সুনামগঞ্জে তোলপাড় ‘জেলা আ.লীগ সেক্রেটারি ইমন বঙ্গবন্ধুর খুনি পাশার ভাগ্নে’!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০১৬, ৭:৩০ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন বঙ্গবন্ধুর খুনের ঘটনার চার্জশিটভুক্ত আসামি লে. কর্ণেল আজিজ পাশার ভাগ্নে উল্লেখ করে তাঁকে কীভাবে দলের এতবড় পদ দেওয়া হলো, এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুট।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের বংশধরেরা পরিচয় গোপন করে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে
সোমবার সুনামগঞ্জে জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তৃতায় ইমন সম্পর্কে মুকুটের এমন চাঞ্চল্যকর বক্তব্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে তোড়পাড় শুরু হয়।
নুরুল হুদা মুকুট ও ব্যারিস্টার ইমনের নেতৃত্বাধীন জেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি পক্ষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে সুনামগঞ্জে শোক দিবস পালন করে। তবে জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে মুকুট সমর্থকদের বিপুল উপস্থিতির কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েন ইমন সমর্থকরা।
শহরের হোসেন বখত চত্বরে ইমনের নেতৃত্বে জেলা আ.লীগের পক্ষ থেকে যে আলোচনা সভার আয়োজন তাতে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। একই সময় ঠিক তার পাশে আবুল হোসেন মিলনায়নে যুবলীগের ব্যানারে মুকুট সমর্থকদের আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভা ও র্যালিতে কয়েকগুণ বেশি নেতা-কর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ ১৭ বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আলহাজ মতিউর রহমানকে সভাপতি ও ব্যারিস্টার ইমনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এই ঘোষণায় দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা নূরুল হুদা মুকুট ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ইমনের মধ্যে কোন্দলের ছাইচাপা আগুন জ্বলতে শুরু করে। এর কিছু দিনের মাথায় জেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পান মুকুটের ছোটভাই চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খায়রুল হুদা চপল। আওয়ামী লীগের পদ হারানোয় কিছুটা হতাশ মুকুট সমর্থকরা ঘুরে এতে করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পান। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন ইমন।
যুবলীগকে ঘিরে পূর্বের শক্তি-সামর্থ নিয়ে রাজনীতের মাঠে নতুন উদ্যম নিয়ে নিজেদের জানান দেন মুকট সমর্থকরা। এছাড়া মুকুটের এক তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আয়ুব বখত জগলুল ইমনের নানা আচরণে নাখোশ থাকায় শত্রুতা ভুলে হাত মেলান মুকুটের সঙ্গে। সুনামগঞ্জ শহরের স্থানীয় দুই প্রভাবশালী এলাকার শত্রুভাবাপন্ন এই দুই নেতার ঘনিষ্টতায় গ্রুপিং রাজনীতির শক্তির ভারসাম্য একমুখী হয়ে পড়ে। এছাড়া অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীরসহ জেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাও রয়েছেন মুকুটের সঙ্গে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুটের অভিযোগ প্রসঙ্গে বর্তমান কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, মুকুট হঠাৎ করে কেন এমন মন্তব্য করলেন তা আমি জানি না। বক্তব্যের সমর্থনের তিনি একটি কাগজ দেখিয়েছেন, সেটা দেখেছি। তবে তাকে কী লেখা আছে দেখিনি।
তিনি বলেন, আজিজ পাশা নামে ইমনের এক মামাকে আমি চিনি। তবে তিনি যে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্ণেল আজিজ পাশা সেই সম্পর্কে আমার জানা নাই।
এ প্রসঙ্গে নূরুল হুদা মুকুট বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি লে. কর্ণেল আজিজপাশার বাড়ি জগন্নাপুর উপজেলার কুবাদপুর গ্রামে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যরিস্টার ইমনের মায়ের আপন চাচতো ভাই।
তিনি বলেন, পালিয়ে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর এই খুনি জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
এ ব্যাপারে মতামত জানতে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনের মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।