাত্রলীগ কর্মীদের জেলে পাঠানোর খবরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ গতকাল দুপুরে এমসি কলেজ ও সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে।
অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশের পরপরই পাঁচজনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এই পাঁচজন হলেন তারেক আহমদ (২৩), সালমান অপু ওরফে শামসুল ইসলাম (২৪), আলতাফুর রহমান ওরফে মুরাদ (২৩), রবিউল হাসান (২২) ও সৌরভ আচার্য (২৬)। পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচজনই এমসি কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী। এই পাঁচজনের সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আপন (২৩) নামের অন্য একজন পলাতক রয়েছেন। তিনিও এমসি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী।
এমসি কলেজ শাখার নতুন আহ্বায়ক কমিটি হওয়ায় গত ৩০ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করার প্রস্তুতি নেয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ সময় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ প্রকাশ্যে দা, হকিস্টিক, রডসহ দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রদলকে ধাওয়া করে ক্যাম্পাসছাড়া করে। পরদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো ফৌজদারি কার্যবিধির ক্ষমতাবলে এক আদেশে ধাওয়াকারীদের চিহ্নিত করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে মহানগর পুলিশকে নির্দেশ দেন। আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত ওই আদেশে ৩১ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘দা উঁচিয়ে ছাত্রদলকে ধাওয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, দুই দফা সময় নিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ‘দা উঁচিয়ে ধাওয়াকারী’ হিসেবে চিহ্নিত ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারার ক্ষমতাবলে প্রদত্ত আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনারের (সদর) দাখিল করা তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হলো। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩১ জানুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনে বর্ণিত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের শনাক্ত ও চিহ্নিত করা হয়েছে। সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী অস্ত্রধারী চিহ্নিত ব্যক্তিদের নাম ও ঠিকানা তদন্ত প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা গুরুতর আমলযোগ্য অপরাধ।
এ ঘটনায় ওই দিন দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা রেকর্ডভুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করে ছয়জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এক মাসের মাথায় গতকাল আদালতে পাঁচজন আত্মসমর্পণ করেন।
এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীদের জেলে পাঠানোর খবরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ গতকাল দুপুরে এমসি কলেজ ও সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। দুটি কলেজের সামনে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে সমাবেশ হয়।
এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা দেলোয়ার হুসেনের সভাপতিত্বে ও টিটু চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম কামরুল ইসলাম, সাবেক স্কুল ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হোসাইন আহমেদ, সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।