সুনামগঞ্জে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব, সেতুর কাজ বন্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২৫, ৫:১০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলাধীন মাহতাবপুর গ্রামের বাসিন্দাদের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের রেশ টানছে নির্মাণাধীন সেতু। গ্রামীণ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বহুদিন ধরে ওই দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব চলমান।
যদিও চলমান সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গে স্থানীয় পক্ষ দুটির দ্বন্দ্বের কোনো সম্পর্ক নেই, তবুও তাদের কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হচ্ছে। উভয় পক্ষের লোকজনের নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের চেষ্টায় থমকে আছে জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন লক্ষাধিক বাসিন্দা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাবলীলভাবে চলতে থাকা জনগুরুত্বপূর্ণ মাহতাবপুর সেতুর কাজ আকস্মিকভাবে থেমে যায়। এরপর পেরিয়ে গেছে তিন মাস। এখনও এর কাজ শুরু করা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের দিক থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা নেই। স্থানীয়দের দ্বন্দ্ব, বিরোধের জেরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮টি প্যাকেজে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মাহতাবপুর সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোনা মিয়া ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাহতাবপুর সেতুর নির্মাণকাজের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪ লাখ টাকা। ৮টি প্যাকেজে এই সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যায়ক্রমে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ৮টির মধ্যে ৭টি প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন করা হলেও শেষ প্যাকেজের নির্ধারিত কাজ করা যাচ্ছে না। মাহতাবপুর গ্রামের এ সেতুটির কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ওই গ্রামের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে। প্রকল্পের শেষ প্যাকেজ অনুযায়ী মাটির কাজ শুরু করার পরপরই গ্রামের একটি পক্ষের লোকজন বাধা দেন। এরপর থেকে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে জটিলতা শেষ করে দ্রুত সেতুটির কাজ সম্পন্ন করতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন একই গ্রামের বাসিন্দারা। বুধবার তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে মাহতাবপুর গ্রামের পক্ষ থেকে ফরিদ উদ্দিন, তৌফিক মিয়া, বোরহান উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, বাবুল মিয়াসহ ১২ গ্রামবাসীর স্বাক্ষরসংবলিত একটি লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, মাহতাবপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে মাহতাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত চলাচলের রাস্তার মধ্যবর্তী স্থানে চলছে মাহতাবপুর সেতুর নির্মাণকাজ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানায়, নদী ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন এবং স্থানীয় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। স্বার্থান্বেষী মহলের সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে প্রকল্পটির কাজ বন্ধ করে দেয়।
সেতুর কাজ থমকে থাকায় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন চাষিরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করা না হলে নদী ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে গ্রামবাসীর ভোগান্তি আরও বাড়বে।
স্থানীয়রা আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, প্রতি বছর বন্যার ধাক্কায় এখানকার বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। যদি বেড়িবাঁধ ভেঙে যায় এবং এর আগে যথাস্থানে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করা না হয় তবে স্থানীয়দের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোনা মিয়া ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী জুনায়েদ আহমদ বলেন, মার্চ মাসের শুরুতে তিনি সেতুটি নির্মাণকাজের মাটি কাজ শেষ করেছিলেন। নির্মাণকাজের দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে গেলে গ্রামের একটি পক্ষের বাধার কারণে কাজ থমকে যায়।
মাহতাবপুর গ্রামের ফরিদ উদ্দিন বলেন, গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এ রাস্তায় ওপর একটি সেতু নির্মাণ। সেতু নির্মাণকাজটি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করা হয় সেটিই তাদের লক্ষ্য।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলাম বলেন, মাহতাবপুর গ্রামের রাস্তার ওপর সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়েছে।
সেতুটি নির্মাণ হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ লোকজন সহজেই আসা-যাওয়া করতে পারত। এছাড়া বর্ষাকালে বৌলাই নদীর ও বৃষ্টির পানি সহজেই নিষ্কাশন হতো। মাহতাবপুর গ্রামে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সুত্র-সমকাল