সিকৃবি’র প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের তালা, উত্তেজনা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ কারণে গতকাল ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে। বিষয়টি সমাধানের জন্য শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হলেও শিক্ষার্থীরা গতকাল বিকাল পর্যন্ত সাড়া দেয়নি। ঘটনার শুরু গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে। শুক্রবার ছিল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা। ছাত্রদলের নেতারা ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন রাতে ক্যাম্পাসের ফটকের কাছে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে একটি ব্যানার টানায়। পরবর্তীতে এই ব্যানার নিয়ে আপত্তি তোলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে যুক্ত হয় বহিরাগতরাও। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ ১০ জন আহত হন। পরের দিন শুক্রবার অবশ্য কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে থাকলেও ভর্তি পরীক্ষার কারণে রাতের সংঘর্ষের ঘটনার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
এদিকে- বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় শনিবার বিকালে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রেরণ করেন। বিবৃতিতে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার বিষয়টিকে রাষ্ট্রবিরোধী, ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড বলে উল্লেখ করেন। জানান- এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এমন বিবৃতি দেয়ায় ক্ষুব্ধ হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিবৃতি প্রকাশ হওয়ার পর শনিবার মধ্য রাতের দিকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। ভোর রাতের দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সকাল থেকে ফের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে আসতে পারেননি ভিসি সহ কর্মকর্তারা। একাডেমিক কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। দুপুরে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরেও একটি ছাত্র সংগঠনের ব্যানার ক্যাম্পাসে লাগানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার প্রেক্ষিতে ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়। ২৪শে অক্টোবর সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া প্রশাসন বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক ও রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যা অপমানজনক। প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার অবিলম্বে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা সব একাডেমি কার্যক্রম বর্জন করেছি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে সিনিয়র শিক্ষকদের পক্ষে দুপুরে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুলতান আহমেদ।
তিনি জানিয়েছেন- বিষয়টি নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। আমাদের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলকে ভাইস চ্যান্সেলরের সঙ্গে বসার পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টাও চলছে। আশা করি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে দেয়া বিবৃতি ভুল করে দেয়া হয়েছে এবং এ নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি। তার মতে; শিক্ষার্থীরা তো আমাদের সন্তান। তাদেরকে এভাবে আখ্যা দেয়া উচিত হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করায় বাইরে পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বলছে; বিষয়টি তারা নিজেরাই সমাধানের চেষ্টা করছেন। প্রয়োজন হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হবে। এদিকে- সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।