১২ বছরেই আলিফের কাঁধে সংসারের ভার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২:৪৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
মাত্র ১২ বছর বয়সেই পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছেন আলিফ। যখন তার সমবয়সীরা বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যায়, খেলাধুলায় মেতে থাকে, ঠিক তখনই আলিফ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাথায় ঝুড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় পাপড় বিক্রির জন্য। এ যেন এক অসম বয়সে বড় হয়ে ওঠার গল্প। আলিফের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার আদু মাস্টার বাজার এলাকায়। তার বাবা মারা যান এক সড়ক দুর্ঘটনায়। বাবার অকালমৃত্যুর পর থেকেই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার মা ও তার কাঁধে। মা শ্রীপুরের মাওনা থেকে পাপড় সংগ্রহ করে এনে দেন, আর সেই পাপড় বিক্রি করে সংসারের খরচ চালায় আলিফ।
জানা যায়, প্রতিদিন সকালেই সে বেরিয়ে পড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। দোকান, বাজার, এমনকি গ্রামের পথঘাটেও তাকে দেখা যায়। দিনে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার পাপড় বিক্রি করে। তাতে লাভ থাকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এই সামান্য আয় দিয়েই চলছে মা ছোটবোন নিয়ে তিন সদস্যের ছোট্ট সংসার।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে উপজেলা সংলগ্ন এলাকায় পাপড় বিক্রি করতে দেখে কথা হলে সে জানায়, বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন মা আমাকে পাপড় বিক্রির ব্যবস্থা করে দেন। পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাইলে চোখে-মুখে একরাশ আফসোস নিয়ে বলে, ‘স্কুলে গেলে সংসার চালাবে কে! স্কুলে যাওয়ার সময় পাই না। যদি কখনো সময় পাই, স্কুলে যাবো।
তার কাছ থেকে পাপড় কেনা মাহফুজ রাজা জানান, আলিফের জীবনের গল্প শুধু তার একার নয়, সমাজের অনেক অবহেলিত শিশুরই গল্প এটি। শিশু শ্রমের বেড়াজালে আটকে থাকা, স্বপ্ন হারিয়ে ফেলা এমন সব শিশুদের পাশে দাঁড়ানো দরকার সমাজ ও রাষ্ট্রের। অবহেলিত এই প্রতিভাদের জন্য প্রয়োজন সহানুভূতি, প্রয়োজন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। হয়তো একটু সহায়তা পেলেই আলিফ আবারো হাতে নিতে পারবে স্কুলব্যাগ, ফিরে পেতে পারবে হারানো শৈশব।