বিমানে বৈষম্যের শিকার সিলেটের যাত্রীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের যাত্রীরা বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দিনে সিলেট থেকে যে কোন গন্তব্যের টিকেটের মূল্যের সাথে ঢাকার টিকেটের মূল্যের কোন পার্থক্য ছিল না। কিন্তু, এখন সিলেট ও ঢাকার টিকেটের মূল্যে অনেক পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে টিকেটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে টিকেটের মূল্য। উমরাহ’র ক্ষেত্রে দুটি ক্লাসের টিকেট ওপেন করায় সিলেটের যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। এজন্য বিমানের হেড অফিসের (বলাকা) ‘সিলেট বিদ্বেষী’ কিছু কর্মকর্তা দায়ী বলে অভিযোগ তাদের।
ট্রাভেলস ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সব এয়ারলাইন্সের উমরাহ ফেয়ার (ভাড়া) এক থাকলেও কেবল বাংলাদেশ বিমানই উমরাহর ক্ষেত্রে দুই ক্লাসের টিকেট ইস্যু করছে। সৌদি এয়ারলাইন্সসহ অন্যান্য বিদেশি এয়ারলাইন্স এবং বাংলাদেশি মালিকানাধীন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-জেদ্দা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ে অনেক কম মূল্যে টিকেট বিক্রি করছে বলে জানান তারা।
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব), সিলেট জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান খান রেজওয়ান জানান, সৌদি এয়ারলাইন্স, ইউ-এস বাংলাসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্সের টিকেটের মূল্য এক। তাদের ভাড়াও বিমানের চেয়ে তুলনামূলক কম। কিন্তু, জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান উমরাহ’র ক্ষেত্রে ইউ (উমরাহ) এবং এ (আলফা) ক্লাস টিকেট ইস্যু করে। টিকেটের ক্ষেত্রে উমরাহ ক্লাসের টিকেট ওপেন (খোলার) হবার পর কিছুদিনের মধ্যে ওই ক্লাস ক্লোজ করে দেয়া হয়। এই সুবাদে আলফা ক্লাসের টিকেটের মূল্য বেড়ে যায়। আবার ফ্লাইট চালুর একদিন আগে ইউ ক্লাস ওপেন করা হয়। ইউ ক্লাসের টিকেট না পেয়ে অনেক উমরাহ যাত্রীকে অতিরিক্ত মূল্যে আলফা ক্লাসের টিকেট কাটতে হচ্ছে। এ অবস্থায় উমরাহ যাত্রীদের পাশাপাশি ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।
বিমানের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে সপ্তাহে সিলেট-জেদ্দা রুটে দুটি এবং সিলেট-মদিনা রুটে একটি ফ্লাইট অপারেট হচ্ছে। সিলেটের প্রেক্ষাপটে এসব ফ্লাইট পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি আটাব-এর।
এ ব্যাপারে আটাব-এর সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান রুশো চৌধুরী জানান, সিলেট থেকে জেদ্দাগামী ফ্লাইট ঢাকা হযরত শাহজালাল (র.) বিমানবন্দর থেকে আসার কারণে সেখানকার অনেক যাত্রীকে এ তিনটি ফ্লাইটে পরিবহন করা হয়। এসব ফ্লাইটে ঢাকার শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ যাত্রী পরিবহন করায় সিলেটের ওমরাহ যাত্রীদের এসব ফ্লাইটে স্থান সংকুলান দেয়া সম্ভব হয় না। সিলেটের অনেক যাত্রীই সিট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন।
আটাব-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির জানান, সিলেটের ওমরাহ যাত্রীদের বৈষম্যের বিষয়টি দীর্ঘদিন বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
আটাব সূত্র মতে, গত বছর নভেম্বরে সিলেট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে বিমানের ফেয়ার কম ছিল। কিন্তু, এবার নভেম্বর থেকে বিমানের ফেয়ার বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য বিমানের হেড অফিসের কিছু কর্মকর্তার ‘সিলেট বিদ্বেষী’ মনোভাবকে তারা দায়ী করেন।
বিমানের জেলা ব্যবস্থাপকের কাছে আটাব-এর স্মারকলিপি
টিকেটের ক্ষেত্রে সিলেটের যাত্রীদের বৈষম্যের বিষয়ে আলোকপাত করে বিমান সিলেটের জেলা ব্যবস্থাপক (ডিএম) মো: শাহনেওয়াজ মজুমদারের কাছে সম্প্রতি স্মারকলিপি দিয়েছে আটাব। স্মারকলিপিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগ একটি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। বৃহত্তর সিলেটের প্রবাসীদের কাছে পছন্দের এয়ারলাইন্স হচ্ছে বিমান। শতকরা ৯০ ভাগ প্রবাসী বিমান ব্যবহার করতে চান। উচ্চ মূল্যের কারণে অনেকেই বিমান ছেড়ে অন্য অপারেটরের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এ অবস্থায় উমরাহ টিকেটসহ অন্যান্য রুটের টিকেটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসামঞ্জস্য দূর করতে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। স্মারকলিপি গ্রহণকালে আটাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে বিমানের জেলা ব্যবস্থাপক শাহনেওয়াজ মজুমদার জানান, তিনি স্মারকলিপির অনুলিপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবেন।